মার্কিন উপকূলে তাণ্ডব হারিকেন ‘লরা’-র, তছনছ বিস্তীর্ণ অঞ্চল

গত ৫ আগস্টই আমেরিকার উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ট্রপিকাল হারিকেন ইসাইয়াস। এখনও মাস ঘোরেনি। তার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেল আরও একটি ট্রপিকাল ঝড় ‘লরা’। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১টা নাগাদ মার্কিন উপকূলে আছড়ে পড়ে এই শক্তিশালী হারিকেন।

গত দু’দিন ধরেই ভয়ঙ্কর শক্তি বাড়াচ্ছিল লরা। যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে আঘাত হানার আগেই ক্যাটাগরি ৪ বিভাগের ঘূর্ণির রূপ নেয় লরা। লুইসিয়ানার দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানার সময় লরা’র গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার। সম্ভাবনা ছিল শক্তি বাড়িয়ে ক্যাটাগরি ৫ ঘূর্ণি হয়ে ওঠার। তবে এ যাত্রায় সেই ধ্বংসলীলা দেখায়নি লরা। ভয়ঙ্কর এই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসে সতর্কতা জারি হয়েছিল মার্কিন মুলুকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। 

ঝড়ের সঙ্গেই উপকূলে আছড়ে পড়ে প্রবল জলোচ্ছ্বাস। কোথাও কোথাও তার উচ্চতা পৌঁছেছিল ১৫-২০ ফুট অবধি। জলমগ্ন হয়ে পড়ে উপকূলবর্তী অঞ্চল। তবে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর ধীরে ধীরে শক্তিক্ষয় হয় এই হারিকেনের। গতিবেগ কমে আসে ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। লুইসিয়ানায় তাণ্ডব চালিয়ে আরকানা প্রদেশেও ধ্বংসলীলা বজার রাখে লরা। 

লরা’র আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে লুইসিয়ানায়। উপড়ে গেছে বহু গাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু বাড়ি এবং নির্মাণকার্যও। এমনকি লরার গতিবেগের সামনে তাসের মতো বহুতল মাল্টিপ্লেক্সের ছাদ উড়ে যাওয়ার ছবিও সামনে এসেছে সম্প্রতি। টেক্সাস এবং লুইসিয়ানা প্রদেশ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য। পরিষেবা ব্যাহত হয় কমপক্ষে ৮ লক্ষ মানুষের। লরা’র প্রভাবে এখনও অবধি মৃত্যু হয়েছে চার ব্যক্তির। তবে বাড়তে পারে সেই সংখ্যা। ঝড়ের পূর্বাভাসে উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল প্রায় ৪ লক্ষ মানুষকে। যার কারণে হতাহতের সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে এনেছেন বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। 

আরও পড়ুন
১৯৭০-এর প্রাণঘাতী ভোলা সাইক্লোনে মারা গিয়েছিলেন ৫ লক্ষ বাঙালি!

লরার তাণ্ডবে লুইসিয়ানার একটি রাসায়নিক তৈরির কারখানায় বিধ্বংসী আগুন লাগে। গ্যাসের ট্যাঙ্ক লিক করে ছড়িয়ে পড়ে ক্লোরিন। পুলিশ এবং দমকলকর্মীদের তৎপরতায় বৃহস্পতিবার বেলায় আয়ত্তে আসে পরিস্থিতি। দুর্গতদের উদ্ধারের জন্য ১৫০০ কর্মী এবং ৪০০ সার্চ বোট মোতায়েন করেছে প্রশাসন। চেষ্টা চলছে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার। এখনও বিভিন্ন প্রদেশে অবিরাম অতিভারী বৃষ্টি চলছে লরা’র প্রভাবে। তবে হাওয়ার বেগ শান্ত হয়েছে অনেকটাই। ১৯৫৭ সালে হারিকেন অড্রি’র প্রভাবে এমন বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তারপর এত বড়ো মাত্রার ক্ষয়ক্ষতি হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের প্রদেশে। প্রায় ৬ দশক পর সেই স্মৃতিই যেন আরো একবার উসকে দিল লরা। আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে শুধুই ধ্বংসের ছাপ...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
১৩৬ বছর আগে তোলা এই ছবিই ঘুর্ণিঝড়ের সর্বপ্রথম ফটোগ্রাফ