স্পেনের ঠিক উত্তর-পশ্চিমে জনবহুল গালিসিয়া প্রদেশ। ৬০০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে সেখানেই ছড়িয়ে রয়েছে সবুজ পাহাড় আর অরণ্য। রয়েছে ইনভার্নাদিয়েরো জাতীয় উদ্যান। বছর দুয়েক আগে সারা জঙ্গলে লাগানো হয়েছিল বেশ কিছু ক্যামেরা। চলছিল ‘মাউন্টেন অর ডেথ’ নামের একটি ডকুমেন্টরি সিনেমার শুটিং। প্রযোজক সংস্থা জেইটান ফিল্ম, বন্যপ্রাণীদের উপরে এই তথ্যচিত্রটি বানাচ্ছিল। কিন্তু মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির সন্ধান পেলেন তাঁরা। লেন্সের জালে ধরা দিল ব্রাউন বিয়ার। গত দেড়শো বছরে এই প্রথম দেখা গেল বিরল প্রজাতির প্রাণীটিকে।
পৃথিবীর বুক থেকে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে বনভূমি। ফলে বাস্তুহারা হচ্ছে হাজার হাজার বন্যপ্রাণী। সেভাবেই স্পেন থেকে প্রায় মুছে গিয়েছিল বাদামি ভাল্লুক। কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছিল ভাল্লুকের সংখ্যা। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৩-এ স্পেনে সংরক্ষিত প্রাণীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এই প্রজাতিকে। পরবর্তীকালে ব্রাউন বিয়ার সংরক্ষণে স্পেন এবং ফ্রান্স যৌথ উদ্যোগও নিয়েছিল। গত দু’দশকে স্লোভানিয়া থেকে আনা হয় বেশ কয়েকটি বাদামি ভাল্লুক।
রিকার্ডো প্রিয়েতো এবং টমাস পেরেজ, এই দুই ফরেস্ট রেঞ্জার উপদেষ্টার কাজে যুক্ত ছিলেন ওই প্রযোজক সংস্থায়। তাঁদের মতে, ভাল্লুকটির বয়স আনুমানিক তিন থেকে পাঁচ বছর। জানান, সম্ভবত গোটা শীতকালই ভাল্লুকটি অতিবাহিত করেছে ওই অরণ্যে। কাজেই নিকট ভবিষ্যতে ইনভার্নাদিয়েরো আবার বাসস্থান হয়ে উঠতে পারে এই বিরল প্রজাতির। এ ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী তাঁরা।
এই ঘটনার পাশাপাশি উত্তর-পশ্চিম ক্যাতালোনিয়ায় সম্প্রতি বেশ কিছু ঘোড়া, ছাগল এবং ভেড়া শিকার হয়েছিল কোনো হিংস্র পশুর। এই আক্রমণ যে বাদামি ভাল্লুকের, তা বন দপ্তরকে জানিয়েছিল স্থানীয় কৃষকেরা। আধিকারিকদের প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস হয়নি এই অলীক গল্পে। তবে বাদামি ভাল্লুকের ছবি প্রকাশ্যে আসায় উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। বন্যেরা বনে সুন্দর। ঠিক সেই কথা মেনেই, অরণ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে ভাল্লুকটিকে। বিপন্ন এই প্রাণীটির যাতে কোনোরকম ক্ষতি না হয়, অনুরোধ জানিয়েছে আঞ্চলিক মানুষেরাও।