অগ্নিগর্ভ ফলের বাজার, ইফতারে দুঃস্থদের বিনামূল্যে ফল দিচ্ছে বাঁকড়ার ক্লাব

“সাধারণত দশ টাকায় যেখানে ৪টে লেবু পাওয়া যায়, এখন একটা লেবুর দাম ১০-১২ টাকা। শসার দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। রোজার সময় মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত বাঙালি মুসলিম পরিবারে ফলের চাহিদা থাকে। কিন্তু এই মূল্যবৃদ্ধি জেরে বিপাকে পড়ছেন তাঁরা সকলেই…”

বলছিলেন বাঁকড়ার স্বেচ্ছাসেবী ও ব্যবসায়ী রকি। প্রসঙ্গ রমজান মাসে (Ramadan Month) ফলের (Fruit) অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধি (Price Hike)। প্রতিবছর বাংলার প্রায় সর্বত্রই কম-বেশি দেখা যায় এই দৃশ্য। তবে চলতি বছরে রমজান শুরু হতে না হতেই আকাশ ছুঁয়েছে ফলের দাম। অলিখিত এবং অবৈধভাবেই। রোজার সময়, সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার পর সন্ধেয় ফলাহার করেই ইফতার সারেন অধিকাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ। সারাদিনের উপোষের পর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে যা এক প্রকার আবশ্যিকও বটে। কিন্তু এই উৎসবের মাসে ফলে লাগামহীন দামই যেন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সামনে।

এই অগ্নিগর্ভ বাজারে দুঃস্থ ও নিম্নবিত্তদের পাশে দাঁড়াল হাওড়ার বাঁকড়া অঞ্চলের সেভেদ ব্রাদার্স ক্লাব। ক্লাব সদস্য এবং স্থানীয় মানুষদের উদ্যোগে খুলল বিনামূল্যে ফল ও শাকসবজি বিতরণের বিশেষ কিয়স্ক। সোম, মঙ্গল ও বুধ— প্রতি সপ্তাহে এই তিন দিন নিয়ম করেই খুলছে সেভেন ব্রাদার্সের এই কিয়স্ক। প্রতিদিন প্রায় পঞ্চাশাধিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে পরিষেবা। গোটা রমজান মাসজুড়েই খোলা থাকবে এই পরিষেবা। কিন্তু কীভাবে সংগৃহীত হচ্ছে এই প্রকল্পের অর্থমূল্য?

ক্লাবের অন্যতম সদস্য আসিক রহমানের কথায়, “সবমিলিয়ে প্রায় ৪০ জন সদস্য আমাদের ক্লাবের। নিজেদের সামর্থ্য থেকেই চাঁদা দিয়ে চালানো হচ্ছে এই কিয়স্ক। তাছাড়াও বিভিন্ন এই উদ্যোগে অনুদানের জন্য এগিয়ে এসেছে গ্রামের অনেক বিত্তশালী মানুষরাও।” উল্লেখ্য, এই প্রকল্প আসিকেরই মস্তিষ্কপ্রসূত। এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে তাঁদের এই উদ্যোগ দরিদ্রদের মুখে হাসিয়ে ফুটিয়ে তুলছে ঠিকই, তবে এটাই কি একমাত্র সমাধান এই পরিস্থিতির?

উদ্যোগের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে থাকা বাঁকড়ার ব্যবসায়ী তথা ‘বাঁকড়াবাসী’ পেজের অ্যাডমিন রকি জানালেন, “যতক্ষণ না সরকার এই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ না করছে, ততদিন স্থায়ী সমাধান পাওয়া অসম্ভব। আমরা লিখিতভাবে সরাসরি প্রশাসনের কাছে দ্বারস্থ হতে পারিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় পেজ থেকে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং এমএলএ-কে ট্যাগ করে ফলের দাম নিয়ন্ত্রণের আবেদন করেছি।”


সম্প্রতি, ফলের এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মন্ত্রিসভায় সরব হয়েছেন একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। ‘সুফল বাংলায়’-য় স্বল্পমূল্যে শাক-সবজি ও ফল বিক্রির নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাতে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষরা কতটা উপকৃত হবেন, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। এখন দেখার সার্বিকভাবে ফলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের আশ্বাসবাণী আদৌ কার্যকরী হয় কিনা… 

Powered by Froala Editor