মুত্রাশয়ের চিকিৎসায় ‘দাশগুপ্ত টেকনিক’-এর জনক এই বঙ্গসন্তান

জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারে না অনেক রোগীর শরীর। এমন অবস্থায় চিকিৎসকদেরও কিছু করার থাকত না। অথচ রোবটের সাহায্যে অপারেশনের সময় কমিয়ে আনা যায় অনেকটাই। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০০০ সালেই ‘দা ভিঞ্চি’ রোবট তৈরি করেছিল আমেরিকার ইনটুইটিভ সারজিক্যাল কোম্পানি। তারও ৫ বছর পর লন্ডনে প্রথম কিডনি অপারেশনের কাজে লাগানো হয় রোবটটিকে (Robotics)। লন্ডনের কিংস কলেজ এবং মিশিগানের ভাটিকাট্টু ইনস্টিটিউটের যৌথ চিকিৎসক দলটির মধ্যে ছিলেন এক বাঙালি চিকিৎসক। ডাঃ প্রকর দাশগুপ্ত (Prakar Dashgupta)।

চলতি বছরে পদ্মশ্রী পুরস্কার পেলেন ডাঃ প্রকর দাশগুপ্ত। সেই সূত্রে নতুন করে আলোচনায় উঠে আসছে চিকিৎসা শাস্ত্রে তাঁর নানা অবদানের কথা। শুধু যে বিশ্বের প্রথম রোবটিক সার্জারি দলের সদস্য ছিলেন, তাই নয়। প্রকর দাশগুপ্তের নামে রয়েছে মুত্রাশয়ের রোগের চিকিৎসার একটি বিশেষ পদ্ধতিও। লখনৌ শহরের বাঙালি পরিবারে জন্ম প্রকর দাশগুপ্ত। ডাক্তারি শিক্ষার জন্য চলে এসেছিলেন কলকাতায়। ১৯৮৯ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর পাড়ি দিয়েছিলেন লন্ডনে। সেখানে ১৯৯৪ সালে মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের ফেলো নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে এফআরসিএস এবং ২০০১ সালে এমডি ডিগ্রি অর্জনের পর সেখানেই অনুশীলন শুরু করেন।

২০০৫ সালে কিংস কলেজ এবং ভাটিকাট্টু ইনস্টিটিউটের যৌথ দলটির জন্য বাছাই করা চিকিৎসকদের মধ্যে চিলেন ডাঃ দাশগুপ্ত। এরপর ২০০৯ সালে আরও একটি ঐতিহাসিক অপারেশন করেন তিনি। মুত্রাশয়ের স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা থাকার কারণে অনেকেই প্রস্রাব ধরে রাখতে পারতেন না। এই রোগের চিকিৎসা সম্বন্ধেও কোনো ধারণা ছিল না কারোর। ডাঃ দাশগুপ্ত সাইটোস্কোপের সাহায্যে বোটোক্স টক্সিন প্রয়োগ করে চিকিৎসার পথ দেখান। এই পদ্ধতি এখন দাশগুপ্ত টেকনিক নামে পরিচিত।

কিংস কলেজের ইউরোলজি বিভাগে অধ্যাপনার পাশাপাশি চিকিৎসাও করে চলেছেন ডাঃ দাশগুপ্ত। লন্ডন শহরের পাশাপাশি ভারত এবং পাকিস্তানের বেশ কিছু হাসপাতালের সঙ্গেও জড়িয়ে তিনি। এর মধ্যেই ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত একটানা ৮ বছর ব্রিটিশ জার্নাল অফ ইউরোলজি ইন্টারন্যাশনাল পত্রিকা সম্পাদনাও করেছেন তিনি। কিংস কলেজের ফেলোশিপের পাশাপাশি পেয়েছেন লিনিয়ান সোসাইটির ফেলোশিপ এবং সেন্ট পিটার’স মেডেল। আর এবার তাঁর প্রাপ্তির তালিকায় যুক্ত হল ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাগরিক সম্মান পদ্মশ্রী পুরস্কার। বিজ্ঞানের জগতে আজও যে সমস্ত মানুষের জন্য বাঙালি গর্ব করতে পারেন, ডাঃ প্রকর দাশগুপ্ত নিঃসন্দেহে তাঁদের একজন।

আরও পড়ুন
বাঙালির সুভাষ পালক, নেতাজি উড়ান

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
গণেশ ঘোষ থেকে বাদল সরকার— রাষ্ট্রীয় সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছেন যে-সমস্ত বাঙালি

More From Author See More