সাংকেতিক ভাষায় অনূদিত হচ্ছে ২০০০ বছরের প্রাচীন সাহিত্য!

সাম্প্রতিক সময়ে সাংকেতিক ভাষা নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। গান থেকে শুরু করে সাহিত্য, গবেষণাপত্র— বিভিন্ন লিখিত নথিকে সাংকেতিক ভাষায় (Sign Language) অনূদিত করার প্রকল্প চলছে গোটা বিশ্বজুড়েই। এমনকি ভারত-সহ একাধিক দেশে দাবি উঠেছে, বাধ্যতামূলকভাবেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাংকেতিক ভাষার পাঠ দেওয়া উচিত সকলকেই। এর মধ্যেই এবার নতুন নজির গড়ল ব্রিটেন। সাম্প্রতিক কিংবা মধ্যযুগীয় সাহিত্য নয়, আজ থেকে ২০০০ বছরের প্রাচীন সাহিত্যকে সাংকেতিক ভাষায় অনুবাদের প্রকল্প শুরু হল সেখানে।

কোন সাহিত্যকে নিয়ে শুরু হয়েছে এই প্রকল্প? এতক্ষণে অনেকেই আন্দাজ করতে পেরেছেন তার নাম। বাইবেল (Bible)। লন্ডনের একটি খ্রিস্টান স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, একদল গবেষক তত্ত্বাবধানেই চলছে এই অনুবাদের কাজ। তবে এই প্রকল্পের অন্যতম কাণ্ডারি লিভারপুলের বধির যাজক ডঃ হান্না লুইস। ব্রিটেনের মূক ও বধির সমাজে দীর্ঘদিন ধরেই খ্রিস্টধর্মের প্রচার করে আসছেন হান্না। কিশোরকালে তাঁকে বাইবেল পড়তে হয়েছিল ছাপা বই দেখেই। সে-সময় থেকেই সাংকেতিক ভাষায় বাইবেলের অভাব অনুভব করতেন তিনি। পরবর্তীতে ধর্মপ্রচারের করার সময় সাংকেতিক বাইবেলের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে ভাবিয়ে তোলে তাঁকে। সেখানেই থেকে ‘প্রোজেক্ট বাইবেল’-এর যাত্রাপথের শুরু। 

অবশ্য এর আগেও সাংকেতিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে বাইবেলের কিছু বিশেষ বিশেষ অংশ। যা ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বাইবেলের পূর্ণ সাংকেতিক ভাষার সংস্করণ তৈরি হতে চলেছে এই প্রথম। 

তবে বিষয়টি শুনতে সহজ মনে হলেও, আদতে তেমনটা নয়। কারণ, বাইবেলের একাধিক ইংরাজি সংস্করণ ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বজুড়ে। আসলে গ্রিক ও হিব্রু— এই দুই ভাষা থেকে অনুবাদের সময় অনেকক্ষেত্রেই বদলে গেছে শব্দের ব্যবহার। অন্যদিকে সাংকেতিক ভাষা বা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শব্দমাফিক অনুবাদ করা হয় না কোনো সাহিত্যকে, বরং সাহিত্যে অন্তর্নিহিত মূল ভাবটিই প্রকাশিত হয় বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে। ফলে, বাইবেলের ইংরাজি অনুকরণের সঙ্গে প্রতিক্ষেত্রেই হিব্রু ও গ্রিক ভাষায় লেখা মূল সংস্করণের তুলনা করেই অনূদিত হচ্ছে এই সাংকেতিক বাইবেল। সবমিলিয়ে এই গবেষণা ও অনুবাদের কাজ চালাচ্ছেন ২০ জন ভাষা বিশেষজ্ঞ, দোভাষী ও ঐতিহাসিক। দিনপিছু এই প্রকল্পের জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় ১০০০ পাউন্ড। 

ইতিমধ্যেই মার্কের গসপেল এবং জেনেসিসের কিয়দাংশ অনূদিত হয়েছে সাংকেতিক ভাষায়। যা বর্তমানে উপলব্ধ অনলাইন ওয়েবসাইটে। বাইবেলের বাকি অংশ অনুবাদের কাজ চলছে পুরোদমে। আগামী দু-বছরের মধ্যেই সাংকেতিক ভাষায় রচিত গোটা বাইবেল ভিডিও-র মাধ্যমে ‘পড়তে’ পারবেন বধির পাঠকরা, সে-ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী হান্না…

Powered by Froala Editor

More From Author See More