মানুষের খুলি দিয়ে তৈরি মিনার! মেক্সিকোতে উদ্ধার প্রাচীন ইতিহাস

যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুপুরী। কঙ্কালের পর কঙ্কাল দিয়ে নির্মিত লম্বা এক মিনার। ঠিক মৃত্যুদূতের সিংহাসনের মতো। মেক্সিকো সিটির একেবারে কেন্দ্রস্থলেই প্রত্নতাত্ত্বিকেরা খনন করে উদ্ধার করলেন এই অ্যাজটেক টাওয়ার। তৈরি সম্পূর্ণ মানবখুলি দিয়ে। প্রথমে বেশ কিছু খুলি এবং হাড় পাওয়া গিয়েছিল ওই অঞ্চল থেকে। বেরিয়ে এসেছিল টাওয়ারের খানিকটা অংশ। তবে মেক্সিকোর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যানথ্রোপোলজি অ্যান্ড হিস্ট্রির তরফে জানানো হয়েছে সম্প্রতি আরও আরও ১১৯টি খুলি উদ্ধার করেছেন তাঁরা।

২০১৫ সালে মেক্সিকোর রাজধানীতে একটি পুরনো বাড়ির পুনর্নির্মাণের সময় প্রথম হদিশ মেলে এই টাওয়ারের। ততপরতার সঙ্গেই বন্ধ করা হয় নির্মাণ কাজ। অত্যন্ত ধৈর্য এবং যত্নের সঙ্গেই ধীরে ধীরে চলতে থাকে টাওয়ারের উদ্ধারকার্য। প্রাথমিকভাবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করছেন এটি অ্যাজটেক সভ্যতার একটি মন্দির। পূজিত হতেন সূর্য, যুদ্ধ এবং মানববলির দেব-দেবীরা। তবে উদ্ধার হওয়া অংশের নিচে আরো বড় কোনো নির্মাণ চাপা পড়ে আছে কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরাও।

মেক্সিকোর ইতিহাস জানায়, নাহুয়াটল-ভাষী অ্যাজটেক সাম্রাজ্য মেক্সিকোতে রাজত্ব করেছেন চতুর্দশ থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত। মেক্সিকোর বিস্তৃত অংশেই আধিপত্য ছিল তাঁদের। পরবর্তীকালে হার্নান কর্টেসের নেতৃত্বে স্প্যানিশ বাহিনী উপনিবেশ স্থাপন করে মেক্সিকোয়। ১৫২১ সালে উচ্ছেদ করা হয় প্রাচীন অ্যাজটেকদের। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল দুই দল। 

স্পেনের বর্ণনায় উল্লেখ পাওয়া যায়, হুয়ে জ্যাজম্প্যান্টিতে অনুরূপ এমনই একটি মানবখুলির কাঠামো দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন স্বয়ং স্পেনের সৈনিকরা। প্রত্নতাত্ত্বিকদের অভিমত, সম্প্রতি আবিষ্কৃত টাওয়ারটি আনুমানিক ১৪৮৬ থেকে ১৫০২ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল মেক্সিকোতে। রয়েছে তিনটি নির্মাণ পর্যায়। প্রাথমিকভাবে যুদ্ধের সময়ই এই টাওয়ার তৈরি হয়েছিল বলে মনে করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ধরে নেওয়ার হয়েছিল তরুণ যোদ্ধাদের মাথা কেটেই তৈরি হয়েছিল এই খুলির মিনার। 

তবে সাম্প্রতিক খননে চমকে উঠেছেন নৃবিজ্ঞানীরা। খুলির পাশাপাশিই ওই অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া গেছে বেশ কিছু মহিলা এবং শিশুদের ক্রেনিয়াও। ফলে এই মৃত্যুমিনারের উৎপত্তি নিয়ে উঠে আসে অন্য তত্ত্বও। মানববলির চল থাকলেও, সেখানে মহিলা এবং শিশুদের বলি দেওয়া হত, এমন সম্ভাবনাও দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। সেইসঙ্গে সময়সীমা ইঙ্গিত দিচ্ছে হয়তো যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়ে দেবতাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেই অ্যাজটেকরা বলি দিয়েছিলেন নিজ-সম্প্রদায়ের বহু মানুষকে। হয়তো কেউ কেউ এগিয়ে এসেছিলেন স্বেচ্ছাতেই। সব মিলিয়ে একাধিক জল্পনার সূত্রপাত করছে এই খুলির মিনার...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আত্মাকে আহ্বান জানানোর প্রাচীন প্রথা; অভিনব ‘ডে অফ ডেথ’ পালন মেক্সিকোয়

More From Author See More

Latest News See More