মৃত্যুর ৪৬৭ বছর পরেও দেহ প্রায় অবিকৃত, গোয়ায় শায়িত এই ‘অলৌকিক’ খ্রিস্টান সাধু

আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে জন্মেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তাঁর পা পড়েছিল এই দেশের মাটিতে। আজ অবশ্য তাঁর নামাঙ্কিত স্কুল, কলেজে ছেয়ে গেছে ভারত। এই বাংলাও তার বাইরে নেই। কথা হচ্ছে সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ারের প্রসঙ্গে। সংক্ষেপে বললে, সেন্ট জেভিয়ার। কিন্তু শুধু স্কুল, কলেজেই আটকে নেই তিনি। বরং ‘সশরীরে’ আজও রয়ে গেছেন এই ভারতের মাটিতে।

শুধু নামের ইতিহাস নয়, সেন্ট জেভিয়ারের শবদেহও বহু ইতিহাস পেরিয়ে আজও একইভাবে টিকে আছে। আর তা আছে এই দেশেই। গোয়ার ব্যাসিলিস্কা অফ বম জেসাসে। আজও বহু মানুষ একবার প্রায় ৪৭০ বছরের পুরনো পবিত্র মৃতদেহটিকে ছুঁয়ে দেখতে চায়। তাঁদের বিশ্বাস, এখনও অলক্ষ্যে থেকে আশীর্বাদ দিয়ে যাচ্ছেন সেন্ট জেভিয়ার।

সেন্ট-এর জীবনের কাহিনিও বড় অদ্ভুত। ১৫০৬ সালে স্পেনের বিত্তশালী এক পরিবারে জন্ম হয় ফ্রান্সিস জেভিয়ারের। আজও তাঁদের নিজস্ব কাসলটি রয়েছে সেখানে। মেধাবী ফ্রান্সিস পড়াশোনা শেষ করে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্তও হয়েছিলেন। কিন্তু মন ছিল মানুষের দিকে, তাদের দুঃখ কষ্ট দূর করার দিকেই বেশি মনোযোগ দিতেন তিনি। একসময় খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্যই বেরিয়ে পড়েন বাইরে। সেই সূত্রেই তাঁর পা পড়ে ভারতের মাটিতে। সালটা ১৫৪২। বছর ৩৫-এর ফ্রান্সিস জেভিয়ার এলেন গোয়ায়, পোপ তৃতীয় পলের প্রতিনিধি হয়ে। তারপর প্রাচ্যের মাটিতেই কাটে বাকি জীবন। আজও সেই ধারা বয়ে চলেছে।

১৫৫২ সাল। ডিসেম্বরেই মৃত্যু হয় জেভিয়ারের, মাত্র ৪৬ বছর বয়সে। উপস্থিত ছিলেন মাত্র দুজন, এক চীনা সাধু এবং প্রিয় শিষ্য অ্যান্টনি। সান-চুয়ান দ্বীপের এক নির্জন জায়গায় কেমন করে ছেড়ে যাবেন এই দেহ? চিন্তায় পড়লেন অ্যান্টনি। এলাকা থেকে চুন জোগাড় করে মৃতদেহটি ঢেকে তিনি ফিরে এলেন মালাক্কায়। তিন মাস পর, দেহ নিয়ে আসার জন্য লোক গেল সান-চুয়ানে। আর সেখানেই, তাজ্জব ব্যাপার! জেভিয়ারের দেহে এক ফোঁটাও পচন ধরেনি! তারপর মালাক্কায় নিয়ে এসে আবারও সমাধি দেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত গোয়ায় নিয়ে আসা হয় সেই দেহ। তখনও কিছুমাত্র পরিবর্তন হয়নি দেহটার!

সেই থেকে আজ পর্যন্ত, সেন্ট জেভিয়ারের দেহ রয়ে গেছে গোয়ার বম জেসাসে। মৃত্যুর প্রায় ৪৬৭ বছর পর, দেহ ততটা অবিকৃত নেই। অনেকটাই ভেঙেছে। তবে একেবারে লুপ্ত হয়েও যায়নি। অলৌকিক হলেও, ঘটনাটি সত্য। হয়ত সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় চার্চের তরফ থেকে। প্রতি দশ বছর অন্তর একবার জনসমক্ষে নিয়ে আসা হয় তাঁর কফিন। বিবর্ণ দেহে জড়িয়ে আছে পর্তুগালের রানী মারিয়া সোফিয়ার দেওয়া আচ্ছাদন। শুধু স্কুল কলেজ নয়, স্বয়ং নিজেও এত বছর ধরে উপস্থিত আছেন সেন্ট জেভিয়ার। মৃত থেকেও, ‘সশরীরে’ আশীর্বাদ দিয়ে যাচ্ছেন।