অকারণ সিটি-স্ক্যানে হাতছানি ক্যানসারের!

রূপ বদলে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে করোনা ভাইরাস। দ্বিতীয় তরঙ্গের আঘাতে ইতিমধ্যে বিপর্যস্ত ভারত। আশঙ্কার কারণ তো অবশ্যই রয়েছে। তবে এই আশঙ্কা থেকেই অনেক সময় ভুল চিকিৎসাও চলছে বলে জানাচ্ছেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের প্রধাণ ডঃ রণদীপ গুলেরিয়া। সংক্রমণ ধরা পড়তেই মানুষ সিটি-স্ক্যান, বায়োমার্কার পরীক্ষা করাচ্ছেন। সেইসঙ্গে নির্বিচারে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করছেন আক্রান্ত মানুষরা। চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া এধরণের পরীক্ষা বা ওষুধ নেওয়া হলে ভবিষ্যতে ক্যান্সারের মতো অসুখ ঘটতে পারে বলেও সতর্ক করলেন ডঃ গুলেরিয়া।

সাংবাদিক সম্মেলনে গুলেরিয়া জানান, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় সচেতন থাকা ভীষণ প্রয়োজন। চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়াই বড়ো কোনো পদক্ষেপ না নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন মানুষকে। তাঁর কথায়, সামান্য শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে এক্স-রে করা যেতে পারে। তবে কোনো সময়েই খুব প্রয়োজন না মনে করলে সিটি-স্ক্যানের পরামর্শ দেন না চিকিৎসকরা। একবার সিটি-স্ক্যান করলে মানুষ যে পরিমাণ বিকিরণের শিকার হয়, তা অন্তত ৫-৬ হাজার বার এক্স-রে করার সমান। আর এই বিকিরণ থেকে ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব খুবই স্বাভাবিক। বিশেষ করে কম বয়সী এবং খুব সামান্য উপসর্গযুক্ত রোগীদের কোনোভাবেই সিটি-স্ক্যান না করানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

একইভাবে সিপিআর, ডি-ডাইমারের মতো বায়োমার্কার পরীক্ষার থেকেও বিরত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন ডঃ গুলেরিয়া। এইমস প্রধানের মতে, বায়োমার্কার পরীক্ষায় যে কোনো রকমের ছোট-বড়ো ইনফেকশনই ধরা পড়ে। এমনকি দাঁতের মাড়িতে বা খাদ্যনালিতে ইনফেকশনের ক্ষেত্রেও পজিটিভ রিপোর্ট আসে। অথচ ভারতের বহু মানুষই এমন ছোটখাটো ইনফেকশনের শিকার। ফলে রিপোর্ট থেকে অযথা আতঙ্কের সৃষ্টি হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই। এইসমস্ত পরীক্ষার পাশাপাশি স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সচেতন করেছেন এইমস প্রধান। জটিল উপসর্গ দেখা না গেলে সংক্রমণের পর অন্তত ৭ দিন কোনোভাবেই স্টেরয়েড প্রয়োগ করা উচিৎ নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। এইসমস্ত স্টেরয়েড প্রয়োগের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ভাইরাস আরও তাড়াতাড়ি রেপ্লিকেট করতে শুরু করে। তাই রোগীদের পাশাপাশি স্টেরয়েড দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদেরও সচেতন হতে বলেছেন ডঃ গুলেরিয়া। আর চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া যে কোনোভাবেই তা নেওয়া উচিৎ নয়, সে-কথা বলাই বাহুল্য। আর উপসর্গহীন বা সামান্য উপসর্গযুক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধেই আরোগ্যলাভ সম্ভব বলেও জানালেন ডঃ গুলেরিয়া।

পরিস্থিতি যতই জটিল হয়ে উঠছে, সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা ততই বোঝা যাচ্ছে। সেইসঙ্গে মানুষের মধ্যে বাড়ছে আতঙ্কও। কিন্তু আতঙ্কের বশে নিজের শরীরের আরও বেশি বিপদ ডেকে আনা কখনোই কাম্য নয়। ডঃ গুলেরিয়ার সতর্কবার্তা তাই এই মুহূর্তে মেনে চলা বিশেশষভাবে প্রয়োজন।

আরও পড়ুন
মাত্র দুটি ড্রাগের মিলিত প্রয়োগেই সেরে উঠবে ফুসফুসের ক্যানসার, যুগান্তকারী আবিষ্কার

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আক্রান্তদের জন্য তহবিল গড়তে সাইকেলে বিশ্বভ্রমণ ক্যানসার-জয়ীর