রক্ত ঝরানো নয়, বরং রক্তদানেই মহরমের সার্থকতা খুঁজলেন জব্বলপুরের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা

প্রায় ১৪০০ বছর আগে কারাবালার প্রান্তরে ঘটে গিয়েছিল একটি হত্যালীলা। হজরত ইমাম হোসেনের সেই মৃত্যুর ক্ষত আজও বুকে করে বয়ে বেড়ান মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা। মহরমের দশম দিনে ঘটেছিল এই হত্যাকাণ্ড। সেইকথা স্মরণ করেই ছোরা দিয়ে নিজেদের দেহ ক্ষত-বিক্ষত করে রক্ত ঝরান শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষরা। তবে এ-বছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বন্ধ হয়েছে সেই উদযাপন। আর ১৪ শতকের প্রচলিত প্রথাও তাই খানিকটা বদলে নিলেন জব্বলপুরের শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা।

জব্বলপুরের কিরওয়া গ্রামে রবিবার সকাল থেকেই কিরওয়া গ্রামের মেডিক্যাল ক্যাম্পে মহরমের কালো পোশাক পরেই ভিড় জমান অনেকে। উদ্দেশ্য রক্তদান। যে রক্ত তাঁরা হজরত হোসেনের জন্য ঝরাতেন, প্রথা পাল্টে এবার সেই রক্তই তাঁরা দান করলেন কল্যাণের জন্য। হজরত হোসেনের মৃত্যু শোকের উপরে গিয়ে আপন করে নিলেন তাঁর বাণীকে। ‘জিও অওর জিনে দো’-কে। 

পুরো ঘটনাটির পিছনে রয়েছেন আইএমএ-র চিকিৎসক ডঃ অনিল নৌসরান। তিনি প্রথমে এই গ্রামের কিছু মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। তাঁরাও সানন্দে গ্রহণ করেছিল প্রস্তাবটি। রবিবার আইএমএ-র ব্লাড ব্যাঙ্ক হাজির হয় ওই গ্রামে। প্রথমে পাঁচ জন গ্রামবাসী রক্ত দেন। তাঁদের কথা জানতে পেরেই এগিয়ে আসেন গ্রামের আরও বহু মানুষ। সব মিলিয়ে রক্তদান করেন ৪০ জন।

কিরওয়া গ্রামে বসবাস অন্তত ২০০ শিয়া পরিবারের। ‘অ্যাক্ট এগেইন্সট টেররিসম’ ছিল এই বছর তাঁদের মহরম পালনের মূলমন্ত্র। রক্তদানের মাধ্যমে সেই উদ্দেশ্যই সফল হয়েছে বলে জানাচ্ছেন এক রক্তদাতা জাফরুল হাসান জাইদি। গ্রামবাসীদের প্রতিক্রিয়ায় উচ্ছ্বসিত চিকিৎসক অনিল নৌসরানও। তিনি জানান, ১ ইউনিট রক্ত দু’জন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে। এতএব ৪০ জন ব্যক্তির রক্তে প্রাণ ফিরে পাবেন অন্তত ৮০ জন। শোকপালনের উৎসব কোথাও গিয়ে এইবছর এভাবেই আনন্দের হয়ে গেছে কারওয়া গ্রামে...

আরও পড়ুন
করোনার আবহে দিল্লিতে স্থগিত মহরমের শোভাযাত্রা, ৭০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম

Powered by Froala Editor