হোয়াটসঅ্যাপ কলে ছাঁটাই ২০০০ কর্মী, অভিযোগ ইন্ডিবুলস-এর বিরুদ্ধে

দীর্ঘ লকডাউনের জেরে বিপর্যস্ত অর্থনীতি। আর তার প্রাথমিক ধাক্কা এসে পড়ছে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনেই। সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ক্রমাগত শ্রমিক ছাঁটাই করে চলেছে দেশের বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি। উবের, জোমাটো, স্যুইগির পর সেই তালিকায় যোগ হল আরও একটি নাম। ইন্ডিবুলস হোমলোন কোম্পানি সম্প্রতি একাধিক কর্মচারীকে ছাঁটাই করার কথা জানিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে অভিযোগ আরও গুরুতর। শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আছে হুমকি এবং ব্ল্যাকমেইলিং-এর অভিযোগও।

সম্প্রতি কোম্পানির কিছু কর্মচারী সামাজিক মাধ্যমে একটি অভিযোগ প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন। সেখানে অনেকেই জানান, আচমকা একটি হোয়াটসঅ্যাপ কলে তাঁদের চাকরি ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কোম্পানি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কোনো তথ্য রাখতে রাজি নয়। আর তাই কর্মীদেরই বলা হয়েছে কাজ থেকে ইস্তফা দিতে। আর সেই কারণেই কোনো নির্দিষ্ট বিজ্ঞপ্তির বদলে হোয়াটসঅ্যাপ কলে এই কথা জানানো হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওঠে প্রতারণার প্রশ্ন।

তবে এখানেই শেষ নয়। কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের এমনও বলা হয়েছে যে ইস্তফা না দিলে তাঁরা বকেয়া মাইনেও পাবেন না। এমনকি কোনো কাজ ছেড়ে দিলে যে এক্সপিরিয়েন্স লেটার সকলের প্রাপ্য, সেটাও দিতে অস্বীকার করে কোম্পানি। কোম্পানির পক্ষ থেকে অবশ্য কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করে নেওয়া হলেও এধরনের ফোনকলের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। অথচ দেশের নানা প্রান্ত থেকে অন্তত ২০০০ কর্মী একই অভিযোগ করেছে কোম্পানির বিরুদ্ধে।

আবার অনেকে জানিয়েছেন, তাঁদের সরাসরি ইস্তফা দেওয়ার কথা না বলে কোম্পানি একটা অভিনব পদ্ধতি নিয়েছে। হঠাৎ তাঁরা জানতে পারেন তাঁদের কর্মক্ষেত্র থেকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে এবং নতুন জায়গায় গিয়ে দায়িত্বভার নিতে সময় দেওয়া হয়েছে সামান্যই। অথচ লকডাউনের জেরে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও স্বাভাবিক নয়। ফলে এই সময়ের মধ্যে নতুন জায়গায় গিয়ে কাজ শুরু করা অসম্ভব। এবং তার ফলাফল কাজ হারানো।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে এই বাধ্যতামূলক লকডাউন অনেকের জীবনকেই এক কঠিন সময়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। পরিযায়ী এবং ঠিকা শ্রমিকদের দুর্দশার নানা দৃশ্য আমরা দেখেছি সমস্ত দেশজুড়ে। অনাহার, অর্ধাহার এবং শেষে মৃত্যু। এমনকি সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষকেও লড়তে হচ্ছে এই আর্থিক দুর্দশার বিরুদ্ধে। মানুষের সভ্যতার এমন সংকটময় মুহূর্তে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির দায়িত্ব থেকে যায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। পৃথিবীর নানা জায়গায় সেই ছবিও চোখে পড়ছে। আবার এমন ঘটনাও ঘটছে, যেখানে প্রমাণ হচ্ছে কোম্পানির কাছে কর্মীরা যন্ত্রের চেয়ে বেশি কোনো মূল্য রাখে না। অথচ তাঁদের জীবনের পাশে দাঁড়ানোর সামান্য ক্ষমতাও কি নেই কোম্পানির?

Powered by Froala Editor