অসমে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম পেপার মিল এবার নিলামে

অসমের কাছার পেপার মিলই ছিল গোটা এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম কাগজ কারখানা। বিগত পাঁচ বছর ধরেই তালা ঝুলছে এই কারখানার গেটে। তবুও নতুন করে কারখানা খুলবে এমনটাই আশা করেছিলেন কর্মচারীরা। কিন্তু খোলা তো দূরের কথা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্থান পেপার মিলের অধীনস্থ এই কারখানা এবার উঠতে চলেছে নিলামে। তবে শুধু কাছার মিলই নয়, সঙ্গে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে নাগাঁও মিলও। 

কাছার মিলের মতোই ২০১৭ সাল থেকে বন্ধ নাগাঁও পেপার মিল। সেসময় বিনা নোটিশেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দুটি কারখানার দরজা। জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল দেউলিয়া হয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি কারখানাতে কাজ করতেন ১২০০-র ও বেশি কর্মচারী। কারখানা বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁদের বেতন। পেনশন, প্রফিডেন্ট ফান্ড ও অন্যান্য সঞ্চয়— সমস্ত কিছুই বকেয়া এখনও। আর এই চরম অর্থসংকটই একে একে তাঁদের ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর দিকে।

সম্প্রতি, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে কাছার কাগজ কারখানার এক কর্মচারী আব্দুল হান্নান। দীর্ঘদিন থেকে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের কারণে ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু ন্যূনতম চিকিৎসা করানোর মতোও সামর্থ্য নেই যে। আর সেই চিকিৎসার অভাবেই মৃত্যু। তবে শুধু হান্নান নন। কারখানা বন্ধের পর এখনও পর্যন্ত চিকিৎসার অভাবে প্রাণ গিয়েছে ৮৯ জন শ্রমিকের। ঘটেছে চারটি আত্মহত্যার ঘটনাও। কিন্তু কর্মচারীদের এই অসহায়তার পরেও রাষ্ট্রায়ত্ত একটি সংস্থার এমন ঔদাসীন্য সত্যিই অবাক করার মতোই। 

চলতি বছরের শুরুতে, ভোটের ঠিক আগে কারখানা খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এমনকি ইশতেহারেও উল্লেখিত হয়েছিল, কারখানার উৎপাদন যাতে আগের পর্যায়ে পৌঁছায়— সেদিকেও সম্পূর্ণ নজর দেবে প্রশাসন। পাশাপাশি বাঁশ উৎপাদন এবং পারিপার্শ্বিক পরিকাঠামোর উন্নয়নে নেওয়া হবে উপযুক্ত পদক্ষেপ। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি থেকে গেল খাতায় কলমেই। 

আরও পড়ুন
ইলিনয়ের রাসায়নিক কারখানায় ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড, দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের আশঙ্কা

গত ১ জুন প্রকাশিত হল কারখানার নিলামের বিজ্ঞাপন। প্রাথমিকভাবে কারখানার মূল্য ধার্য করা হয়েছে ১১৩৯ কোটি টাকা। ন্যাশনাল কোম্পানি ল’ ট্রাইবুনাল জানাচ্ছে, হিন্দুস্থান পেপার মিল বিক্রি হওয়ার পর গোটা অর্থটাই ভাগ করে দেওয়া হবে ‘স্টকহোল্ডার’ মধ্যে। পাশাপাশি ভারতের অ্যালয় অ্যান্ড মেটালস সংস্থাটির হাতে তুলে দেওয়া হবে বকেয়া ৯৮ লক্ষ টাকা। আর শ্রমিকরা? তাঁদের কথা সেভাবে উল্লিখিত হয়নি কোথায়ও। অথচ, কেবলমাত্র ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত— কর্মীদের বকেয়া বেতনের পরিমাণ ৬২০ কোটি টাকা। তাঁরা সেই টাকা আদৌ পাবে কিনা তা অনিশ্চিত এখনও। পাশাপাশি এই কারখানা কোনো বেসরকারি সংস্থার মালিকানাধীন হয়ে গেলে, কর্মচারীদের চাকরি থাকবে কিনা— সে ব্যাপারেও জানানো হয়নি কিছু।

আরও পড়ুন
‘প্রাণে না বাঁচলে উন্নয়নে লাভ কী?’ সিমেন্ট কারখানার বিরুদ্ধে সরব সাঁকরাইল

সব মিলিয়ে চূড়ান্ত এক অসহায়তার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন অসমের পেপার প্ল্যান্টের কর্মীরা। শুধু কর্মীরাই নয়, এই কারখানার ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ। চরম অর্থাভাবের সঙ্গেই লড়াই চলছে তাঁদের প্রতিনিয়ত। ইতিমধ্যেই সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে মিলের প্রোজেক্ট ওয়াকার্স অ্যান্ড এম্পয়িজ ইউনিয়ন। নিলাম বন্ধ করে নতুন করে কারখানা খোলার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও। কিন্তু কোনো প্রত্যুত্তর মেলেনি রাজ্য সরকারের তরফে। এখন দেখার, কেন্দ্র সরকার আদৌ পদক্ষেপ নেয় কিনা বৃহত্তম এই পেপার মিলকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার জন্য…

আরও পড়ুন
এশিয়ার একমাত্র ভোটের কালি তৈরির কারখানা ভারতেই!

Powered by Froala Editor