শতাব্দীর প্রথম সুপার সাইক্লোন! তীব্র বেগে এগিয়ে আসছে আমফান, সতর্কতা জারি সর্বত্র

আমফান যে শক্তি সঞ্চয় করছে ক্রমাগত, তা আগেই জানিয়েছিলেন মেটিওরোলজিস্টরা। রবিবারই এই ঘূর্ণিকে এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনের তকমা দিয়েছিল মৌসম ভবন। তার ঠিক একদিনের মধ্যেই চরিত্র বদলে ফেলল আমফান। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় পরিণত হল সুপার সাইক্লোন বা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। ১৯৯৯-এর উড়িষ্যার সুপার সাইক্লোনের ২১-পর এত শক্তিশালী কোনো ঝড়ের সম্মুখীন হতে চলেছে ভারত।

এর মধ্যেই আয়লা বা ফণীর মতো ভয়ঙ্কর ঝড়গুলির বেশ কয়েকটি রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে আমফান। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরো শক্তি বাড়াবে এই ঘূর্ণিঝড়। দীঘা থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে আমফান। স্থলভূমিতে আঘাত হানবে বুধবার দুপুর নাগাদ। বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গে দীঘার মাঝেমাঝি কোনো একটি স্থানে আছড়ে পড়বে আমফান।

সমুদ্রতটের কাছেকাছি এসে শক্তি খানিকটা হলেও কমবে এই ঘূর্ণির। স্থলভূমির শুষ্ক বাতাস খানিকটা হলেও দুর্বল করে দেয় সাইক্লোনকে। আমফানের ক্ষেত্রেও সেটাই হবে। তারপরেও তটে আছড়ে পড়ার সময় গতিবেগ থাকবে ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটারের মতো। তবে হাওয়ার ঝাপটার দাপট ছাড়িয়ে যাবে ‘ফণী’-কেও। হাওয়ার সর্বোচ্চ প্রাবল্য পৌঁছাতে পারে প্রায় ২৪০-২৬৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। ফলে আমফান বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনবে, তারই পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।

শতাব্দীর প্রথম সুপারসাইক্লোনের কারণে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে রাজ্য থেকে কেন্দ্র সকল স্তরেই। সোমবার সন্ধেতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে জরুরি তৎপরতায় বৈঠক করেন ঝড়ের মোকাবিলার জন্য। সেই সঙ্গে তৎপর রাজ্য সরকারও। তবে আমফানের ধাক্কায় সামাজিক দূরত্বের দফারফা হতে পারে রাজ্যে।

আমফানের সর্বাধিক প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গে ছ’টি জেলায়। কলকাতা, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা ও দুই মেদিনীপুর ও নদীয়ায় তাণ্ডব চালাবে আমফান। আগামীকাল থেকেই আমফানের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এই জেলাগুলোয়। প্রভাব থাকবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৩২ জনের একটি দল দীঘা পৌঁছেছে। দীঘা, মন্দারমণি সহ রাজ্যের উপকূলবর্তী সমস্ত অঞ্চলে থেকেই ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র ও বন্যাত্রাণ কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মানুষদের। সোমবার সকালেই প্রায় ৭৫টি সুরক্ষা কেন্দ্রকে স্যানিটাইজ করা হয়। প্রত্যেকের জন্য মাস্ক এবং সাবানের ব্যবস্থা করেছেন আধিকারিকেরা। এছাড়া কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে ১৪টি পঞ্চায়েতে।

তবে সন্দেশখালি ও হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায় নদীবাঁধের অবস্থা খারাপ হওয়ায় চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনের। কয়েক জায়গায় জরুরি তৎপরতায় সারানো হচ্ছে বাঁধ। এদিন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রায় সব জায়গাতেই মাইকে সতর্ক করা হয় জনগণকে।

ভারী বৃষ্টিপাত হলেও আমফানের প্রভাব খুব একটা প্রকট হবে না উড়িষ্যায়। তবুও বাড়তি সতর্কতা নিয়েই উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে মানুষদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেখানেও। পশ্চিমবঙ্গ এবং উড়িষ্যায় এর মধ্যেই ২০শে মে পর্যন্ত সমস্ত ট্রলার এবং মৎস্যজীবিদের পুরোপুরি সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেছে সরকার। সেই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে খড়গপুর এবং ভুবনেশ্বরের বিশেষ ট্রেনগুলি।

প্রতিবেশী রাজ্য বাংলাদেশেও হুঁশিয়ারি জারি করা হয়েছে আমফানের। অতিপ্রবল এই ঘূর্ণির জন্য সমুদ্রের সর্বোচ্চ জলোচ্ছ্বাস সাধারণের তুলনায় ৪-৫ মিটার উচ্চতর হচ্ছে। ফলে বন্যার কবলে পড়তে পারে বাংলাদেশের একাধিক স্থান। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হতে পারে কক্সবাজারে। ওই অঞ্চলের একটি শরণার্থী শিবিরে থাকা ১০ লক্ষ মানুষ বিপন্ন হতে পারেন বন্যায়।

১৯৯৯-এর সুপার সাইক্লোনের কবলে শুধু উড়িষ্যাতেই ৯০০০ মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। ভারত, বাংলাদেশ এবং মায়ানমার মিলিয়ে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৪৪৪ কোটি মার্কিন ডলার। ২১ বছর পরে সেই দুঃস্বপ্নই কি ফিরে আসতে চলেছে আবার? প্রশাসনের সমস্তরকম ব্যবস্থা, সতর্কতা নেওয়ার পরও ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে পরিকল্পনাতীত। এখন প্রস্তুতি শুধু ঝড়ের তাণ্ডব কাটিয়ে কত দ্রুত আয়ত্তে আনা যায় পরিস্থিতি। আসলে প্রকৃতির এই ধ্বংসলীলার কাছে আমরা সত্যিই অসহায়, আমরা অপারগ...