দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে, একাই পাহাড় কেটে ৫০০০ কুয়ো তৈরি করলেন যিনি

দশরথ মাঝিকে মনে আছে? সেই যে ২২ বছর ধরে একার হাতে আস্ত পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়েছিলেন? ৬৭ বছরের কুঞ্জাম্বু এই ঘটনাটি জানেন কিনা জানা নেই। কিন্তু কেরালার বিভিন্ন জায়গায় গত ৫০ বছর ধরে যে কাজটি তিনি করে চলেছেন, তাকে কোনো অংশে কম বলা যাবে না। দশরথ মাঝির মতো পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করেননি। বরং একার হাতে পাহাড়ের ভেতর তৈরি করেছেন এক হাজারেরও বেশি ‘কেভ ওয়েল’ বা পাহাড়-কুয়ো। যাতে আশেপাশের গ্রামবাসীদের জলের সমস্যা না হয়।

এই কেভ ওয়েল বস্তুটি কী? এক কথায় বলতে গেলে, পৃথিবীর প্রাচীন একটি জল সংরক্ষণ পদ্ধতি। মূলত ইরানের পাহাড়ি অঞ্চলে এর শুরু হয়েছিল। পরে ভারতেও প্রবেশ করে। পাহাড়ের গায়ে আড়াই ফুট চওড়া একটা গর্ত খুঁড়ে আরও গভীরে যাওয়া হয়। ততক্ষণ যাওয়া হয়, যতক্ষণ জল না মেলে। এবার ওই এলাকার বাইরে একটি বড়ো জায়গা তৈরি করা হয়। পাহাড়ের যে যে জায়গায় গভীর পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছে, সব কটার সঙ্গে ওই বড়ো জায়গাটির যোগ থাকবে। একরকম চৌবাচ্চা বলা যেতে পারে। পাহাড়ের নিচে ওই জল একবার বেগ পেলেই ওই জায়গাটিতে এসে জমা হবে। ভাবুন, কোনো পাম্পিং সিস্টেম নয়। প্রাকৃতিক ভাবেই জলকে মাটির নিচ থেকে এনে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। 

এই পাহাড় কাটার কাজটিই একার হাতে করছিলেন কুঞ্জাবু। ওটাই সবথেকে কঠিন কাজ। প্রথমত কোনো আধুনিক যন্ত্র না নিয়ে পাহাড় কাটা; তারপর মাটির তলা পর্যন্ত যতক্ষণ না জল আসে ততক্ষণ খুঁড়ে যাওয়া। শরীরের কষ্টও হয়, সেইসঙ্গে আরও একটা ব্যাপার ঘটে। যত নিচে নামা যায়, তত কমতে থাকে অক্সিজেন। একসময় শ্বাসের সমস্যাও শুরু হয়। সেইসব কিছুকে সামলে তারপর কাজ করে যাচ্ছিলেন কুঞ্জাবু। 

আজ কেরালার কাসারগড গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজারের মতো কেভ ওয়েল বা ‘সুড়ঙ্গ’ আছে। এই সবগুলোই একা তৈরি করেছেন কুঞ্জাবু। সেই ১৪ বছর বয়স থেকে করে আসছেন এই কাজ। আজ ৬৭ বছরে পড়েছেন তিনি। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই কাজ করে আসছেন। যাতে গ্রামবাসীদের জলকষ্টে ভুগতে না হয়। বিশেষ করে কৃষকরা যাতে জল পান। তাদের কারোর যেন অসুবিধাটুকু না হয়। এইভাবেই একসঙ্গে বেড়ে উঠছেন তাঁরা। দশরথ মাঝির পাশে কুঞ্জাবু’কেও রাখতে পারি না আমরা? 

Powered by Froala Editor