ঔরঙ্গজেব হত্যা করেছিলেন তাঁকে, মুঘল রাজপুত্র দারা শিকো-র ‘বিলুপ্ত’ সমাধির খোঁজ

তিনি থাকলে হয়তো মুঘল ইতিহাস অন্য খাতে বইত। কিন্তু তার বদলে আমরা পেলাম এক হতভাগ্য শাহজাদার করুণ পরিণতির কাহিনি। বাবার প্রিয় পুত্র, সিংহাসন থেকে ভাইয়ের হাতে মৃত্যু— দারা শিকো’র জীবন নানা সময় নানা ভাবে বইয়ের পাতায় উঠে এসেছে। কিন্তু তাঁর সমাধি ঠিক কোথায়? বহু বছর ধরে এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন ঐতিহাসিকরা।

শাহজাহানের পর মুঘল সিংহাসনে কে বসবে, এই নিয়ে লড়াই ছিল চরমে। সবচেয়ে প্রবল দাবিদার ছিলেন দারা শিকো। প্রজাবৎসল, জ্ঞানী এই শাহজাদা ছিলেন মুক্তমনা। ধর্ম নিয়ে কোনো বাধা-নিষেধ ছিল না তাঁর। বলা হয়, সেই যুগে অন্যতম ‘লিবারাল’ হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন দারা শিকো। শুধু কোরান নয়, উপনিষদও গভীর মনোযোগ দিয়ে অধ্যায়ন করেন। সেই নিয়ে পণ্ডিতদের সঙ্গে আলোচনাও করতেন। সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে ভাগবত গীতা ও ৫২টি উপনিষদের পার্সিতে অনুবাদ করেছিলেন। সমস্ত ধর্মের সহাবস্থানই দেখতে চেয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন
দুর্গের ভেতরে প্রাচীন মন্দির ও মূর্তির হদিশ, উচ্ছ্বসিত ঐতিহাসিকরা

দারা শিকো’র ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থান করতেন তাঁর ভাই ঔরঙ্গজেব। সিংহাসনের দাবিদার ছিলেন তিনিও; বলা ভালো সেই লোভ প্রবলভাবে জাঁকিয়ে বসেছিল তাঁর ওপর। উল্টোদিকে দারা’র এই উদারপন্থী মনোভাবকে একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি তিনি। কুর্সির লড়াই বলে কথা! দুই পক্ষের যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী ছিল। হলও; আর সেখানে রণপটু ঔরঙ্গজেবের কাছে পরাজিত হতে হল দারা শিকো’কে। বন্দি করা হল তাঁকে। অবশ্য ততদিনে শাহজাহান ও জাহানারাও ঔরঙ্গজেবের হাতে বন্দি। পথ পরিষ্কার করতে, দারা’র শিরচ্ছেদ করা হল। কাটা মাথা নিয়ে যাওয়া হল বৃদ্ধ শাহজাহানের কাছে…

এই কাহিনি সবার কমবেশি জানা। এর পরের ঘটনা নিয়েই যাবতীয় জটিলতা। কোথায় দাফন করা হল দারা শিকো’কে? সেই সময় পুরো ঘটনার সাক্ষী ছিলেন ইতালিয় পর্যটক নিকোলা মানুচ্চি। ঘটনার বর্ণনাও দেন। সেখান থেকে, এবং আরও বেশ কিছু সূত্র থেকে এটা জানা যায় যে, হুমায়ুনের সমাধিক্ষেত্রের আশেপাশেই দারার দেহ সমাহিত করা হয়। কিন্তু সঠিক অবস্থান কোথায়, কিচ্ছু বলা হয়নি। উল্লেখ্য, দিল্লির ওই সমাধিক্ষেত্রে হুমায়ুন ছাড়া আরও বহু সমাধি ছড়িয়ে আছে। তার মধ্যে কোনটা দারা শিকো’র, সেটা বোঝা মুশকিল। ওখানকারই পশ্চিম দিকের একটি কবরকে মনে করা হয় দারা’র সমাধি হিসেবে। কিন্তু তার কোনো অকাট্য প্রমাণ নেই।

আরও পড়ুন
৪,৩০০ বছর আগেকার মন্ত্র খোদাই পাথরে, বিশ্বের প্রাচীনতম লেখক এক নারী

এবার সেই কাজটাই আবার শুরু করা হচ্ছে। সম্প্রতি ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক থেকে শাহজাহান-পুত্রের সমাধি খুঁজে বের করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুরো কাজের দায়িত্বে রয়েছে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সাত সদস্যের বিশেষ প্যানেল। আপাতত প্রাথমিক পর্যায়ে তিন মাসের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। পরে সময় বাড়ানো হতে পারে। গবেষণা করে এই কাজ শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। তবে এত ‘অনামী’ সমাধির মধ্যে কোনটি দারা’র, সেটা বের করতে যে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে, সেটা একপ্রকার স্বীকারই করে নিচ্ছেন সকলে।

Latest News See More