আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ সূত্রের আগেই চতুর্থ মাত্রার হদিশ পেয়েছিলেন টেসলা!

বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দিয়েই কীভাবে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এবং বৈদ্যুতিক শক্তিকে স্থানান্তরিত করা যায় একস্থান থেকে অন্যস্থানে— তা নিয়ে গবেষণায় মগ্ন এক পদার্থবিদ। আর এই কাজ করতে গিয়েই আকস্মিকভাবে আশ্চর্য এক জিনিস প্রত্যক্ষ করেন তিনি। উচ্চ আধানযুক্ত ঘূর্ণায়মান চৌম্বকক্ষেত্র সময় এবং স্থানের বিচ্যুতি বা পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। 

স্পেস-টাইম কার্ভেচার (Space-Time Curvature) বা স্থানকাল বক্র। আজ সকলেই কমবেশি এই বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত। তবে এটা যে-সময়ের কথা হচ্ছে সেটা উনিশ শতকের শেষ দিক। আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে ১৮৯৫ সাল। তখনও পর্যন্ত আইনস্টাইনের ইউনিফায়েড ফিল্ড থিওরির সঙ্গে পরিচিত হয়নি গোটা বিশ্ব। এমনকি পদার্থবিদ্যার জগতে তখনও অবধি দাগ কাটতে পারেননি তিনি। সে-যুগে দাঁড়িয়েই আশ্চর্য এক ঘটনার মাধ্যমেই স্থান-কাল বক্র অর্থাৎ, চতুর্থ মাত্রার হদিশ পেয়েছিলেন এক গবেষক!

নিকোলা টেসলা (Nikola Tesla)। বিশ্বের কিংবদন্তি পদার্থবিদ ও উদ্ভাবকদের তালিকায় প্রথম সারিতেই রয়েছে তাঁর নাম। বলতে গেলে তাঁর তৈরি একাধিক প্রযুক্তির ওপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে আজকের মানব সভ্যতা। সেই টেসলাই হদিশ পেয়েছিলেন চতুর্থ মাত্রার! অথচ, উপযুক্ত তত্ত্ব কিংবা যন্ত্রাংশের অভাবেই চতুর্থ মাত্রার উপস্থিতি প্রমাণ করে দেখানো সম্ভব হয়নি তাঁর। অবশ্য তাঁর এই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে আরও এক রহস্যময় ঘটনা ঘটে গিয়েছিল এই পৃথিবীর বুকেই। কুখ্যাত ঘটনাটি আমদের কাছে আজ পরিচিত ‘ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট’ নামে। এই পরীক্ষা আদৌ হয়েছিল নাকি তা পুরোটাই মিথ— তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বিস্তর। অবশ্য এই ঘটনার থেকে টেসলার চতুর্থ মাত্রার হদিশ পাওয়ার গল্পও কম রহস্যময় নয়। 

শুরু থেকেই বলা যাক সেই কাহিনি। ১৮৯৫ সালের মার্চ মাস সেটা। নিউইয়র্কের সিটির এক ছোট্টো বিস্ট্রোয় আকস্মিকভাবেই টেসলার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় নিউইয়র্ক হেরল্ড পত্রিকার এক প্রতিবেদকের। সে-সময় অস্ট্রিয়ান গবেষক রীতিমতো পরিচিত মুখ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ততদিনে তিনি একাধিক কাজ করে ফেলেছেন আলভা এডিসনের সঙ্গে। এমনকি হাই-ভোল্টেজ বা উচ্চ-বিভব ও বৈদ্যুতিক শক্তি নিয়ে তাঁর গবেষণার কথা নিত্যদিনই প্রকাশিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো-না-কোনো সংবাদপত্রে। স্বাভাবিকভাবেই টেসলাকে দেখে ছুটে যান নিউইয়র্ক হেরল্ডের সেই সাংবাদিক। 

অবশ্য খানিকটা নিরাশই হতে হয়েছিল তাঁকে। কারণ, সেদিন তাঁর কোনো প্রশ্নের উত্তরই নির্দিষ্টভাবে দিতে পারেননি টেসলা। বরং, টেসলার কথা শুনে খানিক ভ্রূ কুঞ্চিত হয়েছিল তাঁর। টেসলা জানান, তার আগের দিন রাতেই তিনি নাকি ঝটকা খেয়েছেন ৩৫ লক্ষ ভোল্ট বিভবপ্রভেদের! এও আবার হতে পারে নাকি? প্রথমত ৪০০-৬০০ ভোল্টের বিদ্যুৎই রীতিমতো প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে মানুষের কাছে। সেখানে ৩৫ লক্ষ ভোল্ট তো বহুদূরের কথা। পাশাপাশি এত বেশি শক্তির বিদ্যুৎ যে উৎপন্ন করা সম্ভব, সে-যুগে বিশ্বাসযোগ্য ছিল না মোটেই। তবে গল্পের গন্ধেই কথোপকথন চালিয়ে যান নিউইয়র্ক হেরল্ডের সেই প্রতিবেদক।

কথায় কথায় টেসলা জানান, ভাগ্যবশতই বেঁচে গিয়েছেন তিনি। এমনকি তাঁর সহকর্মী দ্রুত বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ না করলে হয়তো সেদিন মারাই যেতেন। কিন্তু কেমন ছিল এই অনুভূতি? প্রশ্ন করে বসেন প্রতিবেদক। আবারও এক বিচিত্র উত্তর পান তিনি। বিদ্যুতের শিখা নাকি মাটি থেকে তাঁকে ৩ ফুট উচ্চতায় তুলে ফেলেছিল অনায়াসেই। তবে তড়িৎ ও চুম্বক ক্ষেত্রের যৌথ প্রতিক্রিয়ায় তিনি গতিশক্তি হারালেও, জ্ঞান ছিল তাঁর। আর তাতেই তিনি নাকি দর্শন পেয়েছেন বর্তমান, অতীত এবং ভবিষ্যতের। একই জায়গায় স্থির থেকেই বদলে যেতে দেখেছেন তাঁর চারপাশ। 

১৩ মার্চ, ১৮৯৫ সাল। নিউইয়র্ক হেরল্ডে বেশ ঘটা করেই বেরিয়েছিল নিকোলা টেসলার এই কাহিনি। লেখা হয়েছিল ভবিষ্যৎ-অতীতে পৌঁছে যাওয়ার এক ‘দরজা’-র হদিশ পেয়েছেন তিনি। ব্যাপারটা নিয়ে সে-সময় হাসাহাসি হয়েছিল বিস্তর। কেউ কেউ দাবি করেছিলেন এই প্রতিবেদন সবটাই কাল্পনিক। কল্পবিজ্ঞানের গল্পের মতোই। কেউ আবার বলেছিলেন, এই সবটাই খোদ টেসলার ভাঁওতা বা বিদ্যুতের ঝটকা খেয়ে মস্তিষ্কে বিকৃতি হয়েছে তাঁর। 

টেসলা সত্যিই এত বেশি বিদ্যুৎশক্তির ঝটকা খেয়েছিলেন কিনা— তা নিয়ে সঠিকভাবে প্রমাণ নেই কোনো। তবে টেসলা একাধিক নথিতে উল্লেখ করেছিলেন, তড়িৎ-চুম্বকীয় শক্তির মাধ্যমে সময়কে পরিবর্তন করা সম্ভব। এমনকি একইস্থানে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎকে উপরিপাতিত করা যায় ঘূর্ণায়মান চুম্বকীয় ক্ষেত্র এবং প্রবাহী তড়িতের মাধ্যমে।

এর প্রায় বহু বছর পর জন্ম নেয় আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ। তারও পরে ইউনিফায়েড ফিল্ড থিওরির সঙ্গে পরিচিত হয় পদার্থবিদ্যার জগৎ। দুনিয়া কাঁপায় টেলিপোর্টেশনের তত্ত্ব। ১৯৪৩ সালে কুখ্যাত ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্টের কথা নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। টেসলা কয়েলের ব্যবহারেই একটা আস্ত যুদ্ধজাহাজ নাকি কিছুক্ষণের জন্য উধাও করে দিয়েছিলেন গবেষকরা। সেই পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত ছিলেন খোদ আইনস্টাইনও। জাহাজটি স্বস্থানে ফিরে এলেও, সেবার ফেরেননি বহু সৈনিক। স্রেফ উধাও হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। কেউ আবার পাগল হয়ে গিয়েছিলেন ফিরে আসার পর। সে-গল্প না হয় বলা যাবে আরেকদিন।

এই পরীক্ষা যখন হয়েছে, ততদিনে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার পথিকৃৎ নিকোলা টেসলা। কে-ই বা বলতে পারে, আইনস্টাইনের তত্ত্ব হাতে পেলে কিংবা আরেক শ্রেষ্ঠ পদার্থবিদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে হয়তো পদার্থবিদ্যার এই জটিল ধাঁধাঁর সমাধান খুঁজে দিতে পারতেন তিনি! তৈরি করে দিতে পারতেন এমন এক যন্ত্র যা দিয়ে ভূত-ভবিষ্যতে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারে মানুষ…

Powered by Froala Editor