বাকিরা চলে গিয়েছেন আগেই, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম শেষ সৈনিক কার্তিকচন্দ্র দত্ত

’৪২-এর আন্দোলন শুরু হতে তখনও মাস খানেক বাকি। ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে বৃহত্তর প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য তখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে গোটা বাংলা। সেইসময় এপার বাংলা থেকে পূর্ববঙ্গে গোপন চিঠি চালানের দায়িত্ব পড়েছিল তাঁর ওপরেই। ঢাকার জমিদার চন্দ্রকান্ত ভূষণ রায়চৌধুরীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে সেই চিঠি। কংগ্রেসি নেতা বেহরাজ খানের দেওয়া সেই দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন তিনি। তবে কলকাতায় ফেরার আগেই ভারত ছাড়োর ডাক দেন গান্ধীজি। না, আর ফেরা হয়নি তাঁর। পূর্ববঙ্গে থেকেই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন তিনি। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ঢাকার গান্ধী ময়দান থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হয় ব্রিটিশ পুলিশের হাতে। জেলও খাটতে হয় কয়েক বছর।

কার্তিকচন্দ্র দত্ত। ব্রিটিশদের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার স্বপ্ন নিয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করেই তিনি লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন অকুতোভয়ে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে এবার রাষ্ট্রপতি ভবনে আমন্ত্রিত হলেন ৯৮ বছর বয়সী এই স্বাধীনতা সংগ্রামী। প্রতি বছরের মতো, গত ৯ আগস্ট দিল্লি থেকে বিশেষ স্মারক সম্মাননাও পাঠানো হয় তাঁকে।

দীর্ঘ আট দশক কলকাতার কসবায় বসবাস করলেও, কার্তিকচন্দ্র দত্তের আদি বাড়ি অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। ছাত্রাবস্থা থেকেই বিপ্লবী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। শুরুটা হয়েছিল সশস্ত্র বিপ্লবের হাত ধরেই। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ময়মনসিংহের বাড়িতেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন কার্তিক চন্দ্র দত্ত। তবে ব্রিটিশ গুপ্তচরদের কাছে পৌঁছে যায় সেই তথ্যও। সামান্য কিছু খাবার আর অর্থ নিয়ে রাতের অন্ধকারেই এপার বাংলায় পালিয়ে আসেন তিনি। সঙ্গে ছিল পিস্তল।

তবে কার্তিকবাবু একা নন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে কার্তিকবাবুরা তিন ভাই-ই জড়িত ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে। অবশ্য বড়ো ও মেজোভাই ছিলেন অহিংস কংগ্রেসি আন্দোলনের সমর্থক। স্বাধীনতার আগেই ময়মনসিংহ ছেড়ে কলকাতার কসবায় উঠে এসেছিল দত্ত পরিবার। দাদাদের সূত্রেই সেসময় বাড়িতে লেগে থাকত কংগ্রেসি নেতাদের আনাগোনা। ধীরে ধীরে চরমপন্থী মনোভাব থেকে গান্ধীজির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন কার্তিক চন্দ্র। তারপর থেকে দাদা এবং বন্ধুদের সঙ্গে জোট বেঁধে কংগ্রেসের মিটিং মিছিলে হাজির হওয়া নিয়মিতভাবে। 

আরও পড়ুন
স্বাধীনতাকামী নামিবিয়ায় নির্মম গণহত্যা, শতাব্দী পেরিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা জার্মানির

তবে সেইসব লড়াকু দিনের স্মৃতি প্রায় সম্পূর্ণভাবেই কেড়ে নিয়েছে বার্ধক্যজনিত অসুখ। মাস কয়েক আগে ম্যাসিভ স্ট্রোকেও আক্রান্ত হয়েছেন কার্তিকবাবু। শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি কোভিড পরিস্থিতির কারণেও রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়া সম্ভব হবে না বলেই জানাচ্ছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তবে, শেষ বয়সে এসে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেয়ে যারপরনাই আপ্লুত নবতিপর স্বাধীনতা সংগ্রামী…

আরও পড়ুন
স্বাধীনতার বছরেই বিলুপ্ত এশিয়াটিক চিতা, আনা হচ্ছে আফ্রিকা থেকে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন সংরক্ষণ ব্যবস্থা, প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের