প্রয়াত সমাজকর্মী এবং লেখিকা ইলিনা সেন, থেমে গেল বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কণ্ঠ

শ্রমিক এবং আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে যতদিন আন্দোলন জারি থাকবে, জ্বলজ্বল করবে তাঁর নাম। ইলিনা সেন। মানবাধিকারের সক্রিয় কর্মী এবং অতন্দ্র এই যোদ্ধা তাঁর বিপুল কর্মকাণ্ড থেকে ছুটি নিলেন শেষমেশ। বিদায় জানালেন এই সমাজব্যবস্থাকে। রেখে গেলেন এক নীরব শূন্যতা।

দীর্ঘদিন ধরেই ক্যানসারে ভুগছিলেন ইলিনা সেন। যন্ত্রণা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল তাঁর শরীর এবং মন। তবুও শেষদিন অব্দি তাঁর চেতনায় সক্রিয়ভাবেই ছিল সাধারণ উপেক্ষিত মানুষের চিন্তা। রবিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। রবিবারই কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

তবে শুধুমাত্র একজন সক্রিয় মানবাধিকার কর্মী বললে অনেকটাই ভুল বলা হয় তাঁর ব্যাপারে। এর পাশাপাশি ইলিনা ছিলেন একজন অধ্যাপিকা এবং লেখিকা। সমাজের অন্ধকারদিক এবং পক্ষপাতিত্ব বার বার ফিরে এসেছে তাঁর লেখায়। তাঁর লেখা দুটি বই গণমানসে প্রভাব ফেলেছিল রীতিমতো। ‘ছত্তিশগড়ঃ অ্যা পলিটিক্যাল মেমোয়ার’ এবং ‘সুখবাসিনঃ অ্যা মাইগ্রেন্ট ওম্যান অফ ছত্তিশগড়’।

ছত্তিশগড়ে দীর্ঘ সময় নিজে ছিলেন ইলিনা। সেখানে উপজাতি এবং খনিশ্রমিকদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন সক্রিয়ভাবে। নেতৃত্ব দিয়েছেন আন্দোলনের। শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার জন্য বারবার সরব হয়েছিলেন তিনি। ভিলাই ট্রেড প্ল্যান্টে মহিলাকর্মীদের ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধেও তুলেছিলেন প্রতিবাদের ঝড়। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সিভিল নজরদারি গোষ্ঠী কোয়া কোমান্ডো। সালওয়া জুডুমের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। এই আন্দোলনের অংশ ছিলেন তাঁর স্বামী বিনায়ক সেনও। জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

২০১০ সালে তাঁর স্বামী ডঃ বিনায়ক সেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল দাঁয়রা আদালত। নকশাল আন্দোলনে সাহায্য করার মত অভিযোগ তোলা হয়েছিল তাঁর নামে। তাঁর তৈরি এনজিও-র সমস্ত কাজই একা হাতে সামলে গেছেন ইলিনা সেন। প্রান্তিক অঞ্চলে মানুষদের পাশে বার বার দাঁড়িয়েছেন তিনি। 

শ্রেণী, বর্ণ, লিঙ্গের বৈষম্যহীন এক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন ইলিনা সেন। পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মেরুদণ্ড হয়েই ঘুরে দাঁড়াতে শিখিয়েছিলেন ইলিনা। শিখিয়ে ছিলেন পিতৃতন্ত্রকে প্রশ্ন করতে। যে গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি, শেষ হল না তার। দেখে যেতে পারলেন না স্বপ্নের বৈষম্যমুক্ত সেই সমাজকে। তবে জ্বালিয়ে রেখে গেলেন আন্দোলনের আগুন। অসমাপ্ত লড়াইয়ের সেই আগুন বার বার মনে করিয়ে দেবে তাঁর কথা...

আরও পড়ুন
উচ্চমাধ্যমিক গণিতে ভয় কিংবা সাফল্যের কাণ্ডারী তিনিই, প্রয়াত অধ্যাপক এস. এন. দে

Powered by Froala Editor