প্রতিদিন শতাধিক ক্ষুধার্ত শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন ‘বিপিন চাচি’

উত্তর প্রদেশের দক্ষিণতম জেলা সোনভদ্র। মূলত কৃষিকাজ এবং দিন-মজুরির ওপরেই নির্ভর করে এই জেলার বেশিরভাগ মানুষ। তবে ২০২০ সালে লকডাউন ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই বড়োসড়ো ধাক্কা খেয়েছে সোনভদ্রের অর্থনীতি। থাবা বসিয়েছে অনাহার এবং খাদ্যাভাব। দুবেলা খাবার জোটাও এখন একপ্রকার বিলাসিতা সেখানে। এই ভয়াবহ খাদ্য সংকটের দিনে সোনভদ্রের ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিপিন দেবী। 

কে এই বিপিন দেবী (Bipin Devi)? না, কোনো তারকা নন তিনি। তবে সোনভদ্রের কচিকাচাদের কাছে সাক্ষাৎ দেবদূত হয়ে উঠেছেন উত্তরপ্রদেশের এই প্রৌঢ়া। হ্যাঁ, গ্রামের শিশুরা যাতে কেউ অনাহারে না থাকে, সেটাই লক্ষ্য তাঁর। প্রতিদিন বেলা গড়ালেই নিজে ভাত-ডাল-তরকারি রান্না করে গাড়ি নিয়ে হাজির হন সোনভদ্রের গ্রামে গ্রামে। খাবার তুলে দেন ছোটো ছোটো শিশুদের মুখে। 

না, আজ নয়। লকডাউন শুরু দিন কয়েক পর থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর এই লড়াই। তবে মহামারীর প্রকোপ কমলেও অর্থনৈতিক হাল ফেরেনি গ্রামের। বহু পরিযায়ী শ্রমিক এখনও বসে আছেন ঘরে। তাই টানা দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে অক্লান্তভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন উত্তরপ্রদেশের এই পৌঢ়া। সবমিলিয়ে দিনে কমপক্ষে ১০০ জনের রান্না। সবটা নিজের হাতেই করেন বিপিন দেবী। তারপর গাড়িতে করে সেই খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। সঙ্গে থাকেন তাঁর স্বামী কাল্লু যাদব। ৭-৮টি গ্রাম ঘুরে খাবার বিতরণ করেন তাঁরা। বিপিন দেবীর এই মুভিং কিচেন বর্তমানে গোটা জেলায় পরিচিত ‘চাচি কি রসোই’ (Chachi Ki Rasoi) নামেই।

সোনভদ্রের রাজপুর গ্রামে একটি রেশনের দোকান রয়েছে বিপিন দেবী ও কাল্লু যাদবের। তবে মহামারী, লকডাউনের বাজারে আয় কমেছে অনেকটাই। অবশ্য তাতে বিচলিত নন বিপিন দেবী। দু’বেলা ভাত তো জুটছে। কিন্তু যাঁদের সেটুকুও সামর্থ্য নেই? তাই লভ্যাংশের বেশির ভাগটাই তিনি তুলে রাখেন এই বিপুল কর্মকাণ্ডের জন্য। উত্তরপ্রদেশের ‘বিপিন চাচি’-র গল্প ছড়িয়ে পড়তে অনেকে পাশে দাঁড়িয়েছেন ঠিকই, তবে আর্থিক সাহায্য না পেলেও যাতে এই প্রকল্প স্বচ্ছলভাবে চলতে পারে আগামীদিনে, সেটাই একমাত্র লক্ষ্য তাঁর…

আরও পড়ুন
আহমেদাবাদে অভুক্তদের মুখে খাবার তুলে দিতে ‘মঞ্জুবা কি রসোই’

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দুঃস্থ ফুটপাথবাসীদের মুখে খাবার যোগাচ্ছে রাঁচির রুটি ব্যাঙ্ক

More From Author See More