আয়না ও সূর্যের আলো দিয়ে শত্রুনাশ, বিশ্বযুদ্ধে এমনই পরিকল্পনা ছিল নাৎসিদের

মহাকাশে বসানো আছে বিশাল একটি আয়না। পৃথিবীর দিকে মুখ করে রাখা। সূর্যের আলোকে এক জায়গায় করে রাখবে সে। তারপর সেই শক্তি ছুটে যাবে পৃথিবীর নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলের দিকে। জ্বালিয়ে দেবে সমস্তটা। যাকে বলে মধুর প্রতিশোধ। সায়েন্স ফিকশনের রোমাঞ্চকর গল্পের মতো শোনাচ্ছে না? ঠিক এমনই জিনিসের ভাবনা শুনিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সৌজন্যে, হিটলারের ‘বিখ্যাত’ নাৎসি বাহিনী।

আরও পড়ুন
নাৎসি আগ্রাসন থেকে ইহুদিদের বাঁচিয়েছিলেন ‘এককালের শত্রু’ মুসলিমরাও

১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে এক মার্কিন সেনা চমকপ্রদ কিছু তথ্য প্রকাশ করে। তার আগে বিশ্বযুদ্ধের করাল রূপ দেখেছে গোটা বিশ্ব। দেখেছে একের পর এক মৃত্যু, ধ্বংসলীলার। হিটলারের পৃথিবী দখলের স্বপ্ন তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। তাঁর নির্দেশে জায়গায় জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছে নাৎসি বাহিনী। সঙ্গে রয়েছে তাঁদের বিজ্ঞানীরাও। সেই মার্কিন সেনার বক্তব্য অনুযায়ী, জার্মান নাৎজিরা নাকি একটা বিশাল ‘স্পেস মিরর’ তৈরি করতে চলেছে। আর সেটাকেই কাজে লাগাতে চলেছে যুদ্ধে।

আরও পড়ুন
একই অরণ্যে যুদ্ধবিরতি; প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গ্লানি যেভাবে মুছেছিলেন হিটলার

এই স্পেস মিরর কনসেপ্টটি যদিও বিশ্বযুদ্ধের বেশ কিছু আগেই তৈরি হয়েছিল। জার্মান রকেট সায়েন্টিস্ট হারমান ওবার্থ প্রথম এই ধারণাটা সামনে নিয়ে আসেন। আমরা সাধারণ আতস কাচ নিয়ে একটা খেলা প্রায়শই করি। কাগজের ওপর সূর্যের আলোকে আতস কাচের সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করা হয়। যার ফলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আগুন ধরে যায় সেখানে। ঠিক এই ধারণাটাই বড়ো ক্যানভাসে ধরতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানী ওবার্থ। মহাকাশে বড়ো একটি আয়না লাগিয়ে সূর্যের আলো ও শক্তিকে এক জায়গায় করে সেটাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তবে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মানবকল্যাণের। সূর্যের বিপুল শক্তিকে ব্যবহার করতে পারলে আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই লাভ, সেটা বুঝতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু এই তত্ত্বটিকেই নিজেদের যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করল নাৎসিরা।

আরও পড়ুন
প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার মহাকাশ-গবেষণায়, দূষণ কমাতে বেনজির উদ্যোগ নাসার

তাঁদের হিসেব অনুযায়ী, এই বিপুল সূর্যের শক্তিকে মহাকাশের আয়নার সাহায্যে শত্রুর নির্দিষ্ট ডেরায় ফেলা হবে। তাতে মুহূর্তে পুরো ধ্বংস হয়ে যাবে পুরো জায়গাটা। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছিল, আমেরিকার ওপরেই ফেলা হবে এটি। পরে অন্যত্রও এই কাজ করা হবে। ভাবুন, মানুষভেদে একই জিনিসের উদ্দেশ্য কীভাবে বদলে যায়! অবশ্য এই কাজটি করা সম্ভব হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। যদি হত, তাহলে ইতিহাসের বাঁক কতটা বদলে যেত, সেটা ভাবতেই শিহরন খেলে যায়।

Powered by Froala Editor