বিজ্ঞান, বিশেষ করে পদার্থবিদ্যার কথা বললে আমাদের যাঁদের নাম মাথায় আসে, তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে অবশ্যই থাকবেন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। যে সময় আইনস্টাইন একটার পর একটা আবিষ্কার করে যাচ্ছেন, আনছেন থিয়োরি অফ রিলেটিভিটির মতো বিষয়, সেইসময় আমাদের বাংলাও একদম বসে ছিল না। সেইসময় সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহার মতো পদার্থবিদরা নিজেদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে স্ট্যাটিস্টিক্স নিয়ে আস্তে আস্তে বিস্তৃতি ঘটাচ্ছেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ। বিজ্ঞানচর্চার এইরকম স্বর্ণযুগে দাঁড়িয়ে এই তিন বাঙালি বিজ্ঞানী বের করলেন একটি ইংরেজি অনুবাদ। কিসের অনুবাদ জানেন? আইনস্টাইন-মিনকোওস্কির গবেষণাপত্রের। যার বিষয় ছিল ‘দ্য প্রিন্সিপল অফ রিলেটিভিটি’।
১৯০৫ সালে আইনস্টাইন এবং মিনকোওস্কি এই মূল গবেষণাটি করেন। তখনই বিষয় হিসেবে উঠে আসে এই রিলেটিভিটি থিয়োরি বা আপেক্ষিকতাবাদ। তবে তাঁদের প্রকাশ করা এই গবেষণাপত্রটি ছিল জার্মান ভাষায়। বাংলায় বসে সেটাকেই অনুবাদের কথা ভাবলেন সত্যেন বসু এবং মেঘনাদ সাহা। ১৯২০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় এটি। প্রসঙ্গত, এটিই আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি থিয়োরির প্রথম ইংরেজি অনুবাদ। আর সেটাই করেছিলেন মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসুরা। আর এই অনুবাদেরই ভূমিকা লিখেছিলেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ। সেখানে তিনি বলছেন -
‘Ten years later, in 1905, we find Einstein declaring that “the ether will be proved to be superflous.” At first sight the revolution in scientific thought brought about in the course of a single decade appears to be almost too violent. A more careful even though a rapid review of the subject will, however, show how the Theory of Relativity gradually became a historical necessity.’
পরবর্তীকালে সত্যেন্দ্রনাথ বসু আর আইনস্টাইনের কাজের কথা তো আমরা সবাই জানি। আমরা জানি তাঁদের ‘বোস-আইনস্টাইন থিয়োরি’-এর সম্পর্কে। জানি ‘বোসন’ কণার নাম। এই সত্যেন্দ্রনাথ বসুই ১৯২৪-এর জুনে নিজের কাজের সম্পর্কে একটা লেখা পাঠান আইনস্টাইনকে। আইনস্টাইন তখনই মুগ্ধ হয়ে যান এই বাঙালি বিজ্ঞানীর মেধায়। এমনকি, তিনি নিজে সত্যেন বসুর পেপারটা অনুবাদ করে একটা জায়গায় ছাপতে দেন। চিঠিতে জানানও সেই কথা।