স্বাভাবিক উপায়ে যখন কার্যসিদ্ধি হয় না, তখন নিজের ইষ্ট ও পরের অনিষ্টকল্পে অতিপ্রাকৃতের সাহায্য নেওয়া মানুষের আদিম অভ্যাস। সভ্যতার তুঙ্গে উত্তীর্ণ নাগরিক প্রতীচ্যভূমি থেকে তথাকথিত শিক্ষাদীক্ষাহীন আরণ্যক জনজাতি - কোনো সমাজেই এর ব্যতিক্রম নেই। প্রাচীন ইনকা সভ্যতা, প্রাচীন মিশর ও মধ্যপ্রাচ্য - সর্বত্র ছিল জাদুবিদ্যার চলন। আরব্যরজনীর ছত্রে ছত্রে রয়েছে ইন্দ্রজালবিদ্যার উল্লেখ। এমনকি বিদ্যাগর্বী ইউরোপবাসীও একদা ডাইনি সন্দেহে বহু নারীকে জীবন্ত দগ্ধ করেছে, যাঁদের মধ্যে উজ্জ্বলতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন জোয়ান অফ আর্ক। হালের হ্যারি পটার সিরিজের তুমুল লোকপ্রিয়তা এটাই প্রমাণ করে, আজ এই একবিংশ শতকেও বিশ্বব্যাপী মানবমনের গহন প্রদেশে সমানভাবে রয়ে গেছে অতিপ্রাকৃত গুপ্তবিদ্যার প্রতি আগ্রহ। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায় কত শত জ্যোতিষী ও তান্ত্রিকের বিজ্ঞাপন, যাঁদের কাছে মানুষ ছুটে যায় গ্রহরত্ন, কবচ প্রভৃতির মাধ্যমে বিপত্তারণের প্রত্যাশায়। ঝাঁ-চকচকে প্রযুক্তিতে মোড়া উত্তরাধুনিক সভ্যতাতেই যদি এই হাল, তাহলে প্রাগাধুনিক বিশ্বের সর্বত্র মানুষের এ ব্যাপারে ঠিক কতটা প্রত্যয় ছিল, তা আন্দাজ করা শক্ত নয়। আজ, বাংলার সংস্কৃতিতে আবহমান কাল ধরে বয়ে আসা জাদুচর্চার বিষয়ে দু-চার কথা বলব।
অতিপ্রাকৃত পদ্ধতিতে কার্যসিদ্ধির উপায় হিসাবে শাস্ত্র বলেছে তান্ত্রিক ষটকর্মের কথা। যোগিনীতন্ত্রমতে এই ষটকর্ম হল - শান্তি, বশ্য, স্তম্ভন, বিদ্বেষণ, উচ্চাটন ও মারণ। রোগ, কৃত্যা ও গ্রহদোষ নষ্ট করার প্রক্রিয়া হল শান্তিকর্ম, নামান্তরে স্বস্ত্যয়ন। লোকসমূহকে নিজের আজ্ঞাবহ করে তোলার উপায় হচ্ছে বশ্য বা বশীকরণ; সৈন্য, প্রতিবাদীর বাক্য, বাতাস, জল প্রভৃতির প্রবৃত্তিরোধকে বলা হয় স্তম্ভন। প্রীতিভাবযুক্ত মানুষদের মধ্যে বিদ্বেষ জাগানো যায় বিদ্বেষণ প্রক্রিয়ায়; প্রতিপক্ষকে তার গৃহ, গ্রাম, নগর এমনকী স্বদেশ থেকে উৎখাত করার উপায় হচ্ছে উচ্চাটন; আর প্রাণীদের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াই হলো মারণ। শান্তি ব্যতীত বাকি পাঁচটি ক্রিয়াকে বলা হয় অভিচার। তন্ত্রভেদে ষটকর্মের প্রকারভেদ ঘটে। যেমন, তন্ত্ররাজতন্ত্র অনুসারে ষটকর্মের নাম হচ্ছে রক্ষা, শান্তি, জয়, লাভ, নিগ্রহ ও নিধন। বশ্য বিদ্বেষণাদি এরই অন্তর্ভুক্ত। কেবল তন্ত্রেই নয়, অথর্ববেদ থেকেই চলে আসছে এই মারণ-উচ্চাটনাদির ক্রিয়াকর্ম।
'নৈষধচরিত', 'মালতীমাধব' প্রভৃতি সংস্কৃত কাব্যেও আছে ঐন্দ্রজালিক বিদ্যার কথা। বাংলার রাজা বল্লাল সেন ও তৎপুত্র লক্ষ্মণ সেনের যৌথ রচনা 'অদ্ভুতসাগর' গ্রন্থে অতিপ্রাকৃত বিদ্যার উল্লেখ পাওয়া যায়।
ষটকর্ম কিন্তু মোটেই সহজসাধ্য নয়। কৌলাবলীনির্ণয়ে বলা হয়েছে - রতি, বাণী, রমা, জ্যেষ্ঠা, দুর্গা ও কালী হলেন যথাক্রমে শান্ত্যাদি ষটকর্মের দেবতা, ক্রিয়ার প্রারম্ভে এঁদের পূজা কর্তব্য। তন্ত্ররাজতন্ত্রে বলা হয়েছে সাবধানবাণী - ধার্মিক ভূপতি, বদান্য ও নিত্যদয়ালু ব্যক্তি প্রভৃতির বিরুদ্ধে অভিচার অকর্তব্য, কারণ তা স্বয়ং প্রয়োগকর্তার প্রাণহানি ঘটাতে পারে। চোর, ক্রূরকর্মা ব্যক্তি, রাজঘাতক, নারী-অপহারক ইত্যাদির বিরুদ্ধে অভিচার প্রয়োগ করলে পাতকী হতে হয় না। তবে, অভিচারক্রিয়ার পরে, বিশেষত মারণকর্ম করলে, সাধকের প্রায়শ্চিত্তেরও বিধান দিয়েছে তন্ত্ররাজ।
আরও পড়ুন
তন্ত্রের মূল গ্রন্থের সঙ্গে মিল নেই তারানাথের গল্পের; আড়ালে কী বলতে চেয়েছেন বিভূতিভূষণ?
ষটকর্ম কি কেবল বহিঃশত্রু দমনের জন্য? তা নয়। উচ্চকোটির সাধক তাঁর অন্তরের কামক্রোধাদি ষড়রিপুকে দমন করবেন ষটকর্মের মাধ্যমে - এর ইঙ্গিতও তন্ত্রশাস্ত্রে সুস্পষ্ট। অর্থাৎ যথাযথ ষটকর্ম সাধকের অন্তরশুদ্ধি ঘটিয়ে তাঁকে এগিয়ে দেবে ব্রহ্মলাভের পথে।
বঙ্গভূমিতে ষটকর্মের চর্চা ছিল প্রবল। প্রকাশ্যে কিছু না করলেও, অনেক নারীই কার্যসিদ্ধির জন্য আভিচারিক ক্রিয়ায় অভ্যস্ত ছিলেন। বাংলার অনতিদূরে কামাখ্যা মায়ের মহাপীঠ কামরূপ ছিল এইরকম গুপ্তবিদ্যা চর্চার জন্য বিখ্যাত। জনশ্রুতি, কামরূপের মেয়েরা নাকি যে কোনও পুরুষকে জাদুবলে ভেড়া বানিয়ে ফেলতে পারেন (পরশুরামের 'কামরূপিণী' গল্প স্মর্তব্য)। কথাটার নিহিতার্থ ধরে, অতিরিক্ত স্ত্রৈণ পুরুষের উপরে বীতশ্রদ্ধ মানুষেরা তাদের গালি দিয়ে বলতেন, ‘কামরূপ কামিখ্যের ভেড়া’! সমাজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই গুপ্তবিদ্যাবতীদের রীতিমতো ভয় পেতেন বাংলার মানুষ, তাদের নিয়ে গড়ে উঠত নানারকম জনশ্রুতি। হলায়ুধ মিশ্রের 'সেক শুভোদয়া' গ্রন্থে আছে এমনই দুই ডাকিনীর কথা। গঙ্গা-অভিমুখী গ্রাম্য স্ত্রীলোকদের মধ্যে লুকিয়ে থেকে ছদ্মরূপিণী এই দুই ডাকিনী মন্ত্রপ্রয়োগে সেক ও তাঁর সঙ্গী যোগীকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করল। ভূয়োদর্শী সেক তাঁর অনুচর মদনকে নিজের 'আশালগুড়' দিয়ে আজ্ঞা দিলেন, সকলের অলক্ষ্যে গঙ্গার পথে ধুলোর ওপর দাগ টেনে রাখতে। কথামতো কাজ হল। ফেরার পথে দুই ডাকিনী দেখল, তাদের সামনে আকাশ অবধি উঁচু লোহার শিকল। তখন বিপদগ্রস্ত দুই ডাকিনী মহাত্মা সেককে তুষ্ট করার অভিপ্রায়ে গান ধরল ভাটিয়ালী রাগে, "...ছাড়ি দেহ কাজু মুঞি জাঙ ঘর। সাগরমধ্যে লোহার গড়।। হাত যোড় করিয়া মাঙ্গো দান। বারেক মহাত্মা রাখ সম্মান।।" ইত্যাদি ইত্যাদি।
আরও পড়ুন
পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বারবার পালিয়েছেন অগ্নিযুগের জাদুকর ‘রয় দ্য মিস্টিক’
প্রার্থিত মনের মানুষের প্রণয় আকর্ষণের জন্য ঐন্দ্রজালিক বিদ্যার আশ্রয় নেওয়ার উদাহরণ বাংলা আখ্যানমালায় অবিরল। কাশীদাসী মহাভারতের আদিপর্বে দেখি, ননদিনী সুভদ্রাকে অর্জুনের প্রেমমোহে উন্মাদপ্রায় দেখে সত্যভামা পার্থকে তিরস্কার করে বলেছেন, অর্জুন নিশ্চয়ই ভণ্ড ব্রহ্মচারী, ঐন্দ্রজালিক বিদ্যায় নারীমোহনে সে পারদর্শী। বিস্মিত সত্যভামার প্রশ্ন ছিল :
"ঔষধ করিবে পার্থ স্ত্রীর এই বিধি।
পুরুষ হইয়া তুমি কৈলে কি ঔষধি।।"
সত্যভামার আদেশে অর্জুনের মনোহরণের জন্য সুভদ্রাকে সাহায্য করছেন মায়াবতী (যিনি সাক্ষাত কামপত্নী রতি)। মায়াবতী সদর্পে বলছেন,
"জিতেন্দ্রিয় ব্রহ্মচারী পার্থ গর্ব করে।
অস্থিচর্ম অনাহারী পারি মোহিবারে।।"
মধ্যরাত্রে মায়াবতীর দেওয়া মন্ত্রঃপূত সিন্দুর ও মায়াকাজলে ভূষিত সুভদ্রাকে দেখে সহজেই কামশরাহত হয়েছে গাণ্ডীবধন্বা অর্জুন। অতঃপর সত্যভামার ব্যবস্থাপনায় দুজনের গান্ধর্ব বিবাহ ঘটেছে।
মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্যেও অনুরূপ এক গুপ্তবিদ্যাবতী নারীর সাক্ষাত মেলে। তিনি প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজনন্দিনী ঊষার সখী চিত্রলেখা। ঊষার স্বপ্নদৃষ্ট পুরুষ অনিরুদ্ধকে নিজের চিত্রাঙ্কন বিদ্যার সাহায্যে চিহ্নিত করে, আকাশপথে দ্বারকায় গিয়ে চিত্রলেখা তাকে নিয়ে এসেছে বিমানযোগে। সখী চিত্রলেখার মধ্যস্থতায় ঘটেছে ঊষা-অনিরুদ্ধের মিলন।
আরও পড়ুন
পুজো চলছে ‘করোনা মাতা’র, মহামারী থেকে বাঁচতে কুসংস্কারে ঝুঁকছে শিলিগুড়ি!
মুকুন্দ চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গলে দেখি, রূপসী সপত্নীর হাত থেকে স্বামীকে উদ্ধার করে দেবার জন্য সখী লীলাবতীর শরণ নিয়েছে বণিকপত্নী লহনা। লীলাবতী ঠাকুরাণী তাকে স্বামী বশ করার নানা ওষুধের কথা শোনাচ্ছে, যেমন -
"একছত্রের গাছ আন হাইলহামাতি
শনি মঙ্গলবারে জাগাবে নিশারাতি।
কাঙুর-কামিক্ষ্য মুখে বাটিবে প্রভাতে
কপালে তিলক নিলে প্রীত নানামতে।
ঔষধ প্রত্যক্ষ আমি দেখিল সাক্ষাৎ
জার প্রেমে গোবিন্দ আনিল পারিজাত।"
এই ঈর্ষাকাতর লহনাই আবার সপত্নী খুল্লনার চণ্ডীপূজার কথা বিকৃত করে, সাতকাহন করে লাগিয়েছে ধনপতি সাধুর কানে। বলেছে, "সদাগর তোমার সনে আছে বিরল কথা/ তোমার মোহিনী বালা শিক্ষা করে ডাইন কলা/ নিত্য পূজে ডাকিনী দেবতা।" কাঙুর-কামিক্ষা মুখে লোহিতবসনা খুল্লনা ওড় পুষ্পের অঞ্জলি দিচ্ছে, এহেন ‘বামপথি’ পূজা দেখে ক্ষিপ্ত ধনপতি পদাঘাতে ঘট ফেলে দিয়ে দেবীকে অপমান করেছে। ফলে, তার কপালে জুটেছে অশেষ দুর্গতি, এবং সিংহলে দ্বাদশ বর্ষ কারাবাস।
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়ায় প্রাচীন গুহাচিত্রের সন্ধান, ফুটে উঠেছে জাদুবিশ্বাস
খুল্লনা যাঁর পূজা করছিল, তিনি সাক্ষাত শিবগৃহিণী চণ্ডী মহামায়া। দুর্গোৎসবের মন্ত্রে তাঁকে বলা হয়েছে কোটিযোগিনী-পরিবৃতা, শ্রীমদ্ভাগবতে কৃষ্ণপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে গোপীদের কাত্যায়নীব্রতের প্রসঙ্গে তাঁকে বলা হয়েছে 'মহাযোগিন্যধিশ্বরী'। চণ্ডীমঙ্গলেই দেখব, সহচরী চৌষট্টি যোগিনী যে পদ্মের পাতা, এহেন এক মায়াকমলে আসীনা হয়ে কালীদহে দেবী মায়ারূপ ধরে ছলনা করছেন ধনপতিকে। এই কাব্যে দেবীর ভয়ঙ্করী চামুণ্ডা রূপের সহচরী হিসাবে দেখা যায় ডাকিনী-যোগিনীকে। বাৎসরিক শ্যামাপূজায় আমরা দক্ষিণাকালীর দুইপাশে এই ডাকিনী-যোগিনীর মূর্তি দেখেছি।
মঙ্গলকাব্যে দেবীকে বারবার ভক্তের কল্যাণের জন্য নানা অতিপ্রাকৃত কৌশল প্রয়োগ করতে দেখা গেছে। নিদয়া ও পদ্মিনীকে সন্তানলাভের জন্য ওষুধ দিয়েছেন দেবী। সুপ্রসবের জন্য তাঁকে ওষুধ প্রয়োগ করতে দেখা গেছে খুল্লনার সূতিকাগৃহে। আবার, বিদ্যার শয্যাগৃহ অবধি সুড়ঙ্গ খোঁড়ার জন্য দেবীই সুন্দরকে সিঁদকাঠি দিয়ে সাহায্য করেছেন। এককথায়, ঐহিক লাভের জন্য মহামায়ার শরণ নিলে তিনি যে কোনও উপায়ে ভক্তের আর্তিহরণ করবেন, এ বিশ্বাস বাঙালির মজ্জায় মজ্জায়।
আরও পড়ুন
রেলযাত্রার ছবি, ডাইরেক্টরি থেকে তন্ত্র – ২০০ পেরিয়েও ‘নতুন’ বাঙালির পঞ্জিকা
শেষ করব এক আশ্চর্যরমণীর কথা বলে। তাঁর নাম 'এলোকেশী'। প্রমোদকুমার চট্টোপাধ্যায় 'তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ' গ্রন্থে তাঁর কথা লিখেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কৌলবাবা উমাপতি লেখককে শুনিয়েছিলেন এলোকেশীর গল্প - "ও এতই চঞ্চল আর স্বাধীন প্রকৃতি যে এদেশের মেয়েদের মধ্যে অত্যন্ত অস্বাভাবিক বোলেই মনে হয়। যেমন ধরো নির্ভীক চলাফেরা, বয়স্ক পুরুষদের কাছেও নিঃসঙ্কোচ, গ্রামের মধ্যে বাপের বয়সী কারো কোনো দোষের কথা স্পষ্ট ভাষায় তার মুখের উপর বোলে দেওয়াই ওর স্বভাব। সমবয়সী মেয়েদের তো গ্রাহ্যের মধ্যেই আনতো না, বরং কোনো অন্যায় দেখলে কান ধরে গালে চড় বসাতেও ওর সঙ্কোচ ছিল না।"
আরও পড়ুন
বৌদ্ধ তন্ত্রযানের দেবী কঙ্কই কি পরবর্তীকালের জগদ্ধাত্রী?
এলোকেশীর গুরুদেব আত্মরক্ষার জন্য তাঁকে দিয়েছিলেন একটি তীক্ষ্ণ ত্রিশূল। একদিন রাত্রে শ্মশানে যাবার জন্য এলোকেশী বাইরে বেরোলে তাকে আক্রমণ করতে এলো তিনজন নারীমাংসলোভী নরপশু। কিন্তু মেয়েটির বিক্রম তো তারা জানত না! এলোকেশীকে স্পর্শ করার আগেই সে ত্রিশূল দিয়ে একজনের নাক আর কপালের মাঝবরাবর এমন আঘাত হানল, যে অস্ত্রের মাঝের ফলাটিই তার মাথার মধ্যে ঢুকে গেল। দ্বিতীয় জনকে কাঁধ আর বুকের মাঝামাঝি ত্রিশূলের ঘা দিয়ে এমন কাবু করল, সারাজীবনে সে আর সুস্থ হতে পারেনি। বেগতিক দেখে তৃতীয় জন প্রাণভয়ে চম্পট দিল।
আদালতে বসল বিচারসভা। সব বৃত্তান্ত শুনে দায়রা জজ এলোকেশীকে বেকসুর খালাস দিলেন। তিনি এও বললেন, এই মেয়েটির আদর্শ সকলে অনুসরণ করলে এলাকায় নারীহরণের ঘটনা কমে যেতে বাধ্য। তারপর, এলোকেশী বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা আরম্ভ করল, শিক্ষা দিতে লাগল ত্রিশূলের সাহায্যে আত্মরক্ষার কৌশল।
কামাখ্যা মায়ের তীর্থে প্রমোদকুমার দেখেছিলেন সেই ত্রিশূল। এলোকেশী মাতার সঙ্গে সাক্ষাত করে, তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছিলেন তিনি।
আমাদের বাংলায় তো এমন নারীই প্রয়োজন, ধৃষ্ট নরপশুকে হতচকিত করে দিয়ে ঝলসে ওঠে যার হাতের উদ্যত ত্রিশূল। যাকে দেখে ত্রস্ত, ভীত দুষ্কৃতীরা বিড়বিড় করে বলে উঠবে, "মেয়েটা কি কালাজাদু জানে?"
তথ্যসূত্র:
১। শাস্ত্রমূলক ভারতীয় শক্তিসাধনা - উপেন্দ্রকুমার দাস।
২। সেক শুভোদয়া - সুকুমার সেন সম্পাদিত।
৩। কাশীদাসী মহাভারত - দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত।
৪। চণ্ডীমঙ্গল - সুকুমার সেন সম্পাদিত।
৫। শ্রীকৃষ্ণবিজয় - খগেন্দ্রনাথ মিত্র সম্পাদিত।
৬। ভারতচন্দ্রের গ্রন্থাবলী - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত।
৭। তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ- প্রমোদকুমার চট্টোপাধ্যায়।
৮। বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও তথ্যঋণ: অধ্যাপক অর্জুনদেব সেনশর্মা।
চিত্রপরিচয়:
বাম দিকে সাধিকা এলোকেশীর স্কেচ। প্রমোদকুমার চট্টোপাধ্যায়ের 'তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ' বইতে এঁকেছিলেন স্বয়ং লেখক।
ডান দিকে 'কমলে কামিনী' মায়াদৃশ্য। চণ্ডী মহামায়ার এই ছবিটি কালীঘাট পটচিত্র রীতির একখানি নিদর্শন।
Powered by Froala Editor