ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য কৃত্রিম হাত বানাচ্ছেন প্রশান্ত

প্রথাগত ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা শুরু করেছিলেন ঠিকই, তবে তা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বেরিয়ে আসেন প্রশান্ত গাড়ে (Prashant Gade)। বেশ কিছু নতুন নতুন কোর্স নিয়ে পড়াশোনাও করেছেন এর মধ্যে। তবে আবারও ফিরতে হয়েছে সেই ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কাছেই। অবশ্য তা ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়। বরং ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের বহু শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রশান্ত। আর এই কাজে তাঁর হাতিয়ার নিজের আবিষ্কার করা স্বল্পমূল্যের কৃত্রিম হাত (Prosthetic Arms)। এমনিতে বাজারচলতি কৃত্রিম হাতের তুলনায় এর দাম প্রায় ৫০ ভাগের একভাগ। তবে সেটুকু খরচ করার সামর্থ্যও যাঁদের নেই, তাঁদের কাছ থেকে কোনো মূল্যই নেন না প্রশান্ত।

মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডয়া অঞ্চলের ২৮ বছরের যুবক প্রশান্ত। কয়েক বছর আগে তাঁর গ্রামে একটি মেয়ের জন্ম হয়, জন্মের সময় থেকেই তার একটিও হাত ছিল না। প্রশান্ত জানতেন কৃত্রিম হাতের সাহায্যে এখন খব সহজেই কাজ করা যায়। কিন্তু তার দাম সম্বন্ধে কোনো ধারণাই ছিল না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, একটি হাতের দামই পড়বে অন্তত ২৪ লক্ষ টাকা। তাঁর গ্রামে কারোর পক্ষেই এত খরচ করা সম্ভব ছিল না। তাই ২০১৬ সালেই কৃত্রিম অঙ্গসংস্থাপন সংক্রান্ত গবেষণার জন্য প্রশান্ত তৈরি করেন ইনালি ফাউন্ডেশন। তবে এর জন্যও যথেষ্ট পুঁজির প্রয়োজন। অর্থ সংগ্রহের জন্য একটি অনলাইন ক্রাউড ফান্ডিং সংস্থায় নিজের উদ্দেশ্যের কথা জানান তিনি। আর কিছুদিনের মধ্যেই সারা পৃথিবী থেকে সাহায্য এসে পৌঁছতে থাকে।

বছরখানেকের গবেষণাতেই বাজিমাত করলেন প্রশান্ত। অত্যন্ত সস্তায় তৈরি করে ফেললেন কৃত্রিম হাত। মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকে এই হাতের। ফলে ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ। আর এর দাম ৫০ হাজারের মধ্যেই। তবে দুঃস্থ মানুষদের জন্য বিনামূল্যেই বিতরণ করেন প্রশান্ত। এখনও পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি মানুষ তাঁর হাত ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে ১৫০০-এর বেশি মানুষকে বিনামূল্যে সরবরাহ করেছেন প্রশান্ত। শুধু কৃত্রিম হাতই নয়, ভবিষ্যতে অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী কীভাবে সস্তায় তৈরি করা যায় তা নিয়েই গবেষণা চালাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে বিপুল চাহিদার সময় সস্তায় ভেন্টিলেটর যন্ত্র তৈরি করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। আগামীদিনে বড়ো উদ্যোগপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন না প্রশান্ত, বরং তাঁর আবিষ্কার যদি মানুষের কাজে লাগে তাহলেই তিনি খুশি।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
রিক্সাচালকের জীবন পেরিয়ে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্রের উদ্ভাবক; এক রূপকথার জার্নি