মুহূর্তেই কঠিন হবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, পথ দেখাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

কার্বন নির্গমনের হার কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা তা নিয়ে গবেষণা চলছে বিশ্বজুড়ে। কয়েকদিন আগেই হয়ে গেল কপ-২৬ সম্মেলনও। ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের মাত্রা নেট-জিরো স্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বহু দেশ। তবে শুধু বৃক্ষরোপণ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহারেই কি নিয়ন্ত্রণে আসবে কার্বন নির্গমনের হার? এক কথায় তা অসম্ভব। কেননা, কার্বন নির্গমনের একটি বড়ো উৎস হল শিল্পাঞ্চল। চাইলেও যা হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয় কোনো প্রগতিশীল রাষ্ট্রের পক্ষেই। তাই এবার নতুন বিকল্পের সন্ধান দিলেন বিজ্ঞানীরা। ডিকার্বোনাইজেশন (Decarbonization) পদ্ধতিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে (Carbon-Di-Oxide) পরিণত করলেন কঠিন ব্লকে। 

অভিনব এই পদ্ধতি আবিষ্কারের নেপথ্যে রয়েছেন মেলবোর্নের আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তবে শুধুমাত্র কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণই নয়, একইসঙ্গে শক্তি-অপচয় রোধেরও পথ দেখাবে এই নতুন ডিকার্বোনাইজেশন পদ্ধতি। 

তবে আশ্চর্য হওয়ার কথা, কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কঠিন করার জন্য পৃথক কোনো রাসায়নিক পদার্থের প্রয়োজন পড়বে বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা। মূলত, এই ডিকার্বোনাইজেশন পদ্ধতিতে শিল্পজাত কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে চালিত করা হবে তরল ধাতুর মধ্যে। তারপর সেই ধাতুর তাপমাত্রা কমিয়ে আনলেই বুদবুদের আকারের কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিণত হবে স্নো-ফ্লেকের মতো কঠিন পদার্থে। মূলত, অনুঘটকের উপস্থিতিই পরিচালনা করবে গোটা বিক্রিয়াটিকে। 

দেখতে গেলে, ডিকার্বোনাইজেশনও একধরনের কার্বন ক্যাপচার। সাম্প্রতিক সময়ে কার্বন ক্যাপচার পদ্ধতির ব্যবহার হচ্ছে বহু ক্ষেত্রেই। তবে তা সাশ্রয়ী নয় মোটেই। সেইসঙ্গে কার্বনকে কঠিন করতে গেলেও প্রয়োজন হয় বিপুল পরিমাণ শক্তি এবং রাসায়নিক পদার্থের। সেখানে ডিকার্বোনাইজেশনের জন্য মাত্র ১০০-১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উত্তপ্ত করতে হয় তরল ধাতুকে। আর এই স্বল্প পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করা সম্ভব উইন্ড মিল কিংবা সৌরসেলের মাধ্যমেই। ফলে সার্বিকভাবেই এই পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব। 

আরও পড়ুন
পরিবেশ বাঁচাতে বাধ্যতামূলক করতে হবে কার্বন অফসেট প্রকল্প, জানাচ্ছে সমীক্ষা

ইতিমধ্যেই সাফল্য পেয়েছে অস্ট্রেলিয় বিজ্ঞানীদের তৈরি ডিকার্বোনাইজেশন যন্ত্রের প্রোটোটাইপ। যন্ত্রটির বাণিজ্যিকরণের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মেলবোর্নের গবেষকদের সঙ্গে গাঁট ছড়া বেঁধে এই যন্ত্রের উৎপাদন শুরু করবে অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তি সংস্থা এবিআর গ্রুপ। অন্যদিকে নেট কার্বন নির্গমনের হার শূন্যে নিয়ে আসতে অস্ট্রেলিয়া সরকারও বড়ো অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এই যন্ত্রের বাণিজ্যায়নে। বলাই বাহুল্য, আগামীতে এই পদ্ধতিই দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে পথ দেখাবে গোটা বিশ্বকে…

আরও পড়ুন
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমাতে নয়া প্রযুক্তি, জড়িয়ে দুই বাঙালি বিজ্ঞানী

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে পারে ‘ব্লু কার্বন সিঙ্ক’