মানুষের সঙ্গে হাঁসেরাও এখানে চাকুরে

ভোরের আলো ফুটতেই ‘প্যাঁক প্যাঁক’ শব্দ কান পাতা দায়। মাটির রাস্তা দিয়ে হেলতে দুলতে এগিয়ে চলেছে হাঁসের দল। বা বলা ভালো সেনাবাহিনী। একটি-দুটি নয়, পথে নেমেছে কয়েক হাজার হাঁস। দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) কেপ টাউনের ঠিক বাইরেই এরস্টে নদী-তীরবর্তী অঞ্চলের ভাইনইয়ার্ডগুলোতে (Vineyards) গেলেই দেখা যাবে এমন দৃশ্য। কিন্তু কোথায় চলেছে এই হাঁসের (Duck) দল? সেদিকে তো পুকুর নেই কোনো। নদীর কিনারেও তোলা আছে উঁচু পাঁচিল তবে?

এক কথায় বলতে গেলে, আপিসে যাচ্ছে তারা। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। মানুষের মতো হাঁসেরাও চাকুরে এদেশে। ভোরের আলো ফুটলেও তারাও দল বেঁধে কাজে যায়। বেতনও পায় মানুষের মতোই। কিন্তু কী কাজ? কোথায়ই বা তাদের এই অফিস?

বিশ্বের ওয়াইন উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ আফ্রিকা। সবমিলিয়ে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করে দক্ষিণ আফ্রিকার ভিনিকালচার শিল্প। শুধু মানুষই নয়, এই শিল্পক্ষেত্রে হাঁসেরাও মানুষের সহকর্মী। কেপ টাউনের ওয়াইন এস্টেট ভেরজেনোয়েড লো-তে হাঁসেদের ব্যবহার করা হয় কৃষিক্ষেত্রে। দ্রাক্ষাক্ষেত্র বা ভাইন ইয়ার্ড দেখাশোনা ও রক্ষা করার দায়িত্ব থাকে তাদের ওপরেই। 

হ্যাঁ, দক্ষিণ আফ্রিকার এই ভাইন ইয়ার্ডে কোনোরকম রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। ব্যবহৃত হয় না কীটনাশকও। বরং, পতঙ্গের উৎপাত এড়াতে সেখানকার কৃষকরা বেছে নিয়েছেন এই অদ্ভুত পন্থা। প্রতিদিন সকাল হলেই ভাইন ইয়ার্ডে নামানো হয় হাঁসের ব্যাটেলিয়ন। তারাই মাটি থেকে খুঁজে খুঁজে কীটপতঙ্গ, কৃমি, শামুক খেয়ে রক্ষা করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। তাছাড়া তাদের মল-মূত্রই কাজ করে সারের। ফলে, কৃত্রিম ফার্টিলাইজারের প্রয়োজন পড়ে না কোনো। 

কেপ টাউনের প্রতিটি দ্রাক্ষাক্ষেত্র অর্থাৎ ভাইনইয়ার্ডগুলিতে ‘কাজ’ করে প্রায় ১৬০০-রও বেশি হাঁসের পরিবার। অর্থাৎ, হাজার পাঁচ-ছয়েক ডানাওয়ালা শ্রমিক। তবে এক্ষেত্রে ‘ইন্ডিয়ান রানার ডাক’ প্রজাতিকেই বেছে নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষকরা। কারণ, এই বিশেষ প্রজাতির ঘ্রাণ শক্তি প্রবল। সহজে পোষও মানে তারা। 

আর হাঁসেদের বেতন? সেটা একটু অদ্ভুত। প্রতিদিন রাতে তাদের জন্য বরাদ্দ হয় বিশেষ প্রোটিনযুক্ত খাবার। বছরে একবার মাস খানেকের লম্বা ছুটিও পায় তারা। সেটা মেলে ফসল কাটার মরশুমে। মূলত, এই সময়টায় নদীতেই সাঁতার কেটে বেড়ায় তারা। পাশাপাশি এ-সময় বোনাসও পায় এই খুদে চাকুরেরা। ভাইন ইয়ার্ডের সেরা আঙুরের একাংশ বরাদ্দ করা হয় হাঁসেদের জন্য।

দক্ষিণ আফ্রিকার এই প্রথা একদিকে যেমন রাসায়নিক দূষণে রেশ টেনেছে, তেমনই এই অবাক করা ‘আপিস’ হয়ে উঠেছে সে-দেশের অন্যতম আকর্ষণ। হাঁসেদের এই কর্মকাণ্ড দেখতে এখন রীতিমতো ভিড় জমান পর্যটকরা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও কৃষিক্ষেত্রে এভাবে জৈব পথে হাঁটলে এক নিমিষে বদলে যেত পরিবেশের হাল…

Powered by Froala Editor