কাশ্মিরের প্রথম মহিলা হুইলচেয়ার বাস্কেটবল খেলোয়াড়, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাসির

১২ বছর আগে এক দুর্ঘটনায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন কাশ্মিরের ইনশাহ বাসির (Inshah Bashir)। তারপর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি আর ফিরে পাননি কোনোদিন। হুইলচেয়ারই হয়ে উঠেছে সারা জীবনের সঙ্গী। কিন্তু তারপরেও স্বপ্ন দেখতে ছাড়েননি তিনি। সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে গিয়েছেন বাস্কেটবলের (Basketball) কোর্টে। এমনকি বাস্কেটবলে ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে পৌঁছে গিয়েছেন আমেরিকাতেও। কাশ্মির তো বটেই, সারা দেশের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের, বিশেষ করে মহিলাদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছেন বাসির।

হুইলচেয়ার বাস্কেটবল অবশ্য নতুন খেলা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই প্যারালিম্পিকেও এই খেলার আয়োজন হয়ে আসছে। ভারতও অংশ গ্রহণ করেছে সেখানে। কিন্তু কাশ্মিরের মহিলা হিসাবে এই খেলায় এগিয়ে আসা আলাদা গুরুত্বের দাবি রাখে। যখন তিনি বাস্কেটবল কোর্টে নামেন, তখন রাজ্যে পুরুষদের হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিম থাকলেও মহিলাদের কোনো টিম ছিল না। বাসিরের আগে কাশ্মিরের কোনো মহিলা এই খেলায় এগিয়েও আসেননি। সামাজিক ভাবেও নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু তারপরেও হার মানেননি বাসির।

১৫ বছর বয়সে একটি দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই কোমরের নিচের অংশ পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। নিজের এই প্রতিবন্ধকতা মেনে নিতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল বাসিরের। কিন্তু এই সময়েই একদিন পুরুষদের হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিমের খেলা দেখে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন বাসির। পরিবারের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনো বাধা পাননি তিনি। কিন্তু রাজ্যেই যে মহিলাদের জন্য কোনো হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিম নেই। তাই প্রশিক্ষণ নিতে দিল্লি যেতে হয়েছিল তাঁকে। প্রতিবেশীরা অনেকেই ভেবেছিলেন, কাশ্মিরের একজন মহিলাকে হয়তো মেনে নেবেন না ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মানুষরা। অন্তত কাশ্মিরের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁদের তেমনই মনে হয়েছিল। কিন্তু বাসিরের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ আলাদা।

দিল্লি শহরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর দেশের বিভিন্ন রাজ্যে খেলায় অংশ নিয়েছেন বাসির। কোথাও তাঁকে কোনোরকম বৈষম্যের মুখে পড়তে হয়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন রাজ্যের দলে যোগদানের সুযোগও পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে আবার ফিরে গিয়েছিলেন কাশ্মির। কারণ সেখানকার শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মহিলাদের নিয়ে দল তৈরি করতে হবে তাঁকে। এই কাজে পুরুষ হুইলচেয়ার বাস্কেটবল টিমের সদস্যদের কাছ থেকেও যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছেন তিনি। প্রথমে ১২ জন সদস্য নিয়ে দল শুরু হয়। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সদস্য সংখ্যা কমেছে। এখন ৬ জন সদস্যের নেতৃত্ব দেন তিনি।

আরও পড়ুন
চরম অবহেলায় ধুঁকছে কাশ্মিরের প্রথম প্রকাশনা সংস্থা

এর মধ্যেই ২০১৯ সালে আমেরিকায় এক মৈত্রী ম্যাচে ভারতীয় দলের সদস্য হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে বাসির মনে করেন, তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মহিলাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখানো। সামাজিক মাধ্যমে এই নিয়ে প্রচারও চালান তিনি। প্রয়োজনে কোনো মহিলার পরিবারের লোকজনের সঙ্গেও কথা বলেন। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, একটি দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি ঘটলেই জীবন থমকে যায় না। যতদিন জীবন থাকে, ততদিনই স্বপ্নের জন্য লড়াই চালানো যায়। নিজের জীবন দিয়ে সেই উদাহরণ তৈরি করে চলেছেন বাসির।

আরও পড়ুন
কাশ্মিরি শালের আদলে নকশিকাঁথা, নেপথ্যে বাঙালি শিক্ষক

Powered by Froala Editor