বুকের কাছে ‘বঙ্গবন্ধুর জন্য একদিন’, পোস্টার হাতে ১০০ কিলোমিটার হাঁটছেন যুবক

“কোনো জেল জুলুমই কোনোদিন আমাকে টলাতে পারেনি, কিন্তু মানুষের ভালোবাসা আমাকে বিব্রত করে তুলেছে।” বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর সেজন্যই বোধহয় বাংলাদেশের মানুষ ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলেছিলেন তাঁকে। এমনকি তাঁর মৃত্যুর ৪৫ বছর পর, আজও সেই ভালোবাসায় চিড় ধরেনি কোথাও। মুজিব যে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের নাম। তাই ১৭ মার্চ, তাঁর জন্মদিনের তারিখটা ভোলেন না কেউই। কারো চোখে শ্রদ্ধা, কারোর স্বজন-হারানোর বেদনা; আজকের দিনটাকে ঘিরে প্রতিবছরের মতো এবারও স্মৃতির তর্পণ করছে বাংলাদেশ। আর এসবের মধ্যেই হেঁটে চলেছেন এক নিঃসঙ্গ যুবক। বুকের কাছে দুহাতে ধরা পোস্টার। তাতে লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর জন্য একদিন’। আর এই একদিনে তিনি হাঁটবেন বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল থেকে তাঁর বাসগৃহ পর্যন্ত।

আরও পড়ুন
সংগ্রামের ডাক দিলেন বঙ্গবন্ধু, স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন নিয়ে গর্জে উঠল ঢাকার ময়দান

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার ধানমন্ডি, দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। এতটা পথ একা একা হাঁটা সহজ নয়। কিন্তু ভালোবাসার গভীর টানে রাস্তায় নেমেছেন কাজি সাহি। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই শুরু করেছেন পথচলা। টানা ন-ঘণ্টা হেঁটে অতিক্রম করেছেন ৫০ কিলোমিটার। তারপর রাস্তার ধারে একটু জিরিয়ে নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করেছেন। তবে সাহির মতে, এর থেকে অনেক কঠিন কাজ করে গিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর প্রাণান্তকর পরিশ্রমেই স্বাধীনতা পেয়েছে বাংলাদেশ। তাই তাঁর জন্মদিনে এই উদ্যোগকে তিনি অতি সামান্যই মনে করছেন।

আরও পড়ুন
কলেজজীবন কেটেছে এ-শহরেই, থাকতেন মেসে; বঙ্গবন্ধুর বহু স্মৃতির সাক্ষী কলকাতা

সদ্য পড়াশুনো শেষ করে এখন একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন কাজি সাহি। তবে তিনি নিজে বলেন, তিনি একজন সাইক্লিস্ট। দীর্ঘদিন ধরে সিলেট সাইকেল কমিউনিটির সদস্য। আর সময় পেলেই দেশ ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। নিজেকে ব্যস্ত রাখেন নানান সামাজিক কাজে। ‘পদব্রজযাত্রা’ নামের একটি উদ্যোগ তিনি নিয়েছিলেন দুই বছর আগে। সেটা ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর। সেটা ছিল সিলেটের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি নিয়ে। গতবছরও একই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রথমবার হেঁটেছিলেন ৪৮ কিলোমিটার, পরেরবার ৪৯ কিলোমিটার। কিন্তু এবারের ১০০ কিলোমিটারের রাস্তা হেঁটে চলেছেন সম্পূর্ণ একা।

আরও পড়ুন
হাতে বঙ্গবন্ধুর চিঠি, তবু মেলেনি সরকারি স্বীকৃতি, অপেক্ষায় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী

বঙ্গবন্ধুর এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি উদ্বেল করে বাংলাদেশের মানুষকে। সেই স্মৃতিতে জং ধরেনি আজও। এমন কত উদ্যোগের সাক্ষী থাকে বাংলাদেশ। আর সেইসবের আঁচ এসে লাগে কাঁটাতারের এপারেও। আর কাজি সাহির এই নিঃসঙ্গ যাত্রা তো রীতিমতো রূপকথার গল্প। এভাবেই প্রতিটা মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকুন বঙ্গবন্ধু। জানি না, এইসব ভালোবাসার গল্প তাঁকে আর বিব্রত করে কিনা…