২৪ বছর বয়সেই ৩০০-র বেশি পথের প্রাণীর আশ্রয়দাতা মহারাষ্ট্রের যুবক

সামনেই বোর্ড পরীক্ষা। দশম শ্রেণির এক ছাত্র সকালে স্কুলের দিকে রওয়ানা হয়েছে। হঠাৎ দেখতে পায়, রাস্তায় ভিড় জমে রয়েছে। এইখানেই রোজ তার সঙ্গে দেখা হয় একটি কুকুরের। রোজ ছেলেটি টিফিনের খানিকটা অংশ দিত কুকুরটিকে। কিছুদিন আগেই সেই কুকুরটির তিনটি সন্তান হয়েছে, তাও জানত সে। সেদিন দেখল কোনো এক গাড়ির চাকা তার শরীরটা রাস্তায় মিশিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে। সেই ছোট্ট কিশোরটি তখনই ঠিক করে ফেলেছিল তার কর্তব্য। সদ্যজাত কুকুরশাবক তিনটিকে সঙ্গে করে নিয়ে এল বাড়িতে।

মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ শহরের সেই কিশোর আশিস যোশী (Ashish Joshi) বর্তমানে একজন আর্কিটেক্ট। তবে এটুকুই তাঁর পরিচয় নয়। শহরের প্রায় ৩০০ পথবাসী প্রাণীর (Stray Animals) জন্য তিনি গড়ে তুলেছেন তিনটি অভয়ারণ্য। বন্য পশুপাখি নয়। বরং মানুষের আশেপাশে সারাক্ষণ যারা ঘুরে বেড়ায়, সেই কুকুর বেড়ালদের নিয়েই তাঁর সংসার। শুরুটা হয়েছিল সেই তিনটি শাবককে দিয়ে। বাড়িতে যখন তাদের নিয়ে এসেছিলেন, তখন বাবা-মা আপত্তি করেনি। শুধু বলেছিলেন, সবই ঠিক আছে। কিন্তু পড়াশোনাটাও মন দিয়ে করতে হবে। আশিসের দেখাদেখি তাঁর কয়েকজন বন্ধুও এই কাজে আগ্রহী হয়। তিন বন্ধু ভাগ করে নেন তিনটি শাবকের দায়িত্ব। তাঁদের পরিবার থেকেও একই কথা বলা হয়। তিনজনেই অবশ্য পড়াশোনা করেছিলেন মন দিয়ে। এবং এখন প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত।

কিন্তু কর্মজীবন থেকে যতটুকু সময় বের করে নেওয়া যায়, সেটা এই অসহায় প্রাণীদের জন্যই ব্যয় করেন আশিস। প্রতিদিন সকালে ৩টের আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়েন তিনি। তারপর খাবার আর জল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায় রাস্তায়। পথে ঘুরতে থাকা কুকুর-বেড়ালদের মুখে তুলে দেন খাবার। অবশ্য শহরবাসীদের অনেকেই আপত্তি জানিয়েছিলেন তাঁর কাজে। তিনি নাকি রাস্তাঘাট নোংরা করছেন। তবে ক্রমশ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছেন আশিস। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই তাঁর মনে হতে থাকে, রাস্তাঘাট কুকুর-বিড়ালদের পক্ষে একেবারেই নিরাপদ নয়। বিশেষ করে কৈশোরের সেই দুর্ঘটনার স্মৃতি ভেসে ওঠে বারবার। আর তাই যাদেরকেই দেখতেন শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত, তাদেরকেই নিয়ে আসতেন বাড়িতে।

বছর তিনেক আগে তিনি এইসব প্রাণীদের জন্যই অরণ্য তৈরির কাজে হাত লাগান। তিন বছরে গড়ে তুলেছেন ৩টি অরণ্য। প্রতিটাতে রয়েছে ১০০-র বেশি গাছ। আর সেইসঙ্গে মোট ৩০০টির বেশি কুকুর ও বেড়াল। যারা মোটামুটি নিজেদের মতো চলাফেরা করতে পারে, তাদেরকেই নিয়ে এসে রাখেন এই অরণ্যে। আর যারা একেবারেই তা পারে না, তাদের বাড়িতে সর্বক্ষণ নিজের কাছে কাছে রাখেন তিনি। বর্তমানে তিনটি কুকুর রয়েছে আশিসের বাড়িতে। একজনের জন্ম থেকেই দুটি পা অকেজো। বাকি দুজন দুর্ঘটনায় পা হারিয়েছে। রাস্তায় থাকলে এতদিনে আবারও দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হত তাদের। আশিসের মতো প্রতিটা মানুষ যদি সামান্য হলেও দায়িত্ব নিতে পারেন, তাহলে এই পৃথিবী হয়তো সত্যিই সকলের জন্য নিরাপদ হয়ে উঠবে।

আরও পড়ুন
লিংকন-হত্যার মাত্র এক বছরের মাথায় খুন তাঁর পোষ্য সারমেয়ও!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কুকুরের চিৎকারে বিরক্ত একলব্য, নিক্ষেপ করলেন একসঙ্গে সাতটি তীর!

More From Author See More