“বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা ব্যর্থ। এই পরিস্থিতিতে মানুষকেই মানুষের পাশে এগিয়ে আসতে হবে। আর নানা জায়গায় তরুণ প্রজন্ম নিজেদের মতো করে মানুষকে সাহায্যের চেষ্টাও করে চলেছেন। আমরাও সেই দায়িত্ববোধ থেকেই এগিয়ে এসেছি।” বলছিলেন তরুণ অভিনেতা ঋতব্রত মুখার্জি। ঋতব্রত নির্দেশিত ‘দেশের নামে’ নাটকের টিম থেকেই কোভিড আক্রান্ত মানুষদের সাহায্যের জন্য তৈরি হয়েছে একটি হেল্প ডেস্ক। আর সবচেয়ে বড়ো কথা, নাটকের সঙ্গে জড়িত ১৮ জনের মধ্যে ঋতব্রত সহ ১০ জন শিল্পী নিজেরাই কোভিড আক্রান্ত। বিগত প্রায় ১০ দিন ধরে আইসোলেশনে রয়েছেন তাঁরা। বাড়িতে বসেই রোগীদের কাছে ওষুধ, অক্সিজেন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নাটকের সহ নির্দেশক পুষণ দাশগুপ্ত জানালেন, “আমরা এখন অনেকটাই সুস্থ। বয়স কম, শারীরিক ক্ষমতা যথেষ্ট বেশি, ফলে অনেক তাড়াতাড়ি ভাইরাসের প্রকোপ কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। কিন্তু বহু মানুষ রীতিমতো সহায়হীন হয়ে পড়েছেন এই রোগের প্রভাবে। সামাজিক মাধ্যম খুললেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা চোখে পড়ছে। এই বাস্তবতাই আমাদের বাধ্য করল এগিয়ে আসতে।” সামাজিক মাধ্যমের সূত্রে তো বটেই, পরিচিত মানুষদের মাধ্যমেও পাশে থাকার বার্তা পৌঁছে দিতে চাইছেন তরুণ শিল্পীরা। মহামারী পরিস্থিতি মানুষের সামাজিক বন্ধনকেও অনেকটাই ভেঙে দিয়েছে। তার মধ্যেও মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইছেন কেউ কেউ। ‘ইউনিভার্সিটি ফ্রেইন্ডস ক্লাব’ নাট্যদলের সংগঠক তারক হালদার জানালেন, “মঙ্গলবার আমরা সবাই মিলে ঠিক করি এই কাজ শুরু করবো। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ৪০০ জন মানুষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কেউ ওষুধ পাচ্ছেন না, কেউ অক্সিজেন পাচ্ছেন না। অক্সিজেনের চাহিদার কথা তো আলাদা করে বলার কিছু নেই। তবে আমরা শুধুই প্রয়োজনীয় তথ্যটুকু দিয়েই দায়িত্ব শেষ মনে করছি না। বরং ব্যক্তিগত স্তরে যোগাযোগ রেখে চলেছি ক্রমাগত। সময় অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নিয়েছি। আবার কখনো দলের ১৮ জন একসঙ্গেই কাজ করে যাচ্ছি।”
সামাজিক মাধ্যম এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ক্রমাগত ওষুধ, অক্সিজেন, হাসপাতালের বেড সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে চলেছেন ‘দেশের নামে’ নাটকের কলাকুশলীরা। কোথাও আইসোলেশনে থাকা মানুষ খাবার পাচ্ছেন না। তাঁদের দুবেলা খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। “তবে এখানেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। কারণ মহামারী পরিস্থিতি আমাদের একাকিত্বের প্রকৃত চেহারা দেখিয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষরা সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে থাকছেন। ফোনে কিছুক্ষণ কথা বললে হয়তো তাঁরা খানিকটা স্বস্তি পাবেন। তাঁদের সেই একান্ত প্রয়োজনীয় মুহূর্তের সঙ্গী হয়ে উঠতেও বদ্ধ পরিকর আমরা। যেকোনো সময়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন তাঁরা।” জানালেন দলের সংগঠক তারক হালদার।
আরও পড়ুন
‘আমরা খেতে পেলে কোভিড-আক্রান্তরাও খেতে পাবেন’; লড়ছে বাঙালির রান্নাঘরও
আর ঋতব্রতর কথায়, “নির্বাচনের সময় তো বড়ো বড়ো রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রার্থীরা জেড ক্যাটাগরির সিকিওরিটি নিয়ে প্রচারে গিয়েছেন। প্রত্যেকের সঙ্গে সবসময় ঘুরেছেন অন্তত ৩০ জন মানুষ। কিন্তু এই মহামারী পরিস্থিতিতে তাঁরা কতটুকুই বা দায়িত্ব পালন করছেন? মানুষ সমস্তকিছু দেখতে পাচ্ছেন চোখের সামনে। তাঁদের কাছে অনুরোধ, এগুলো ভুলে যাবেন না। মানুষের বিপদে মানুষই পাশে এসে দাঁড়ায় বারবার। আমাদের সিনেমা জগতের যাঁরা ‘মানুষের জন্য কাজ করতে চাই’ বলে দলীয় পতাকার নিচে দাঁড়িয়েছেন, গত এক সপ্তাহের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তাঁরা সবাই নিশ্চুপ।” তবে এর মধ্যেও এমন মানবিক উদ্যোগগুলোই একসঙ্গে এই পরিস্থিতি পেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখায়। আর দেশের জরুরি পরিস্থিতিতে তো তরুণ প্রজন্মই হাল ধরেছে বারবার।
আরও পড়ুন
কোভিড-মোকাবিলায় ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার, যোগাযোগ বুনছে বাংলার তরুণ প্রজন্ম
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কোভিড-পরস্থিতি মোকাবিলায় হেল্পডেস্ক প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের