সোনাগাছিতে ত্রাণ বিতরণ ক্যালকাটা ফুডিজ ক্লাবের, নেওয়া হবে স্বাস্থ্য শিবিরের উদ্যোগও

সোনাগাছি— নামটা বললেই অনেকের চোখ ঈষৎ বেঁকে যাবে। কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে যে অঞ্চল। তবুও সামাজিক ট্যাবু থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারিনি আজও। সেখানকার বাসিন্দাদের আজও ‘মানুষ’ বলে গণ্য করেন না অনেকে। এই দীর্ঘ লকডাউন আর আমফানে সোনাগাছির যৌনকর্মীরাও বিপর্যস্ত। তাঁদের এমন বিপদের দিনেই পাশে এসে দাঁড়ালেন ক্যালকাটা ফুডিজ ক্লাব। ওই মানুষগুলোর কাছে পৌঁছে দিলেন রসদ।

২০১৪ সালে আরও অনেকের মতোই ছোট্ট ফেসবুক গ্রুপ হিসেবে পথ চলা শুরু করেছিল ক্যালকাটা ফুডিজ ক্লাব। খাবার নিয়ে উৎসাহী কয়েকজনকে নিয়েই শুরু হয়েছিল কর্মকাণ্ড। যত দিন গেছে, জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সেখানকার সদস্য সংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজার পেরিয়েছে। একদিনের ছোটো ফেসবুক গ্রুপটি ২০১৯ থেকেই রেজিস্টার্ড চ্যারিটি ট্রাস্ট হয়ে গেছে। শুধু গ্রুপ হিসেবেই আটকে নেই; সমস্ত জায়গায় সমস্ত মানুষের পাশে পৌঁছে যাচ্ছেন তাঁরা। এর আগেও লকডাউনের সময় গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে দশ হাজার মানুষের কাছে রেশন ও ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছিলেন ক্যালকাটা ফুডিজ ক্লাবের সদস্যরা। আমফানের সময় সুন্দরবনের মানুষদের কাছেও পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা। ‘সুন্দরবনের পাশে’ দাঁড়িয়েছেন সবাই মিলে। এবার সেই হাতগুলোই এগিয়ে এল সোনাগাছির দিকে; সেখানকার মানুষদের সঙ্গে থাকার জন্য। 

আরও পড়ুন
তুড়ি মারলেই জন্মাবে না কোভিডের ভ্যাক্সিন; ধৈর্য ধরা ছাড়া উপায়ই বা কী!

দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ক্যালকাটা ফুডিজ ক্লাব সোনাগাছির ৩০০ জন যৌনকর্মীদের হাতে পৌঁছে দিয়েছিল রেশন। প্রসঙ্গত, সোনাগাছির যেসব মহিলা ও পরিবারের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ তাঁদের কাছেই প্রাথমিক পর্যায় রেশন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, অন্তত ৫০টি শিশুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে তাদের পছন্দের জিনিস। রেশন ছাড়াও মাস্ক, স্যানিটাইজারও দেওয়া হয়েছে। তবে এখানেই থেমে নেই উদ্যোগ। পরবর্তীতে ক্যালকাটা ফুডিজ ক্লাবের পক্ষ থেকে একটি মেডিক্যাল ক্যাম্পও শুরু করা হবে এখানে। সেখানে এই সমস্ত মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। তাঁরা যাতে নিজেদের যত্ন নিতে পারেন, সেটাই দেখা হবে। 

আরও পড়ুন
তাঁর নাম থেকেই নামকরণ সোনাগাছির, চিৎপুরের গাজী ও এক বিলুপ্ত মসজিদের গল্প

লকডাউন ও করোনার পরিস্থিতিতে এমনিতেই সোনাগাছি স্তব্ধ। অভাবের মুখে পড়েছেন সেখানকার অসংখ্য মানুষ। তাঁরা যাতে সুস্থভাবে বাঁচতে পারেন সেই আশাই করা হচ্ছে সব জায়গা থেকে। সামাজিক ট্যাবু সরিয়ে রেখে যাতে মানুষ বলে অন্তত স্বীকৃতি দিতে পারি সেটাই কাম্য।

Powered by Froala Editor