স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন সংরক্ষণ ব্যবস্থা, প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের

সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে এবার প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। স্বাধীনতার সাত দশক পরেও কেন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ফুরোয়নি, এবার সেই প্রশ্নই তুললেন বিচারপতি অশোক ভূষণের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। মারাঠা সংরক্ষণ বিষয়ক মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই উঠেছে এই প্রশ্ন। তবে সুপ্রিম কোর্টের বাইরে এই নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। আর সেই বিতর্ককেই আরও উস্কে দিচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

শুনানিতে ‘পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়’ শব্দটির নতুন সংজ্ঞা খোঁজার কথাও বললেন আইনজীবী মুকুল রোহাতগি। তাঁর মতে মন্ডল কমিশন যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল, তা ১৯৩১ সালের জনগণনার উপর নির্ভর করে। তার পরে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার নানা পরিবর্তন ঘটেছে। এই সময় সংরক্ষণ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে গেলে বর্তমান সময় সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা উচিৎ।

এই প্রশ্নে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকেও বিদ্ধ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের ৫০ শতাংশ বৈষম্যের ধরণ সম্পর্কে সরকারের কোনো ধারণাই নেই, এমনটাই মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। এই বিষয়ে রাজ্য সরকারগুলিকে উপযুক্ত তথ্য সংগ্রহের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমানে জাতি বৈষম্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিৎ। আর সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বরাদ্দ সুবিধার ১০ শতাংশ যেন অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কাছেও পৌঁছয়, সেই দিকটিও বিবেচনা করতে বললেন।

তবে শিক্ষা বা শিল্পের মতো বিষয়গুলি যেহেতু কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ তালিকার বিষয়, তাই এই দুই ক্ষেত্রে সংরক্ষণের বদলে যাওয়া চেহারা কেমন হবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যে আর্থ-সামাজিক অবস্থা আলাদা। সেক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকার কোন পথে হাঁটবে, তা স্পষ্ট নয়। উল্টদিকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে সংরক্ষণ বিষয়ে নানা ধরণের প্রশ্ন ওঠায় অনেকেই মনে করছেন সরকার সংরক্ষণের বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে পারে।

অন্যদিকে মারাঠা সংরক্ষণের বিষয়ে বিচারপতি অশোক ভূষণ জানিয়েছেন, মারাঠা জাতি কোনোদিনই সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় ছিল না। এখনও নয়। সামাজিক কাঠামোয় মারাঠারা সবসময় সুবিধা পেয়ে এসেছেন। ফলে মারাঠা সংরক্ষণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তবে স্বাধীনতার সাত দশক পর এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার কথা কেন উঠছে, সেই প্রশ্নই তুলেছেন বিচারপতি। সংরক্ষণ কোনো বিশেষ সুবিধা নয়, বরং সামাজিক বৈষম্য দূর করার একটি পথ, এমনটাই মত সুপ্রিম কোর্টের।

Powered by Froala Editor