একসময় ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে, বন্ধের পথে প্রিমিটিভ প্লাগ-ইন ফ্ল্যাশ প্লেয়ার

অবশেষে পরিসমাপ্তি হতে চলেছে ইন্টারনেট যুগের একটি অধ্যায়ের। চিরতরের জন্য এবার বন্ধ হতে চলেছে ফ্ল্যাশ প্লেয়ার। ওয়েব ব্রাউসারের যুগের সূচনাকাল থেকেই এক্সটার্নাল ব্রাউজার প্লাগ-ইন হিসাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল অ্যাডোবের এই সফটওয়্যার। তবে প্রযুক্তির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানিয়ে নিতে পারেনি ফ্ল্যাশ প্লেয়ার। গত বছরেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল নির্মাতা সংস্থা অ্যাডোব। এবার ক্যালেন্ডার নতুন বছরে পা দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাডোব ঘোষণা করল ‘কিংবদন্তি’ সফটওয়্যারের অবসর নেওয়ার কথা।

১৯৯৬ সালে প্রথম ফ্ল্যাশ প্লেয়ার প্রকাশ করেছিল অ্যাডোব। ভিডিও, অ্যানিমেশন, অনলাইন গেমিং থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমেও এই সফটওয়্যার ছিল যেন আলাদিনের প্রদীপ। আসলে তখনও বাজারে আসেনি থ্রি-জি, ফোর-জি। ইন্টারনেট বলতে কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা বুঝতেন ব্রডব্যান্ডের ডায়াল-আপ সংযোগকেকেই। যার গতি ছিল স্লথের থেকেও ধীর। তবে সেই ধীর গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই মাল্টিমিডিয়াকে রান করানোর দক্ষতা রাখত এই সফটওয়্যার প্লাগ-ইন। অধিকাংশ ওয়েব ডিজাইনাররাই ফ্ল্যাশ প্লেয়ারের উপযোগী করে তৈরি করতেন ওয়েবসাইটের কনফিগারেশন।

২০০৯ সালের একটি পরিসংখ্যান জানায়, সেসময় ৯৯ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই ফ্ল্যাশ প্লেয়ারের সাহায্য নিতেন। তবে খেলায় মোড় বদলে যায় বছর দুয়েকের মধ্যেই। একদিকে যেমন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অ্যান্ডরয়েড ডিভাইস, স্মার্ট-ফোন। অন্যদিকে প্রবাদপ্রতিম সংস্থা অ্যাপেল-ও ২০১০ সালে বন্ধ করে দিয়েছিল ফ্ল্যাশ প্লেয়ারের ব্যবহার। ধীরে ধীরে যেভাবে প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে বাকি ক্ষেত্রে সেইভাবে আর এগিয়েও উঠতে পারেনি অ্যাডোবের এই প্রিমিটিভ প্লাগ-ইন। সেইসঙ্গে নিরাপত্তা নিয়েও একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল ফ্ল্যাশের বিরুদ্ধে।

এসব কারণের জেরেই শেষমেশ ফ্ল্যাশ প্লেয়ারকে সরিয়ে নিল অ্যাডোব। অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে সংস্থাটি নববর্ষেই ব্যবহারকারীদের অনুরোধ করে কম্পিউটার থেকে এটি আনইনস্টল করে দেওয়ার জন্য। তাছাড়াও আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে ইনস্টল করা থাকলেও চলবে না ফ্ল্যাশ প্লেয়ার। তবে রাফেল নামের একটি সংস্থা ফ্ল্যাশের বিকল্প একটি ইন্টারনেট মাধ্যম তৈরি করছে। এর ব্যবহারে যে বিশাল সুবিধা পাবেন ব্যবহারকারীরা— তেমনটা একেবারেই নয়। সংস্থাটি সাফ বয়ানে জানিয়েছে ইন্টারনেটের প্রিমিটিভ এই প্লাগ-ইনের গুরুত্ব শুরুর দিকে ঠিক কতটা ছিল, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তার হদিশ দিতেই এই উদ্যোগ। এই উদ্যোগ অনেকটা যেন বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির সংরক্ষণই...

Powered by Froala Editor