প্রিয় খাবার, আঁকা প্রচ্ছদে ‘সত্যজিৎময়’ ট্রাইব ক্যাফে

“চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি সত্যজিতের বাইরেও রয়েছেন এক অচেনা সত্যজিৎ। সিনেমা নিয়ে আলোচনার মাঝে সেগুলো নিয়ে চর্চা যেন কোথাও হারিয়ে যায়। আমরা তাঁর জন্মশতবর্ষে সেই অচেনা সত্যজিৎকে তুলে আনার চেষ্টা করেছি নিজের মতো করে।” বলছিলেন দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ অঞ্চলের ট্রাইব ক্যাফের কর্ণধার শিল্পা চক্রবর্তী। ছিমছাম সাজানো এই ক্যাফেজুড়ে এখন শুধুই সত্যজিৎ। জুলাই এবং আগস্ট মাস ধরে শিল্পী সত্যজিৎ রায়কে মনে রাখতে নানা রকম আয়োজন করেছে ট্রাইব ক্যাফে।

ট্রাইব ক্যাফের এই আয়োজনের সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ সত্যজিৎ রায়ের পছন্দের খাওয়া-দাওয়া। তার খানিকটা আভাস তো পাওয়া যায় তাঁর লেখার মধ্যেই। শিল্পা চক্রবর্তী বলছিলেন, “ওঁর অনেক লেখাতেই ঘুরেফিরে এসেছে দার্জিলিং-এর কথা। সেই অনুষঙ্গকে মাথায় রেখে আমরা রেখেছি বিশেষ একটি দার্জিলিং প্ল্যাটার।” এছাড়াও তাঁর বাকি পছন্দের খাবারের অনুসন্ধান করতে সাহায্য করেছেন পুত্র সন্দীপ রায় স্বয়ং। সিনেমার শুটিং-এর সময় চিকেন কাটলেট এবং চিকেন স্যান্ডউইচ না হলে চলত না তাঁর। সন্দীপ রায়ের কাছ থেকে এই তথ্য জানার পর ট্রাইব ক্যাফেতে শুরু হয়ে যায় কাটলেট এবং স্যান্ডউইচের আয়োজন। 

ক্যাফেটেরিয়ার মেনু বুকটি পর্যন্ত সত্যজিৎ রায়কে মাথায় রেখে বানানো। তাতে রয়েছে সন্দীপ রায়ের লেখা একটি চিঠি। রয়েছে প্রফেসর শঙ্কুর সমস্ত আবিষ্কারের একটি তালিকা। যেটি কসমস পত্রিকার জন্য প্রফেসর নিজেই তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তা কোথাও লিখে যাননি সত্যজিৎ। এখানেই শেষ নয়। মেনু বুকের মধ্যেই রয়েছে একটি গল্প, যাতে রহস্য সমাধানে নেমে পড়েছে ফেলুদা, প্রফেশর শঙ্কু এবং সত্যজিতের অন্যান্য চরিত্ররাও।

খাবারের আয়োজনের পাশাপাশি ট্রাইব ক্যাফের অন্যতম আকর্ষণ তার পোস্টার ডিসপ্লে। সারা বছরই নানা বিষয় নিয়ে পোস্টার সাজানো থাকে ক্যাফের দেয়ালে। এই দুমাস সেখানেও শুধুই সত্যজিৎ। তবে পোস্টার বলতে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার পোস্টার নয়। তার বদলে রয়েছে ‘এক্ষণ’ পত্রিকার জন্য সত্যজিতের আঁকা সমস্ত প্রচ্ছদ। রয়েছে তোপসের মিত্র থেকে বসু হয়ে ওঠা বা জটায়ুর বিবর্তনের হদিশও। এছাড়াও রয়েছে জটায়ুর লেখা উপন্যাসগুলির প্রচ্ছদ। এর মধ্যে দুটি এঁকেছিলেন সত্যজিৎ রায় নিজেই। আর বাকিগুলো এঁকেছেন ট্রাইব ক্যাফের সদস্যরাই। পোস্টার ডিসপ্লের মাধ্যমে ছোঁয়ার চেষ্টা হয়েছে সত্যজিতের বিজ্ঞানভাবনা এবং বিভিন্ন সায়েন্স ক্লাবের সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত।

পোস্টার ডিসপ্লে ছাড়াও এই সমস্ত সংগ্রহ কিনতে পাওয়া যাবে একটি বইয়ের আকারেও। তবে সেই মুদ্রিত বইয়ের অধিকাংশই ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গিয়েছে বলে জানালেন শিল্পা চক্রবর্তী। হাতে আর সামান্য কয়েকটা দিন। আগস্ট মাস শেষ হলেই ফুরোবে ‘অচেনা সত্যজিৎ’-এর আয়োজনও। তবে এর মধ্যেই ট্রাইব ক্যাফে তার উদ্দেশ্য পূরণে অনেকটাই সফল বলে মনে করছেন শিল্পা। তাঁর কথায়, “আমরা সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে প্রচুর তথ্য দিতে চাইনি। তথ্য তো মানুষের হাতের মুঠোয় রয়েছে। আমরা শুধু চেয়েছি সেই তথ্যগুলো এমনভাবে পৌঁছাক, মানুষ যেন সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে।” এই দুমাসে ক্যাফেতে আসা মানুষদের মধ্যে সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে আগ্রহ অনেকটাই বেড়েছে বলে মনে করছেন তিনি। আর শিল্পা চক্রবর্তীর কথায়, “আমাদের পরিতৃপ্তি এখানেই, সত্যজিৎ রায়ের শিল্পীসত্তাকে আমরা শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছি শৈল্পিক মাধ্যমেই।”

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More