আমাজন ও তার অধিবাসীদের পাশে কেরালার ব্যক্তি, ৩০ বছর ধরে জারি লড়াই

ব্রাজিল এবং কলোম্বিয়াকে ঘিরে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, নতুন করে নাম বলার প্রয়োজন পড়ে না। পৃথিবীর ফুসফুস আমাজন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে এই অরণ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাজনের আয়ু আর বেশিদিন নেই। তবুও তাকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। তেমনই একজন, শাজি থমাস। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আমাজন রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ব্রাজিলের এই আইনজীবী। তবে শাজি কিন্তু ব্রাজিলিয়ান নন। তাঁর জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, সবই ভারতের মাটিতে।

সময়টা ১৯৮৯ সাল। সেই প্রথম ব্রাজিলের মাটিতে পা রাখেন কেরালার যুবক শাজি। সেদিন যেন নিজেও আন্দাজ করতে পারেননি, এখানেই বাঁধা পড়ে যাবেন সারা জীবনের জন্য। তবে ভালোবাসার অমোঘ শক্তিই যে তেমন। এই ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল ভারতে থাকতেই। শাজির জন্ম কেরালার প্রত্যন্ত গ্রামে এক কৃষক পরিবারে। ছোটো থেকেই প্রকৃতির নিবিড় সংস্পর্শে বড়ো হয়েছেন। বাবার কাছ থেকে শিখেছেন, প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে মানুষও বাঁচবে না। এরপর স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করতে আসেন হায়াদ্রাবাদে। আমাজনের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয় তখনই। আর সেই থেকেই ভাবতেন, জীবনে একবার সেখানে যেতে হবে। কথা বলতে হবে সেখানকার মানুষের সঙ্গে।

সুযোগ এসে গেল ১৯৮৯ সালে। একটি স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে ব্রাজিল যাওয়ার সুযোগ পেলেন। অবশ্য সেই প্রোগ্রাম ছিল অল্প সময়ের জন্য। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকেই আমাজনের জঙ্গলে আনাগোনা শুরু হল। শাজি অবশ্য তখন পর্তুগিজ ভাষা জানেন না। ব্রাজিলের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে তাই অসুবিধাই হত। তাই খুব তাড়াতাড়ি শিখে নিলেন পর্তুগিজ। নির্ধারিত কোর্স শেষ হল, কিন্তু দেশে ফেরা হল না শাজির। তখনও ব্রাজিলে মিল্যাটারি শাসনে আদিবাসীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। তাঁদের পক্ষ নিয়ে লড়াইয়ের জন্য আইন পড়তে শুরু করলেন শাজি। ভর্তি হলেন শাও-পাওলো ইউনিভার্সিটিতে।

মাঝখানে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আবারও সঙ্কট ঘনিয়ে এসেছে আমাজনের ভাগ্যে। অরণ্যকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকা ৩০০টি উপজাতিও জানেন না, এর শেষ কোথায়। তাঁদের প্রত্যেকের কথা সভ্য সমাজের সামনে তুলে ধরাই শাজির লড়াই। শুধু প্রকৃতিকে বাঁচাতে নয়, এই লড়াই মানুষের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে। শাজি এখনও আশা রাখেন, অতি দক্ষিণপন্থী বলসনারো সরকারও আমাজনের জঙ্গলকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে পারবে না। বেসরকারি সংস্থার হাতে সমস্তটা বিক্রি হয়ে যাওয়ার আগে সেখানকার মানুষই প্রতিবাদ করতে শিখবেন। তৈরি করবেন নতুন ইতিহাস।

Powered by Froala Editor