প্রয়াত 'বিষ্ণুপুরের চলমান ইতিহাস' চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত, অসম্পূর্ণই রইল শেষ কাজ

একের পর এক নক্ষত্রের পতন দেখছে বাংলা, সারা দেশ। চলে গেলেন বিশিষ্ট পুরাতাত্ত্বিক চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত। যিনি ‘বিষ্ণুপুরের চলমান ইতিহাস’ নামেই পরিচিত ছিলেন। বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। কিছুদিন আগেই ভাইয়ের মৃত্যুশোকে বড়সড় আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত সমস্যা তো ছিলই। গত ৩১ জুলাই শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল বিষ্ণুপুর হাসপাতালে। সেখানেই বুধবার দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। 

জন্ম ১৯২৫ সালে বিষ্ণুপুরের মল্লরাজ কবিরাজ বংশে জন্মগ্রহণ করেন চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত। ছোট থেকেই কবিতা, গল্প, প্রবন্ধের সঙ্গে ছিল আত্মীয়তা। পাশাপাশিই তাঁর শিক্ষক মানিকলাল সিংহের হাত ধরে শুরু হয় ইতিহাসপ্রেম। যে বিষ্ণুপুরে তাঁর বেড়ে ওঠে প্রথমে সেই বিষ্ণুপুরের হারিয়ে যাওয়া নথি, তথ্য, ইতিহাসের খোঁজেই নেমেছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে তাঁর পাঠ্য হয়ে ওঠে সমগ্র রাঢ়বঙ্গ। 

দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। যুক্ত ছিলেন শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র সঙ্গে। রাজ্য শিক্ষা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ছিলেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদেরও অন্যতম সদস্য। আচার্য যোগেশচন্দ্র পুরাকৃতি ভবনের সদস্য সচিবের দায়িত্বভার সামলেছেন জীবনের শেষ অধ্যায় অবধি। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিষ্ণূপুরের শিক্ষক শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়।

চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত রাঢ়বঙ্গের ইতিহাসের খোঁজে নিরলস কাজ করে গেছেন সারা জীবন। লিখেছেন অসংখ্য প্রবন্ধ। বাংলার ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিষয়ক এই প্রবন্ধগুলি পুরাতাত্ত্বিক সম্পদ। পরবর্তীকালে নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলার বিভিন্ন মন্দিরের ওপরেও গবেষণা করেছেন বিস্তর। লিখেছেন বেশ কিছু বই। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘বিষ্ণুপুরের মন্দির টেরাকোটা’, ‘দক্ষিণবঙ্গের মূর্তিশিল্প ও সংস্কৃতি’ প্রভৃতি। শিক্ষকতা এবং পুরাতত্ত্বচর্চার পাশাপাশিই ছিলেন একজন অসামান্য সংগ্রাহকও। উদ্ধার করেছিলেন বহু মূর্তি এবং হারিয়ে যাওয়া পুঁথি। জীবনের একটা দিনও কাটেনি এই পুঁথিদের ছাড়া। আচার্য যোগেশচন্দ্র পুরাকৃতি ভবনের অধিকাংশ সংগ্রহই এসেছে তাঁর হাত ধরে।

আরও পড়ুন
প্রয়াত সমাজকর্মী এবং লেখিকা ইলিনা সেন, থেমে গেল বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কণ্ঠ

পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস অন্বেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য তাঁর মুকুটে চড়েছে একাধিক পুরস্কার। সম্মানিত হয়েছেন রাখালদাস স্মৃতি পুরস্কারে। পেয়েছেন মোহনলাল গোয়েঙ্কা সেবা পুরস্কার, খেয়ালী পুরস্কার, সোপান পুরস্কার, শিল্প নিকেতন সম্মান।

প্রবীণ এই ঐতিহাসিকের জীবনাবসানে শোকস্তব্ধ ইতিহাসপ্রেমীরা। শোকস্তব্ধ গোটা মল্লভূম। তবে ইতিহাস সংগ্রহে নিষ্ঠা এবং পরিশ্রমের বিকল্প হয় না, তাই তিনি বুঝিয়ে গেলেন। শেষ জীবনেও বাংলার ইতিহাস নিয়েই নিমগ্ন ছিলেন বই লেখায়। অসম্পূর্ণ রইল সেই কাজ। তবে রেখে গেলেন হাতে ধরে তৈরি করা অনেক অনেক ছাত্রদের। ইতিহাস অন্বেষণের এই দায়িত্ব, মশাল দিয়ে গেলেন তাঁদের হাতেই...

আরও পড়ুন
উচ্চমাধ্যমিক গণিতে ভয় কিংবা সাফল্যের কাণ্ডারী তিনিই, প্রয়াত অধ্যাপক এস. এন. দে

Powered by Froala Editor

More From Author See More