মানুষের মৌলিক অধিকার ‘সোনার পাথরবাটি’, আসল নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় সরকার!

গত দু’-তিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির সঙ্গে একপ্রকার সংঘাত হয়েই চলছে কেন্দ্রের। তথ্য-প্রযুক্তি আইন না মেনে চলছে ভারত থেকে ব্যবসা গোটাতে হবে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপ্লিকেশনকে— এমনটাই জানিয়েছিল কেন্দ্র। তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না তো? বারবার উঠে আসছিল এই প্রশ্নটাই। এবার তার উত্তর দিল কেন্দ্র। জানাল, কোনো মৌলিক অধিকারই চূড়ান্ত নয়। কেন্দ্রের এই বক্তব্য ঘিরেই নতুন করে দানা বাঁধতে শুরু করেছে বিতর্ক।

বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল হোয়াটসঅ্যাপের মামলা দিয়েই। সম্প্রতি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল হোয়াটসঅ্যাপ। বক্তব্য ছিল, সরকারের নতুন ডিজিটাল মিডিয়ার নিয়মাবলির কারণে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তায়। এবং সেই গোপনীয়তা রক্ষা করতেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারা। এই মামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবেই কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানান, কোনো মৌলিক অধিকারই চূড়ান্ত নয়। তার নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র সরকার। 

কেন্দ্রের তথ্য প্রযুক্তি আইনের অন্যতম শর্ত হল, সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর কিছু দেখলেই তা সরিয়ে ফেলতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটিকে। সেইসঙ্গে সরকারের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে হবে তাদের। রাষ্ট্রের সুরক্ষা, সার্বভৌমত্ব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষার করার জন্যই এই প্রচেষ্টা— এমনটাই জানাচ্ছে কেন্দ্র। একথা অস্বীকার করারও জায়গা নেই, এর আগে বহুবার সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ছড়িয়ে ভুয়ো খবর। তার জেরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষও বেঁধেছে কোথাও কোথাও। এই ধরনের ভুয়ো তথ্যের মূল প্রেরককে সনাক্ত করতেই এই পদক্ষেপ, এমনটাই সাফাই গেয়েছে কেন্দ্র। 

কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপেও এই তদারকি করতে গেলে, প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই অ্যাপটির ইউজার পলিসিই। তা হল ওয়ান-টু-ওয়ান এনক্রিপশন। অর্থাৎ, প্রেরক এবং গ্রাহকের বাইরে কোনো বার্তা পড়তে পারবে না কেউ-ই। কেন্দ্রের নিয়মানুযায়ী তদারকি করতে গেলে ভেঙে যাবে সেই পরিকাঠামোটাই। 

আরও পড়ুন
কেন্দ্রের শর্তে সম্মতি ফেসবুক-টুইটারের, শীঘ্রই কোপ পড়বে ব্যক্তিস্বাধীনতায়?

কিছুদিন আগেই এমনই প্রাইভেসি পলিসি এনেছিল ফেসবুকের অধীনস্থ সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপ। বলা হয়েছিল যাচাই করা হবে প্রেরকের প্রতিটি বার্তা। আর তারপরেই গোটা বিশ্বজুড়ে রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল তাদের। কোটি কোটি গ্রাহক হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন সিগনাল বা টেলিগ্রামকে। পৃথিবী দেখেছিল বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল পরিযায়ন। এবার সেই প্রেক্ষাপটেরই পুনরাবৃত্তি যেন। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ছাড়াও বার্তা যাচাইয়ের ক্ষমতা থাকছে সরকারের হাতে। সেইসঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান এনক্রিপশন তুলে নেওয়া হলে, থেকে যাবে হ্যাকিং-এর সম্ভাবনা। সার্বিকভাবে সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন ভারতের ৪০ কোটি গ্রাহক। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাধ্যম হওয়ায়, শুধুমাত্র ভারতের জন্য আলাদা করে গোপনীয়তা পরিকাঠামো গঠন করাও কার্যত অসম্ভব। প্রত্যুত্তরে কেন্দ্র জানিয়েছে, এর সমাধান খুঁজে বার করতে হবে হোয়াটসঅ্যাপকেই। 

আরও পড়ুন
সমকামীদের বিবাহ-সার্টিফিকেট নিয়ে তীর্যক মন্তব্য কেন্দ্রের, কোনদিকে এগচ্ছে ভারত?

তবে সরকারের সমালোচনার রেশ টানতেই এমন উদ্যোগ কেন্দ্রের— এমনটাই অভিমত বিরোধীপক্ষ ও আইনজীবীদের একাংশের। এমনকি সংবিধানকেও যে অস্বীকার করছে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত, উঠছে সেই অভিযোগও। প্রতিটি গ্রাহকের কথপোকথনের স্ক্রিনিংকে ‘আড়ি পাতা’ হিসাবেই দেখছেন তাঁরা। পাশাপাশি, কোন বার্তা জনস্বার্থের বিরুদ্ধাচরণ বলে ধরে নেওয়া হবে, সেটিরও কোনো স্পষ্ট হদিশ দেয়নি কেন্দ্র। কেন্দ্রের এই নতুন আইন লাগু হলে ‘ব্যক্তিগত’ কথাটিই যে অবলুপ্ত হবে শব্দকোষ থেকে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো… 

আরও পড়ুন
তুরস্কে ব্যবসা বাঁচাতে বাক্‌-স্বাধীনতায় ‘হস্তক্ষেপ’ ফেসবুকের

Powered by Froala Editor

Latest News See More