শিশু দিবসের দিনেই ‘আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার’জয়ী দিল্লির ভ্রাতৃযুগল

সাম্প্রতিক সময়ে প্লাস্টিকজাত বর্জ্যের দূষণ নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে গোটা বিশ্বে। বিশেষ করে মহামারীর সময় একক ব্যবহারের প্লাস্টিকের দূষণ আকাশ ছুঁয়েছে। সমুদ্র কিংবা অন্যান্য অঞ্চল থেকে প্লাস্টিক অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হলেও, অধিকাংশ দেশেই সার্বিকভাবে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের বন্দোবস্ত নেই কোনো। বছর তিনেক আগের কথা। প্রশাসনিক পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা না করে, পরিস্থিতির মোকাবিলায় মাঠে নেমেছিলেন দিল্লির দুই কিশোর— বিহান ও নভ আগরওয়াল। বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে তাঁদের দেখানো পথকে এবার স্বীকৃতি জানাল আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘কিডস রাইট ফাউন্ডেশন’ (KidsRight Foundation)। ১৭ ও ১৪ বছর বয়সী দুই ভাইয়ের হাতে উঠল আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার (International Children's Peace Prize)।

২০১৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার জন্য এই পুরস্কার পেয়েছিলেন গ্রেটা থুনবার্গ। গতবছর পুরস্কার পেয়েছিলেন মালালা ইউসুফজাইও। এবার সেই তালিকায় জুড়ল দুই ভারতীয় কিশোরের নাম। গতকাল শিশু দিবসের দিনই দিল্লির দুই ভাইয়ের হাতে শিশু শান্তি পুরস্কারের স্মারক তুলে দেন নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থী। ২০১৪ সালে যিনি মালালার সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন শান্তিতে। 

আজ থেকে বছর চারেক আগের কথা। ২০১৭ সালে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যায় গাজিপুরের ল্যান্ডফিল্ড সাইটে। ধ্বসের কারণে মৃত্যু হয় ২ ব্যক্তির। তাছাড়াও আবর্জনা ছড়িয়ে এক ধাক্কায় বেড়ে যায় দূষণের মাত্রা। পাশাপাশি গাজিপুরে হামেশাই লেগে থাকত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সব মিলিয়ে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিই ভাবিয়ে তুলেছিল আগরওয়াল ভ্রাতৃদ্বয়কে। 

তখন বিহানের বয়স ১৪ বছর, নভ-র বয়স ১১। ওইটুকু বয়সেই আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণে নেমেছিলেন  দুই ভাই। যেকোনো প্রকারে গাজিপুরের ল্যান্ডফিল সাইটে নতুন করে আবর্জনার পাহাড় জমা বন্ধ করাই ছিল তাঁদের মূল লক্ষ্য। সেই মতোই শুরু হয়েছিল কাজ। মাত্র ১৫টি বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ শুরু করেন নভ ও বিহান। সেখান থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য সামগ্রীকে বাছাই করে আলাদা করতেন তাঁরা নিজেরাই। 

আরও পড়ুন
কাছিম সংরক্ষণে দিশা দেখিয়ে আন্তর্জাতিক পুরস্কার ভারতীয় তরুণীর

তাঁদের তৈরি অলাভজনক সংস্থা ‘ওয়ান স্টেপ গ্রিনার’ এখন সুপরিচিত গোটা দিল্লির কাছেই। এখন তাঁদের পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত দিল্লির ১৫ হাজার আবসন, স্কুল এবং অফিস। বেড়েছে সাধারণ মানুষের সচেতনতাও। তবে তাঁদের এই উদ্যোগ কোনো স্থায়ী সমাধান নয় বলেই বিশ্বাস বিহানদের। একমাত্র এই মডেলকে হাতিয়ার করে প্রশাসন এগিয়ে আসলেই রেশ পড়বে বর্জ্যজাত দূষণে। 

আরও পড়ুন
পদ্ম পুরস্কারে সম্মানিত বাংলাদেশের দুই নাগরিক, এই প্রথম

তবে শুধুমাত্র আবর্জনাই নয়, একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের পক্ষেও গতকাল কিডসরাইটের মঞ্চ থেকে সরব হয়েছিলেন আগরওয়াল ভ্রাতৃদ্বয়। এদিন পরিবেশের জন্য সাধারণ মানুষকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান দিল্লির দুই ভাই। ভয়াবহ জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণের দিনেও ‘দূষণমুক্ত’ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাচ্ছে এভাবেই তরুণ প্রজন্ম…

আরও পড়ুন
সত্যজিৎ রায় নামাঙ্কিত চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে চলেছেন মার্টিন স্করসেস এবং ইসৎভান জাবো

Powered by Froala Editor