দেশে নিষিদ্ধ সঙ্গীত, গৃহবন্দি হয়েও আন্তর্জাতিক মঞ্চে আফগান শিল্পীরা

গত বছর আগস্ট মাসের কথা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার করে নিতে না নিতেই গোটা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করা তালিবানরা। দু’দশক পর আফগানিস্তানের বুকে নেমে এসেছিল অন্ধকার যুগ। বন্ধ হয়েছিল স্কুল-কলেজ। ফতোয়া জারি হয়েছিল গানের বিরুদ্ধে। তালিবানের দৃষ্টিভঙ্গীতে ইসলামে বই-এর মতোই গান ‘অপবিত্র’। নির্দিষ্ট কিছু দেশাত্মবোধক ও ধর্মীয় গান ছাড়া অন্যান্য সঙ্গীত মানুষকে নৈতিকভাবে কলুষিত করে। এমনটাই বিশ্বাস তালিবানদের (Taliban)। ফলে ক্ষমতায় আসার পরেই সঙ্গীতশিল্পীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল তালিবান। বিগত কয়েক মাসে বাড়ির মধ্যে সঙ্গীতচর্চার জন্য তালিবানদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়েছে বহু শিল্পীকে। ধ্বংস করা হয়েছে আফগানিস্তানের (Afghanistan) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মিউজিক। তা সত্ত্বেও এবার ভিন্ন পথে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করতে চলেছেন আফগান শিল্পীরা (Afghan Musicians)। 

না, প্রবাসী কিংবা শরণার্থী শিল্পীদের কথা হচ্ছে না। যাঁরা এই তালিবান জমানায় বন্দি রয়েছেন অভিশপ্ত আফগানিস্তানের মাটিতেই, এই কনসার্টের পিছনে রয়েছেন তাঁরাই। আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতকে বাঁচিয়ে রাখতেই এবার অভিনব উদ্যোগ নিলেন মার্কিন শিল্পী তথা সেন্ট ক্যাথেরিন’স কলেজের ডিরেক্টর, অধ্যাপক ও সঙ্গীতজ্ঞ সায়েনা পোনচিওনে-বেইলি। তাঁর হাত ধরেই গৃহবন্দি আফগানদের বাঁধা গান পরিবেশিত হবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। আর কিছুদিনের মধ্যেই লন্ডনের বুকে শুরু হতে চলেছে ‘সামার’স স্পিটারফেস্ট’ কনসার্ট। সেই কনসার্টেই মুক্তির স্বাদ পাবেন আফগান শিল্পীরা। 

২০১৮ সালে প্রথম আফগানিস্তানে পা রাখেন সায়েনা। তারপর আফগান সঙ্গীতের খোঁজ করতে করতেই কেটেছে দীর্ঘদিন। আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র, লোকগানের ধারা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে কাবুলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মিউজিকে করেছেন অধ্যাপনাও। তাঁর কথায়, গোটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অর্কেস্ট্রাল ধারার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষনীয় আফগান অর্কেস্ট্রা। তার কারণ, পাশ্চাত্যের রেওয়াজের সঙ্গেই সেখানে মিশেছে স্থানীয় সঙ্গীত এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। পাশ্চাত্যের বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গেই সেখানে অর্কেস্ট্রায় ব্যবহৃত হয় হেরাটি, দুতার, রুবাব, তবলা, আফগান তম্বুরের মতো বাদ্যযন্ত্র। যা বিশ্বের আর কোথাও-ই দেখা যায় না।

আফগানিস্তান সফরের সময়, বহু স্থানীয় সুরকার এবং অর্কেস্ট্রা কন্ডাক্টরের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সায়েনার। তাঁদের কাজের ডকুমেন্টেশনও করেছিলেন তিনি। তাঁদের মধ্যে থেকে তেমনই ৮ জন আফগান সঙ্গীতজ্ঞের বানানো অর্কেস্ট্রাল গানকে বেছে নিয়েছেন সিয়েনা। তালিবান-শাসিত আফগানিস্তান থেকেই তাঁরা লিখিত ফর্ম্যাটে পাঠিয়েছেন তাঁদের সদ্য বানানো গানের সুর। লন্ডনের মঞ্চে সেই গানই ভাষা পাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের মারফত। তাঁদের আফগান বাদ্যযন্ত্র শেখানো দায়িত্ব নিজের কাঁধেই নিয়েছেন সায়েনা বেইলি। তবে নিরাপত্তার খাতিরেই প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না মূল আফগান শিল্পীদের নাম— যাঁরা এইসকল অর্কেস্ট্রার আসল স্রষ্টা। তবে বন্দিদশা থেকেও যে আত্মপ্রকাশের সংকীর্ণ পরিসর খুঁজে পাচ্ছেন তাঁরা, তা-ই বা কম কী? 

আরও পড়ুন
মেটালিকা বনাম তালিবান, অভিনব সঙ্গীতযুদ্ধের সাক্ষী ছিল আফগানিস্তান

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বিপদের মুখে বইবাজারও, তালিবান রাজত্বে ত্রস্ত আফগান ব্যবসায়ীরা