আড়ালে থাকতে বদলেছেন পদবিও, স্টারডম থেকে বহুদূরে দিনযাপন ব্র্যাডম্যানের ছেলের

আচ্ছা, ডন ব্র্যাডম্যান কি অবসর সময়ে ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে বেরোতেন? পরিবারের সঙ্গে কেমন ছিল সম্পর্ক? কী খেতে ভালোবাসতেন? অবসরের নেশা কী ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর নিশ্চই খুঁজেছেন। শুধু ব্র্যাডম্যান কেন, যেকোনো জগতের তারকাদের নিয়ে এমন হাজারটা প্রশ্ন থাকে আমাদের মনের মধ্যে। অনায়াসে ঢুকে পড়তে চাই তাঁদের একান্ত ব্যক্তিগত জীবনের অন্দরমহলে। আর এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কাছেও পৌঁছে যাই আমরা, সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা। কিন্তু না, অস্ট্রেলিয়ার এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানের জীবনের ব্যক্তিগত মুহূর্ত জানতে পারেননি কেউই। আত্মমগ্ন ব্যাটসম্যান নিজেও যেমন কোনোদিন কোনো ব্যক্তিগত প্রশ্নের উত্তর দেননি, তেমনই খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁর ছেলেক। তবে সবাই জানতেন, স্যার ব্র্যাডম্যানের একজন ছেলে আছেন। তাহলে কীভাবে আত্মগোপন করে ছিলেন তিনি? সেটাই একটা গল্প। স্পটলাইটের আড়ালে নিজের মতো করে বাঁচতে চাওয়ার গল্প।

কয়েক বছর আগে স্যার ব্র্যাডম্যানের স্মৃতিতে আয়োজিত একটি স্মরণসভায় তাঁর ছেলেকে দেখা যায়। সেটা হিল নিছক একটা ঘরোয়া স্মরণসভা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমের কাছে রাতারাতি খবর পৌঁছে যায়। আর এরপরেই সবাই অবাক হয়ে যান। কেন? কারণ ডন ব্র্যাডম্যানের ছেলে জন ব্রাডম্যান আত্মগোপনের জন্য বেছে নিয়েছেন এক অভিনব পদ্ধতি। তিনি নিজের পদবিই বদলে নিয়েছেন। জন ব্র্যাডম্যান নামে কারোর কোনো অস্তিত্ব নেই। ১৯৭২ সাল থেকে তাঁর নাম জন ব্র্যাডসেন। 

এরপর একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কোনোরকম ইন্টারভিউ তিনি দেবেন না। নিজের পরিচয় অস্বীকার না করেই তিনি জানিয়ে দেন, স্যার ব্র্যাডম্যানের সম্বন্ধে কোনো কথাই তিনি বলতে পারবেন না। কারণ তিনি একজন স্বতন্ত্র মানুষ। বলতে হলে নিজের সম্বন্ধে বলতে পারেন। তবে কথায় কথায় অনেক কথাই সেদিন তিনি বলেছিলেন। বলেছিলেন তাঁর পদবি পরিবর্তনের কথা যখন বাবাকে জানিয়েছিলেন, তখন তিনি সাগ্রহে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তিনি বুঝতেন, লাইমলাইটের বাইরে নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার প্রতিটা মানুষের থাকা উচিৎ।

জন নিজেও ছোটো থেকেই ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসতেন। চাইলে তিনিও ব্র্যাডম্যানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাইশ গজে রাজত্ব করতে পারতেন। কিন্তু তাহলে আর আত্মগোপন করা যেত না। তাই পেশা হিসাবে বেহে নিলেন শিক্ষকতাকে। অ্যাডিলেড ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন তিনি। সেখানেও অধিকাংশ সহকর্মী এবং ছাত্রছাত্রীই তাঁর পিতৃপরিচয় জানেন না। কিন্তু তাঁর নিজেরও তো একটা পরিচয় আছে। জন মনে করেন, মানুষকে তাঁর নিজের পরিচয়েই চেনা যায়। তিনি যদি তাঁর বাবার পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকতেন, সেটা হয়তো ব্র্যাডম্যানের জন্য খুব একটা সম্মানের হতো না। কিন্তু তিনি দেখে যেতে পেরেছেন, তাঁর ছেলে নিজের যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। আর এখানেই তো তাঁর পিতৃত্বের সার্থকতা।

ব্র্যাডম্যান-ব্র্যাডসেনের এই কাহিনি আমাদের বুঝিয়ে দেয়, মানুষের ব্যক্তিগত জীবন তাঁর ব্যক্তিগতই থাকা উচিৎ। খেলাধুলো হোক বা শিল্প-সাহিত্য-বিনোদন, তারকারা নিজেদের পেশা হিসাবে সেই জগতকে বেছে নিয়েছেন। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের সেতু তাঁদের কাছে সেটুকুই। এর বাইরে জীবনে নিজের মতো করে বেঁচে থাকার অধিকারও তাঁদের সমানভাবেই আছে, যেমন আছে একজন সাধারণ মানুষের। যাঁর জীবনের কোনো মুহুর্তের খবরই কে রাখেন না।

তথ্য ঋণঃ দ্য টেলিগ্রাফ

আরও পড়ুন
‘আমাকেও একা করে রাখা হয়েছিল’, বর্ণবৈষম্যের প্রসঙ্গে মুখ খুললেন প্রাক্তন ক্রিকেটার এনতিনি

Powered by Froala Editor