ছোটো চুল রাখার জন্য পাড়া-পড়শিদের কটূক্তির শিকার হতে হয়েছে বারবার। এমনকি দেশের বাইরেও তাঁদের দিকে ধেয়ে এসেছে তীর্যক প্রশ্নবাণ। কখনও পুরুষ বলে অপমান করা হয়েছে, কখনও আবার টিশার্ট খুলে মহিলার পরিচয় প্রমাণ করতে বলা হয়েছে তাঁদের। কথা হচ্ছে, সম্প্রতি সাফ-জয়ী (SAFF) বাংলাদেশের (Bangladesh) মহিলা ফুটবলারদের নিয়েই। এবার বাংলাদেশের বুকে তাঁদের নিয়েই পালিত হল আন্তর্জাতিক কন্যাসন্তান দিবস (International Day of the Girl Child)। নেপথ্যে, বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘নো পাসপোর্ট ভয়েস’ (No Passport Voice)।
ব্যারিস্টার ফাতেমা আহসানের প্রতিষ্ঠিত ‘নো পাসপোর্ট ভয়েস’-খ্যাত এই সংস্থা বেশ কয়েক বছর ধরেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মহিলা ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষদের উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল দলের সাফ-জয়কে সেই আন্দোলনেরই পথ প্রশস্ত করেছে আরও। প্রমাণ করেছে, শুধু পুরুষরাই নন, আন্তর্জাতিক মঞ্চে মহিলারাও জয় ছিনিয়ে আনতে পারেন দেশের জন্য।
![](https://www.prohor.in//uploads/editor_image/5362713ae9ab2286b5ae4dfa2d651b1f4116dead.png)
বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল দলের মারিয়া মান্ডা, আফিদা খন্দকার, সাইদা আখতারের মতো ফুটবলাররা তো বটেই, গতকালের এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কোচ মাফুজা আখতার কিরণ। তাঁদের কথায় উঠে এল, প্রান্তিক খেলোয়াড়দের এই লড়াই-এর কাহিনি। পর্যাপ্ত পরিকাঠামো, ডায়েট ছাড়াই সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছানোর গল্প। “কাঠমাণ্ডু থেকে ফেরার পথে হাত নাড়তে নাড়তে হাত ব্যথা হয়ে গিয়েছিল আমাদের। তারপর মনে হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা তো দেশের জন্য আরও কত কষ্ট করেছেন”, আবেগ ঝরছিল মাফুজা আখতার কিরণের গলায়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার সমাজসেবী সংস্থা ‘প্রান্তকথা’-র কর্ণধার বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়। “কলকাতা কিংবা পশ্চিমবঙ্গেও এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশের এই অনুষ্ঠান বিশেষভাবে অনুপ্রেরণাদায়ক। ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা হাজার প্রতিবন্ধকতার জাল ছিঁড়েও জয় ছিনিয়ে এনেছেন। এর মধ্যে দিয়েই যেন প্রশস্ত হচ্ছে আমাদের বাঁধনমুক্তির রাস্তা”, জানালেন বাপ্পাদিত্য।
![](https://www.prohor.in//uploads/editor_image/e1bbb4b3712702d9d14f73f19c22f59ab44c3688.png)
হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশের মহিলাদের এই জয় প্রশস্ত করেছে মুক্তির পথ। সাফ-জয়ই বদলে দিয়েছে সে-দেশের মহিলাদের পরিস্থিতি। কাঠমাণ্ডু থেকে ফেরার পথে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা আর শুভেচ্ছার জোয়ারে ভেসেছেন ফুটবলাররা। আগামীদিনে তাঁদের এই জয় পরবর্তী প্রজন্মের তরুণীদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে, তাতেও সন্দেহ নেই কোনো।
তবে শুধু ফুটবলারদের নিয়েই নয়, একই সঙ্গে ‘নো পাসপোর্ট ভয়েস’-এর এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার মানুষরা ও যৌনকর্মীদের সন্তানরাও। সাফ-জয়ী ফুটবলারদের উদ্দেশ্যে নৃত্য পরিবেশন করেন রূপান্তরকামী শিল্পীরা। তাঁরাও যে বৃহত্তর অর্থে এই আন্দোলনের অংশ।
২০১৯ সালেও বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলারদের নিয়ে ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কন্যা সন্তান দিবস পালন করেছিল ব্যারিস্টার ফাতিমা আহসানের সংস্থাটি। তবে তখন লাইমলাইটের আলো ছিল না তাঁদের ওপর। বরং, সেই উদযাপনকে খানিক বাঁকা চোখেই দেখেছিল সমাজ। অথচ, বছর তিনেকের মধ্যেই পাল্টে গেছে পরিস্থিতি। ‘নো পাসপোর্ট ভয়েস’-এর লড়াই মহিলা, শিশুকন্যা এবং প্রান্তিক মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে যে দিগন্ত খুলে দিচ্ছে, তাঁরই প্রত্যক্ষ প্রমাণ এই ঘটনা…
Powered by Froala Editor