কোভিডে অনাথ শিশুদের দুধ জোগাচ্ছেন কোয়েম্বাটোরের সিঙ্গল-মাদার

প্রায় দেড় বছর ধরে সারা পৃথিবীজুড়ে চলছে মৃত্যুমিছিল। বহু শিশু তাদের মাকে হারিয়েছে। কেউ হয়তো একেবারেই সদ্যোজাত। মায়ের বুকের দুধ ছাড়া কোনোকিছুই হজম করা সম্ভব নয় তার পক্ষে। তবে একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেই তারাও ফিরতে পারে সুস্থ জীবনে। মানুষের মধ্যে এই সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করতেই এগিয়ে এসেছেন কোয়েম্বাটোরের এক মা। স্তনদুগ্ধ নিয়ে দেশে প্রচলিত নানা গোঁড়ামি এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ৫ বছর ধরে লড়াই করে চলেছেন ডঃ এম ঐশ্বর্য। এই কোভিড পরিস্থিতিতে তাঁর কাজের গুরুত্ব বোঝা যাচ্ছে আরও গভীরভাবে।

২০১৬ সালে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন ডঃ এম ঐশ্বর্য। প্রথম মেয়ের বয়স তখন মাত্র সাড়ে তিন। এই সময় তিনি বুঝতে পারলেন তাঁকে  ঘিরে ধরেছে প্রসব-পরবর্তী অবসাদ। অন্যদিকে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটল কিছুদিনের মধ্যে। ফলে দুই সন্তানকে মানুষ করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব এসে পড়ল তাঁরই উপর। এই কঠিন পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়েননি ডঃ ঐশ্বর্য। নিজের অবসাদ ঘোচাতে কাজের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। আর সেই কাজ যেন আরও অনেক অসহায় মায়ের ও শিশুর সাহায্যে আসতে পারে, এটাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছিলেন, মা এবং শিশুর মানসিক ও শারীরিক প্রয়োজনের বিষয়ে উদাসীন সমাজ। বরং কোনো শিশুর যখন তখন খিদে পেলেও তা সমাজের কঠিন সংস্কারে আঘাত করে। আজও সামাজিক পরিসরে স্তন্যপানের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। আর প্রকাশ্যে শিশুকে স্তন্যপান করানো তো কল্পনাই করা যায় না। ঐশ্বর্য নিজেও এমন অনেক অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকেছেন।

এই সময়েই ঐশ্বর্য যুক্ত হলেন কোয়েম্বাটোর প্যারেন্টিং নেটওয়ার্কের সঙ্গে। মাতৃত্ব বিষয়ক যাবতীয় কুসংস্কারের সঙ্গে লড়াই করাই এই সংস্থার উদ্দেশ্য। সেইসঙ্গে ঐশ্বর্য গড়ে তুললেন একটি ব্রেস্ট মিল্ক নেটওয়ার্ক। যাতে কোনো মা তাঁর শরীরে তৈরি হওয়া বাড়তি দুধ কোনো মাতৃহারা শিশুকে দান করতে পারে। তবে কাজটা সহজ ছিল না। পদে পদে সামাজিক গোঁড়ামির শিকার হতে হয়েছে। সেইসঙ্গে চলছে সচেতনতা তৈরির কাজও। আজ অনেক মা সাহস করে এগিয়ে আসছেন বলেই জানিয়েছেন ডঃ ঐশ্বর্য। তাঁদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে তা পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতির মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে তবেই প্যাকেটজাত করা হয়। ডঃ ঐশ্বর্যের কথায়, এই সমাজ প্রকাশ্যে স্তন্যপানের বিরোধিতা করে। কিন্তু শিশু শরীরের পক্ষে অস্বাস্থ্যকর নানা বাজারচলতি বেবিফুড মুখে তুলে দিতে পারে অনায়াসে। দুধ দান করার মধ্যে সঙ্কোচের কিছু নেই, বা তা শরীরের ক্ষতিও করে না। এই বৈজ্ঞানিক তথ্য মনে রাখা আজ ভীষণ প্রয়োজন। এই সামান্য উদ্যোগই পারে বহু শিশুকে বেঁচে থাকার অধিকার ফিরিয়ে দিতে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পথশিশুদের মধ্যে দুধ বিতরণ, 'অন্য' শিবরাত্রি উদযাপন কলেজ পড়ুয়াদের