‘২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্ম নয়’, ক্রিসমাসের বিরোধিতা করেছিলেন ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানরাই!

করোনা পরিস্থিতিতেও ক্রিসমাসের সাজে সেজে উঠেছে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটা শহর। অবশ্য সামাজিক জমায়েতে এখনও বেশিরভাগ শহরেই নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। বিশেষ করে লন্ডন শহরে দ্বিতীয় তরঙ্গের সংক্রমণ শুরু হওয়ায় সতর্কতা একটু বেশিই। তবে এই পরিস্থিতিই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে বহু প্রাচীন একটি ইতিহাসকে। না, মহামারী নয়। সেই ইতিহাস আসলে একটি গৃহযুদ্ধের ইতিহাস। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে গৃহযুদ্ধের কারণেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ক্রিসমাসের উদযাপন।

সালটা ১৬৪৭। ইংল্যান্ডে গৃহযুদ্ধের সদ্য মীমাংসা হয়েছে। রাজা চার্লসকে বন্দি করে পার্লামেন্ট তার ক্ষমতা প্রয়োগ শুরু করেছে। আর সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টানদের উপর উৎপীড়ন। একে একে সমস্ত প্রোটেস্টান্ট গির্জা বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রোটেস্টানটদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপরেও নিষেধাজ্ঞা নামতে থাকে। আর এই সময়েই বন্ধ হয়ে যায় ক্রিসমাস অনুষ্ঠান।

আসলে ২৫শে ডিসেম্বর, এই দিনটাকে যিশুর জন্মদিন হিসাব মেনে নিতে রাজি ছিলেন না অনেকেই। বাইবেলে যীশুর জন্মদিনের কোনো উল্লেখ নেই। লুক ও ম্যাথিউর গসপেল অনুযায়ী বেথেলহেম শহরের যে বর্ণনা পাওয়া যায়, সেই বর্ণনা অনুসারে অধিকাংশ থিওজফিস্টের অনুমান বসন্তের মাঝামাঝি জন্মেছিলেন তিনি। কিন্তু পশ্চিম রোমের তথাকথিত ম্লেচ্ছ খ্রিস্টানদের মধ্যে বড়োদিনের সন্ধ্যা উদযাপনের তাগিদের পিছনে অন্য এক কারণ দেখতে পেয়েছিলেন নীতিবাগীশ খ্রিস্টানরা। রোমের প্রাচীন পেগান ধর্মের প্রভাব ছিল এই অনুষ্ঠানের মধ্যে। পেগান ধর্মের ‘স্যাটার্নেলিয়া’ উৎসবের যাবতীয় আচার-অনুষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায় বড়োদিনের কেক বিতরণ থেকে চিরহরিৎ বৃক্ষের সমারোহের মধ্যে।

১৬৪৭ এবং ১৬৪৮, পরপর দুবছর লন্ডন শহরে ক্রিসমাস অনুষ্ঠান বন্ধ থাকে। এমনকি এই সময় কোনো দোকান বন্ধ রাখা হলে সেই দোকান চিরকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল পার্লামেন্ট। শুধু লন্ডন শহর নয়, ইউরোপের নানা শহরে ক্রিসমাস নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে নানা সময়ে। ১৬৫৯ থেকে ১৬৮১ সাল পর্যন্ত ২২ বছর বোস্টন শহরে ক্রিসমাস উদযাপন নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি ক্রিসমাস অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য বহু মানুষকে জেলবন্দিও করা হয়।

তবে এত জটিলতার মধ্যেও ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে কোনোদিন বন্ধ হয়নি ক্রিসমাস অনুষ্ঠান। এবারেই প্রথম সেখানে বড়দিনের জমায়েত বন্ধ থাকছে। ক্রিসমাসকে কেন্দ্র করে এই পারস্পরিক চাপানউতোর চলেছিল প্রায় তিনশো বছর ধরে। ১৬৪৮ সালে রাজা চার্লস আবার ক্ষমতায় ফিরে এলে ক্রিসমাসের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। কিন্তু তখনও ছুটির দিন হিসাবে স্বীকৃতি পায়নি বড়োদিন। এমনকি ১৮৫৬ সালে ইংল্যান্ডের সরকারি ছুটির তালিকায় ক্রিসমাসের উল্লেখ থাকলেও বেশিরভাগ স্কুল-কলেজই খোলা থাকত। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি যেখানে বড়োদিনের ছুটির স্বীকৃতি দেয়, সেখানে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে এই সময় অনুপস্থিত থাকা ছিল গর্হিত অপরাধ। আজও অনেক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী মানুষ ক্রিসমাস অনুষ্ঠানে সামিল হন না। ব্যাপারটা ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে। আজ থেকে ৪০০ বছর আগে ‘নো ক্রিসমাস’ স্লোগান নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন কোনো খ্রিস্টধর্মবিরোধী সংগঠন নয়। সেদিন পথে নেমেছিলেন ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানরাই।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
গরিব শিশুদের খেলনা উপহার ৮০ বছরের বৃদ্ধের, বড়দিনের ‘সান্টাক্লজ’ তিনিই

More From Author See More