স্কুলছুট তরুণের উদ্যোগেই 'প্রাণে' বাঁচছে ঐতিহ্যবাহী সেতু!

বছর খানেক আগের কথা। সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে এসেছিল মেঘালয় (Meghalaya)। লিভিং-রুট ব্রিজের (Living Root Bridge) কারণে ইউনেস্কোর ঐতিহ্যবাহী স্থানের অস্থায়ী তালিকায় জায়গা পেয়েছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যটি। হ্যাঁ, জীবন্ত গাছের শিকড় দিয়েই তৈরি হয় এই সেতু। কাঠ ও কংক্রিটের ব্রিজ তৈরি হওয়ায় অবলুপ্ত হতে বসেছিল শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই সেতুগুলি। তবে বিগত ৮ বছরে বদলেছে পরিস্থিতি। ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পেয়েছে মেঘালয়ের বহু লিভিং-রুট ব্রিজ। আর এই বৃহত্তর সংরক্ষণ প্রকল্পের পিছনে রয়েছেন মেঘালয়েরই স্কুলছুট এক তরুণ। 

মর্নিংস্টার খোংথও (Morningstar Khongthaw)। হ্যাঁ, মেঘালয়ের লিভিং-রুট ব্রিজগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার নেপথ্যে রয়েছেন তিনিই। ২০১৪ সালের কথা। তখন ১৮ বছর বয়সি মর্নিংস্টার পড়াশোনা করছেন শিলং-এর একটি সরকারি স্কুলে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণেই আর স্কুলের গণ্ডি পার করা হয়ে ওঠেনি তাঁর। গ্রামের বাড়িতে ফিরে হাল ধরতে হয় সংসারের। সামান্য টুরিস্ট গাইডের চাকরি। তবে রোজ পর্যটক পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কাজ না থাকলে পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতেন মর্নিংস্টার। বিশেষ করে তাঁকে আকর্ষণ করত তাঁর গ্রাম রাংথাইলিয়াং-এর লিভিং-রুট ব্রিজগুলি। এভাবে ঘুরতে ঘুরতেই তাঁর পরিচয় হয় একটি অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গেই প্রাথমিকভাবে লিভিং-রুট ব্রিজ সংরক্ষণের কাজে নামেন মর্নিংস্টার। 

সেই কাজও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কিছুদিনের মধ্যেই। তবে হাল ছাড়েননি অষ্টাদশী যুবক। নিজের সাধ্যমতো এই ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি। সে-সময় তাঁকে বাড়তি উদ্যম জুগিয়েছিল এক বিদেশি পর্যটকের লেখা বই-ও। মেঘালয়ে ঘুরতে এসে তিনি গাইড হিসাবে পেয়েছিলেন মর্নিংস্টারকে। জেনেছিলেন ঐতিহ্যবাহী এই সেতুগুলির ইতিহাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে নিজের বইতে মর্নিংস্টারের এই গল্প লিপিবদ্ধ করেন তিনি। 

এই ঘটনাই যেন বাড়তি দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছিল মর্নিংস্টারের কাঁধে। ২০১৭ সালে লিভিং-রুট ব্রিজ সংরক্ষণের জন্য আস্ত একটি সংস্থা তৈরি করে ফেলেন মর্নিংস্টার। ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে শুরু হয় সচেতনতা প্রচার। আগ্রহী বহু তরুণের সমর্থন পান তিনি। তবে মূল চ্যালেঞ্জ ছিল, দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত ও ক্ষয়প্রাপ্ত সেতুগুলিকে পুনর্গঠন করা। সাধারণত গারো এবং খাসি সম্প্রদায়ের মানুষরাই একসময় তৈরি করেছিলেন এই ব্রিজগুলি। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বেও ছিলেন তাঁরা। প্রবীণ সেইসব শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই ব্রিজ সংরক্ষণের আদর্শ পদ্ধতি খুঁজে বার করেন মর্নিংস্টার। তারপর শুরু হয় অভিযান। 

এখনও পর্যন্ত নিজের গ্রামের প্রায় ২৫টি এহেন সেতুকে পুনরুদ্ধার করেছেন মর্নিংস্টার। সেইসঙ্গে গারো, খাসি ও জয়ন্তী মিলিয়ে তাঁর মোট সংরক্ষণ প্রকল্পের সংখ্যা ছাড়িয়েছে চল্লিশেরও বেশি। তবে এখানেই থেমে নেই তিনি। ২০২১ সালে তিনি শুরু করেন তাঁর নবতম প্রকল্প ‘হ্যান্ডস অফ দ্য রুটস ইনিসিয়েটিভ’। মেঘালয়ের সত্তরটিরও বেশি লিভিং-রুট ব্রিজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই প্রকল্পে। পাশাপাশি মিলেছে ৩.৮ লক্ষ টাকার সরকারি সাহায্যও। তবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতিটাই সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি মর্নিংস্টারের কাছে…

Powered by Froala Editor

Latest News See More