সমুদ্রের গভীরে রহস্যময় অরণ্য, কী আছে সেখানে?

জলের নিচে মাথে তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে অজস্র ব্যাঙের ছাতা। ছোটো ছোটো মস এবং ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ। ২০১৭ সালের কথা। প্রশান্ত মহাসাগরের (Pacific Ocean) সমুদ্রতলে এক আশ্চর্য অরণ্যের সন্ধান পেয়েছিলেন গবেষকরা। ‘ফরেস্ট অফ দ্য উইয়ার্ড’ (Forest Of The Weird) নামে চিহ্নিত করা হয়েছিল এই অরণ্যকে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, এই উদ্ভিদগুলি আদতে উদ্ভিদ নয়, তারা প্রাণী। 

হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি। এই অরণ্য নির্মিত হয়েছে গাছের আকারের প্রবাল দিয়ে। আদতে তাঁরা তারামাছ বা স্টারফিশ এবং স্পঞ্জের নিকটবর্তী আত্মীয়। আশ্চর্য এই প্রাণীগুলিকে অনেকটা ভিনগ্রহীদের মতো দেখতে হওয়ায় তাদের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ইটি স্পঞ্জ’। মজার বিষয় হল, বিশ্বের মাত্র দুটি অঞ্চলেই পাওয়া যায় এই প্রাণীটিকে। আর দুটিই অবস্থিত প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে প্রায় হাজার মাইল গভীরে। বছর খানেক আগে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের পশ্চিমে ইটি স্পঞ্জের দ্বিতীয় বাসস্থানটি আবিষ্কার করেছিলেন গবেষকরা। সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয়েছিল বেশ কিছু নমুনা। স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টির পোস্ট ডক্টরাল গবেষক ক্রিশ্চিয়ানা কাস্তেলা ব্রাঙ্কো এবার সেই নমুনার বিশ্লেষণেই সামনে আনলেন নতুন তথ্য। 

সাধারণত, সিলিকা দিয়ে নির্মিত স্পাইকিউলই স্পঞ্জের মূল গঠনগত উপাদান। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, ইটি স্পঞ্জ যে ধরনের স্পাইকুল দিয়ে তৈরি, তা এতদিন সম্পূর্ণ অজানা ছিল মানুষের। গবেষক কাস্তেলা ব্রাঙ্কোর অভিমত, এই বিশেষ ধরনের স্পাইকিউলই দায়ী ফুল, ব্যাঙের ছাতা কিংবা গাছের আকৃতির জন্য। পাশাপাশি তা নমনীয় হওয়ায় সমুদ্রস্রোতের ধাক্কা এড়াতেও সক্ষম। সমুদ্রের গভীরতার সঙ্গে বৃদ্ধি পায় জলতলের চাপ। আর সেই কারণেই এই ধরনের বিবর্তন ইটি স্পঞ্জের। 

বছর পাঁচেক আগে আবিষ্কৃত এই আশ্চর্য প্রাণীকে ইতিমধ্যেই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের তালিকায় নথিভুক্ত করা হয়েছে। তবে গবেষকদের বিশ্বাস, প্রশান্ত মহাসাগর ছাড়াও বিশ্বের অন্যত্রও অস্তিত্ব রয়েছে এই বিশেষ প্রাণীটির। লুকিয়ে থাকা সেই আশ্চর্য সাম্রাজ্যের সন্ধানেই অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন ন্যাশনাল ওসিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং অফিস অফ এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড রিসার্চ। চলছে এই বিশেষপ্রাণীদের কৃত্রিমভাবে সংরক্ষণ করার পরিকল্পনাও…

Powered by Froala Editor

Latest News See More