অনুবাদ করেছেন রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলিও; মারাঠি সাহিত্যিককে শ্রদ্ধা গুগলের

সামনে রাখা হারমোনিয়াম। রিডে হাত দিয়ে বসে আছেন প্রবীণ এক সঙ্গীতজ্ঞ। আর সেখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে সুরের ছটা। রঙিন আলোকধারা হয়ে। পুরুষোত্তম লক্ষ্মণ দেশপাণ্ডে। বিখ্যাত মারাঠি সাহিত্যিক ও সঙ্গীতজ্ঞকে ১০১তম জন্মদিনে এভাবেই শ্রদ্ধা জানাল গুগল ডুডল।

তবে শুধু সঙ্গীতজ্ঞ ও সাহিত্যিক বললে অনেকটাই কমিয়ে বলা হয়। কারণ সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি লিখেছেন সিনেমার স্ক্রিপ্ট। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্র ও মঞ্চ উভয় ক্ষেত্রেই। আবার তাল মিলিয়ে করেছেন সাংবাদিকের কাজও। সব মিলিয়ে বহুমুখী এক প্রতিভা ছিলেন পুরুষোত্তম দেশপাণ্ডে। পরিচিত ছিলেন ‘মহারাষ্ট্রের প্রিয় ব্যক্তি’ হিসাবে।

মুম্বাইয়ের চৌপাঠি গাম্ভেদি স্ট্রীটের বাড়িতে জন্ম ১৯১৯ সালে। তবে ঠিকানা বদল হয়েছিল বছর আষ্টেক বয়সেই। সদ্য নির্মিত সরস্বতী বাগ কলোনিতে উঠে যাওয়া তখন। নতুন পরিবেশ, নতুন মুখ, নতুন চরিত্রদের তিনি পরবর্তীকালে লিপিবদ্ধ করেছিলেন প্রথম বই ‘পুরচুন্দি’-তে। তারপর আবার বাসা বদল। অনটন লেগেই ছিল সংসারে। বাবা ছিলেন আদভানি পেপার মিলের সামান্য দৈনিক বেতনভুক কর্মী। মাস গেলে বাড়িতে আসত মাত্র ১৫০ টাকা। তা দিয়েই কোনোভাবে চলত সংসার। 

মুম্বাইতে সরকারি আইন কলেজ থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। তবে ব্যক্তিগত অনুপ্রেরণা ছিল দাদু বমন মঙ্গেশ দুবাশি। যিনি ছিলেন একজন মারাঠি কবি ও সাহিত্যিক। অনুবাদ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি। দাদুর সঙ্গে থাকতে থাকতেই ভালোবেসে ফেলেছিলেন সাহিত্যকে। পেয়েছিলেন সৃষ্টির স্বাদ। তারপরও কি আর আইনী জীবন কাটানো যায়? এলএলবি শেষ হল, তবে আর আদালত চত্বরে পা রাখলেন না পুরুষোত্তম দেশপাণ্ডে। বদলে ঠিকানা হল পুনের ফার্গুসন কলেজ। ভাষা নিয়ে প্রথমে স্নাতক ও পরে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করলেন তিনি। তারপর ভাস্কর সঙ্গীতালয় থেকে নিলেন হারমোনিয়ামের শিক্ষা।

আরও পড়ুন
ভিডিও কলে শনাক্ত করা যাবে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজও, অভিনব প্রযুক্তি গুগলের

আরও পড়ুন
গুগলের ডুডলে ভারতীয় নৃত্যশিল্পীর মুখ, অভিনয়েও জিতেছেন অজস্র মানুষের মন

একদিকে যেমন সঙ্গীত আর অভিনয় জীবন ছিল। তেমনই অন্যদিকে তাল মিলিয়েই ওরিয়েন্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। রানী পার্বতী দেবী কলেজে অধ্যাপনাও করেছেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সদ্য প্রতিষ্ঠিত দূরদর্শনের হয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর। উল্লেখ্য জওহরলাল নেহরুর প্রথম টেলিভিশন ইন্টারভিউ ছিল সেটিই। জওহরলাল নেহরুর দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারের নেপথ্যেও ছিলেন তিনি। তবে তা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নয়, বিবিসির হয়ে নিয়েছিলেন পুরুষোত্তম দেশপাণ্ডে। 

আরও পড়ুন
বয়স মাত্র ১০, উত্তরবঙ্গের কিশোরের তৈরি একাধিক অ্যাপকে স্বীকৃতি গুগলের

এর পর দীর্ঘ সময় ফ্রান্স এবং জার্মানিতে কাটিয়েছেন তিনি। লিখেছেন এই পরিযায়ী জীবন নিয়ে ট্রাভেলগ ‘অপুর্ভাই’। 

পুরুষোত্তম দেশপাণ্ডের লেখায় বার বার ধরা পড়েছে স্যাটায়ার আর হিউমর। নিজের বই হোক কিংবা সিনেমার স্ক্রিন-প্লে সব জায়গাতেই ছড়িয়েছিলেন হালকা চালের মজা। গাম্ভীর্যপূর্ণ কোনো বিষয়কেও সহজ করেই উপস্থাপনা করেছেন তিনি। কাজ করেছেন একাধিক মারাঠি সিনেমায় সুরকার হিসাবেও।

প্রথম বিবাহের কয়েকদিনের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছিল স্ত্রীয়ের। দ্বিতীয় বিবাহ করলেও সন্তান নেননি তিনি। বরং নিজের সন্তানের মতো করেই মানুষ করেছেন ভাইপো দীনেশ ঠাকুরকে। দ্বিতীয় স্ত্রী সুনিতা ঠাকুরও ছিলেন একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিক। শেষ বয়স অবধি একইসঙ্গে চলেছে দু’জনের সাহিত্যচর্চা, রোমাঞ্চকর জীবন। 

২০০০ সালে বিবাহবার্ষিকীতেই প্রয়াত হন পুরুষোত্তম দেশপাণ্ডে। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই পার্কিনসন রোগে ভুগেছেন শেষ বয়সে। তবে মৃত্যুর ২০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আজ একইভাবে স্মরণীয় তিনি। তাঁর লিখে যাওয়া অসংখ্য বই মারাঠি সাহিত্যে গুরুত্ব হারায়নি এতটুকুও। বরং ইংরাজি-সহ বেশ কয়েকটি ভাষাতে অনুবাদ হয়েছে সেগুলি। ১০১তম জন্মবার্ষিকীতে বহুমুখী সেই অবাক করা চরিত্রকেই আরও একবার ফিরে দেখাল গুগল। মনে করিয়ে দিল এখনও ভীষণরকমভাবেই তিনি বেঁচে রয়েছেন ভারতের বুকে। নিজের সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে...

Powered by Froala Editor

Latest News See More