কিক বক্সিং-এ বিশ্বজয়ী, জীবনের দৌড়েও অনুপ্রেরণার পাঠ দিচ্ছেন এই বাঙালিনী

যদিও জন্ম এবং বেড়ে ওঠা লন্ডনেই, তবু যেন আর পাঁচটা বাঙালির মতোই তাঁর গল্প। এদেশের সমস্ত মেয়েকে জীবনে যে যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয়, ঠিক তেমনই লড়াই লড়তে হয়েছে রুখসানা বেগমকেও। কিন্তু সেই সমস্ত যুদ্ধ শেষে জয় তো অপেক্ষা করে থাকেই। ব্রিটেনের পাশাপাশি বাংলাদেশেরও নাগরিক রুখসানা বেগম আজ নিজের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। চার বছর আগে জিতেছেন বিশ্ব কিক বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ। আর সম্প্রতি তাঁর জীবনের কাহিনি নিয়ে প্রকাশিত হতে চলেছে জীবনী ‘বর্ন ফাইটার’।

এই সময় এসে দাঁড়িয়ে পুরনো কথাগুলো মনে করতে আবারও সেই কষ্ট এসে গ্রাস করে রুখসনা বেগমকে। মাত্র ২৩ বছর বয়সে এক আইনজীবীর সঙ্গে বিবাহ হয় তাঁর। কিন্তু তিনি পড়াশোনা করতেই চেয়েছিলেন। অথচ পরিবারের চাপে বিবাহ মেনে নিতে হয়। আর তার পর থেকেই শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই। বিবাহিত জীবন একেবারেই সুখের ছিল না। ক্রমাগত নির্যাতন সহ্য করতে করতে কোনোরকমে বেঁচে ছিলেন তিনি। কিন্তু ততদিনে গ্রাস করেছে চরম অবসাদ।

অবশ্য এর কিছুদিনের মধ্যেই বাড়িতে চলে আসতে বাধ্য হন রুখসানা। বাবা-মা প্রথমে মেনে নিতে না চাইলেও কিছুদিনের মধ্যেই সেই আইনজীবীর কাছ থেকে এল বিবাহ-বিচ্ছেদের নোটিশ। আর এটাই যেন ছিল তাঁর মুক্তির ছাড়পত্র। ডাক্তারের সহযোগিতায় কোনোরকমে অবসাদ কাটিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর তারপর নিজের পছন্দ মতো ঠিক করলেন বক্সিং নিয়েই কাটিয়ে দেবেন বাকি জীবন। তবে সেই জীবনও খুব সুখের ছিল না। ক্লাবে অন্য অনেক সহকর্মীর অবজ্ঞা আর নিন্দা সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। তাঁরা যে সেই ছোট থেকেই রিং-এ দাঁড়াতে অভ্যস্ত। সেখানে একজন নবাগতা এসে সবাইকে টেক্কা দেবেন, এমনটা কি মেনে নেওয়া যায়?

এর মধ্যেই একদিন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য রিং-এ নামেন রুখসানা। পাশে পাননি কাউকেই। কিন্তু কয়েক রাউন্ড খেলা চলতেই এক ডেনিস কোচের নজরে আসেন তিনি। আর সেই কোচ বুঝতে পারেন, আরও বড়ো লড়াইয়ের জন্য জন্মেছে এই মেয়ে। তারপর থেকে পুরোটাই সাফল্যের সিঁড়ি। ২০১১ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। পরের বছর আবার। আর মেয়ের একের পর এক সাফল্যে খুশি রুখসানার বাবাও। তিনিই একদিন জোর করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ মেয়ে যখন নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে নিয়েছে, তখন নিজের ভুল বুঝতে পারেন তিনি। আর এই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই তো এদেশের মেয়েদের চেনা ভাগ্যেরই গল্প।

আরও পড়ুন
তাস খেলেই দেশে এনেছেন স্বর্ণপদক, এবার অর্জুন পুরস্কারের দৌড়ে দুই বাঙালি

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অবাক করা স্মৃতিশক্তি, ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস-এ নাম উঠল বাঙালি আইনজীবীর

More From Author See More