সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল চিড়িয়াখানার ৮টি সিংহের শরীরে, আতঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা

শুধুই মানুষের শরীরে নয়, এবার হায়াদ্রাবাদের চিড়িয়াখানায় সিংহের শরীরেও ধরা পড়ল করোনা সংক্রমণ। নেহেরু জুলজিক্যাল পার্কের আটটি এশিয়াটিক সিংহের শরীরে করোনা সংক্রমণের নমুনা পাওয়া গিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এশিয়াটিক সিংহের সংখ্যা কমে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এবার তাদের মধ্যেই মহামারীর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়েও উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা।

কিছুদিন আগেই নেহেরু পার্কের কয়েকজন কর্মী লক্ষ করেন আটটি সিংহ হঠাৎ সর্দি-কাশিতে ভুগতে শুরু করেছে। পাশাপাশি বদহজমের সমস্যাও দেখা দিয়েছে। এইসমস্ত উপসর্গ দেখা দিতেই সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজির পরীক্ষাগারে পাঠানো হয় তাদের শ্লেষ্মার নমুনা। মঙ্গলবার সকালেই সিসিএমবি ফোনকলে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে জানায় নমুনায় করোনা ভাইরাসের স্ট্রেইন পাওয়া গিয়েছে। তবে সামগ্রিক রিপোর্ট পেতে এখনও বেশ কিছুদিন সময় লেগে যাবে।

করোনা ভাইরাস এশিয়াটিক সিংহের শরীরে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সে-বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন গবেষকরা। পাশাপাশি এই ভাইরাস মানুষের শরীর থেকেই এসেছে কিনা, তাও জিন সিকোয়েন্সিং পরীক্ষা করে দেখা হবে। অবশ্য ভারতের বন্যপ্রাণ গবেষণা সংস্থার গবেষক সুমন কোলে জানাচ্ছেন, “মানুষের শরীর থেকেই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ চিড়িয়াখানার জন্তুরা তো অন্য প্রজাতির প্রাণীদের সংস্পর্শে আসে না।” নেহেরু পার্ক কর্তৃপক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, তাঁদের কর্মচারীদের অন্তত ২৫ জন ইতিপূর্বে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। সুমন কোলে আরও জানাচ্ছেন, “বাদুর হোক বা অন্য কোনো প্রাণীর শরীর থেকেই করোনা ভাইরাস মানুষের শরীরে বাসা বেঁধেছিল। ফলে মানুষের শরীর থেকে অন্যান্য প্রাণীর শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়াও অস্বাভাবিক নয় কোনোভাবেই।”

ইতিমধ্যে নেহেরু পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন ৮টি সিংহের প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়েছে। সেইসঙ্গে পর্যটক আসা বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বনবিভাগ থেকে নির্দেশিকা জারি করে দেশের সমস্ত চিড়িয়াখানা এবং ন্যাশানাল পার্কে পর্যটকদের যাওয়া আসা বন্ধ করা হয়েছে। তবে এর ফলে পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া যাবে, সেই বিষয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। গবেষক সুমন কোলের কথায়, “সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণীদের সঙ্গেই মানুষও বসবাস করে। বাফার জোনে দুই পক্ষেরই যাতায়াত থাকে। ফলে সেখান থেকে বন্যপ্রাণীদের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তা আটকানো কঠিন হবে। তাছাড়া গরু, ছাগল বা অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণী তো মানুষের সঙ্গেই থাকে।”

আরও পড়ুন
সীমান্ত ছেড়ে, করোনা মোকাবিলায় এবার সামিল সামরিক চিকিৎসকরাও

তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে মানুষের মতোই সিংহের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠবে, নাকি প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমেই সামাল দেওয়া যাবে তা নিশ্চিত নয়। আপাতত সিসিএমবি-র রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতেই হবে। আর তার জন্য লেগে যেতে পারে বেশ কিছুদিন সময়।

তথ্যসূত্রঃ দ্য হিন্দু

আরও পড়ুন
করোনার একাধিক স্ট্রেন সক্রিয় ভারতে, হার মানছে অ্যান্টিবডিও

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় না মস্তিষ্ক, প্রমাণ দিলেন গবেষকরা