বাংলার প্রথম বাণিজ্যিক গোলাপ, বাঁকুড়ার ফুলেই ভালোবাসার উদযাপন কলকাতায়

পেরিয়ে গেল আরও একটা ভ্যালেন্টাইন্স ডে। কলকাতা তো বটেই, সারা রাজ্যে এই একদিনে গোলাপের চাহিদা যেন আকাশ ছোঁয়। তবে এ-বছর ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র নতুন উপহার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এক নাছোড়বান্দা তরুণী। বাঁকুড়ার রুক্ষ মাটিতেই গোলাপের চাষ করবেন, এমনটাই স্বপ্ন ছিল তাঁর। আর সেই স্বপ্নকে সার্থক করে এবছর কলকাতার লেক মার্কেটসহ সমস্ত বাজার ছেয়ে গেল বাঁকুড়ার গোলাপে। ঠিক যেন ব্যাঙ্গালোর থেকে আসা ডাচ গোলাপ। তবে দামেও যেমন সস্তা তেমনই অনেক বেশি তরতাজা। ক্রেতাদের মধ্যেও তার চাহিদা বিপুল। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করে ছিলেন অন্তরা দাস।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী অন্তরা। কলেজ জীবন থেকেই তাঁর স্বপ্ন, কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন সম্ভাবনার দিক নিয়ে পরীক্ষা করবেন তিনি। ২০১৩-১৪ সাল নাগাদ সেই ইচ্ছা আরও জোরদার হয়ে ওঠে। ঠিক করে ফেললেন, গোলাপ চাষই হবে তাঁর প্রথম কাজ। এর মধ্যেই পুনে অঞ্চলে দেখলেন, আপাত রুক্ষ ল্যাটেরাইট মাটিতেও দিব্যি গোলাপ চাষ হচ্ছে। আর ছোটানাগপুরের মালভূমি যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানেও তো মাটির চরিত্র প্রায় একইরকম। যেমন ভাবনা, তেমনই শুরু হল কাজ। বাঁকুড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কেনা হল জমি।

বাঁকুড়ার এই গোলাপের বাণিজ্যিকিকরণের দায়িত্বে থাকা অরুণাভ পাত্র বললেন, “অন্তরার কথা শুনে প্রথমে আমি বেশ অবাকই হয়েছিলাম। এই শুষ্ক মাটিতে আবার গোলাপ চাষ হয় নাকি?” সন্দেহ ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের মনের মধ্যেও। কোনোদিন সেই মাটিতে ফসল ফলবে, এমন সম্ভাবনার কথা কেউ কল্পনাও করতেন না। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁরাই এগিয়ে এলেন বাগানের কাজে। আজ গাছের পরিচর্যা থেকে শুরু করে সবটাই করেন তাঁরা। অন্তরা দাসের কথায়, “স্থানীয় মানুষরা এগিয়ে না এলে এই প্রকল্প কোনোদিন সফল হতো না। এই বাগান তো আসলে ওদেরই।”

দেখতে দেখতে যখন ফুল ফোটার সময় এল। তখনই এসে পড়ল করোনা অতিমারী। যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ। কলকাতা থেকে গিয়ে বাগান দেখাশোনা আর সম্ভব নয়। তার মধ্যে অন্তরা দাস সন্তানসম্ভবা। পরিস্থিতি যখন একটু স্বাভাবিক হল, তখন বহুজাতিক সংস্থার চাকরি সামলেই বাগানের জন্য সময় খুঁজে নিলেন স্বামী অনীক পারিয়াল। এই স্বপ্ন যে আসলে দুজনেরই। সেই হার না মানা স্বপ্ন বাস্তব হয়ে উঠল অবশেষে। অন্তরা দাসের কথায়, “বাজারে কোনো প্রতিযোগিতার মুখে তেমনভাবে পড়তে হয়নি। তবে মূল চ্যালেঞ্জ ছিল বাগানের পরিচর্যা। বাংলায় বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষের উদাহরণ আগে নেই। ফলে কীভাবে এগোব, সেটা ঠিক করতে হয়েছে নানা পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমেই।” বাঁকুড়ার গোলাপ প্রমাণ করল, পাথরেও ফুল ফোটানো সম্ভব। আর এই স্বপ্ন পূরণের আনন্দের মধ্যেই অনীক-অন্তরার সংসারে জন্ম নিল আরও একটি প্রাণ। আগামীদিনের জীবনের এক শরিক, তাঁদের সদ্যজাত সন্তান।

আরও পড়ুন
এই প্রথমবার নির্দিষ্ট হবে গাছের মূল্য, আইন আনতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট

Powered by Froala Editor

More From Author See More