বৃষ্টি থেকে রক্ষার নামে বদলে গেল গ্লেনারিসের চেহারা, ক্ষুব্ধ দার্জিলিংপ্রেমীরা

দার্জিলিং মানেই রোদ, বৃষ্টি আর পাহাড়ের সালতামামি। আঁকাবাঁকা পথ ধরে হেঁটে যাওয়া ম্যালের ভিতর। কিংবা কোনো শীতল দুপুরে এক কাপ গরম চা নিয়ে বসা গ্লেনারিসের ব্যালকনির কাঠের চেয়ারে। হ্যাঁ, এভাবেই গ্লেনারিস জড়িয়ে বাঙালি নস্টালজিয়ার সঙ্গে। কিন্তু এবার বদলে গেল গ্লেনারিসের সেই চিরপরিচিত চেহারাই। গ্লেনারিসের ব্যালকনি থেকে আগের মতো আর উন্মুক্ত আকাশ পাবেন না ক্রেতারা।

এই মাত্র রোদ্দুর খেলে বেড়াচ্ছে পাহাড়ের গায়ে। আর পরক্ষণেই ভেসে আসা মেঘ ঢেকে দিচ্ছে শহরকে কুয়াশার মাফলারে। ঝিরি ঝিরি দু’পশলা ঢেলে যাচ্ছে হিমশীতল মেঘের দল। দার্জিলিংয়ের প্রাকৃতিক চরিত্র এমনই অনিশ্চিত। আর সেই ‘অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার’ থেকেই ক্রেতাদের সুরক্ষিত করতে এবার বদলের সিদ্ধান্ত নিল গ্লেনারিস কর্তৃপক্ষ। খোলা ব্যালকনির কোল ঘেঁষে বসে গেল কাঁচের দেয়াল, মাথার ওপরে স্বচ্ছ ছাদ। এবার থেকে আর চা বা কফিতে চুমুক দিতে দিতেই স্পর্শ করা যাবে না প্রকৃতির হাতছানিকে।

দার্জিলিং সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বহু প্রাচীন ব্রিটিশ কলোনির ইতিহাস। মনোরম পরিবেশে ইংরেজরা এই ছোট্ট পাহাড়ি শহরে তৈরি করে নিয়েছিল একটুকরো লন্ডন। উনিশ শতকের গোড়ার দিকেই সেখানে গোড়াপত্তন হয় গ্লেনারিসের। বছর গড়িয়েছে, শেষ হয়েছে ভারতে ব্রিটিশ শাসনও। তবুও আজ শতাব্দী পেরিয়ে অমলিন গ্লেনারিসের ঐতিহ্যবাহী আভিজাত্য। ঢুকলেই লাল টেলিফোন বুথ থেকে শুরু করে, সাজসজ্জা একঝটকায় মানুষকে নিয়ে গিয়ে ফেলে পশ্চিমী আবহে।

গ্লেনারিসের এই পরিবর্তনে ক্ষুব্ধ দার্জিলিংপ্রেমীদের একাংশ। “আমরা যারা বার বার দার্জিলিং যাওয়ার সুযোগ করে নিই, তাদের কাছে দার্জিলিং-এর কিছু চিহ্ন রয়েছে। তেমনই গ্লেনারিসেরও একটা ছবি মাথায় ছিল এতদিন। ফলে সেই জায়গাটাতে ধাক্কা তো লাগবেই। কাল যদি শুনি ইডেন গার্ডেনটা বদলে গেছে, যেমনটা লাগবে, এক্ষেত্রেও মনে হচ্ছে তেমনই”, জানালেন লেখক-সাংবাদিক অর্ক দেব। 

আরও পড়ুন
দার্জিলিং-এ শিক্ষকতা করতেন বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ; পাহাড়ের বুকেই নতুন করে চেনা জীবনকে?

তবে গ্লেনারিসের ওপরে তলা এখনও বদলে যায়নি। সেখানে নিয়ম করেই চলছে গান-বাজনা, পুরনো মেজাজেই। ফলে একেবারে আশাহত হচ্ছেন না দার্জিলিংপ্রেমীদের কেউ কেউ। খানিকটা হলেও তো সেই রাজকীয়তাটা থাকল। 

গত কয়েকবছরে পাল্টে গেছে দার্জিলিং-এর অনেক কিছুই। ঘিঞ্জি জনবসতি হয়ে ওঠার পাশাপাশিই পুরনো ঐতিহ্যকেও একটু একটু করে বদলে আধুনিক করে তোলার চেষ্টা চলছে পাহাড়ি শহরজুড়ে। বছর খানেক আগে দার্জিলিংয়েরই আরেক বিখ্যাত রেস্তোরাঁ ‘পার্ক’-এও বদল এসেছিল অপ্রত্যাশিতভাবেই। বদলে গেছিল তার আইকনিক মৌতাত মাখানো চেহারা। এবার সেই পথেই হাঁটল গ্লেনারিস। আর কী কী বদলে যাবে প্রিয় শহরে? এই চিন্তাতেই খানিকটা মুষড়ে রয়েছেন দার্জিলিং-পিয়াসীরা...

আরও পড়ুন
১ জুলাই থেকেই পর্যটকদের জন্য খুলে যাচ্ছে দার্জিলিং-দিঘা

Powered by Froala Editor