একটিমাত্র দম্পতি, তাঁদের আস্ত একটা শহর; ওয়াশিংটনের বুকে আশ্চর্য সংসার

লোকালয় থেকে অনেক দূরে একটা শহর। শহরের মধ্যে একটা ছোট্ট বাড়ি। শহরটার একটা নিজস্ব পোস্ট অফিস আছে। আর সেখানে গুছিয়ে ঘরকন্না করে একটি দম্পতি। মাত্র দুটি মানুষ। আর কেউ থাকে না সেখানে। শুনতে কেমন রূপকথার মতো লাগছে না? কিন্তু এমনটাও সত্যি হতে পারে। ২০১০ সালে সত্যি সত্যিই এমন আস্ত একটা শহর কিনে ফেলেছিলেন এক দম্পতি। আর সেখানেই শুরু করেছিলেন সংসার।

এখানে খুঁজলে যেন আকাশগঙ্গা দেখা যায়। এ যেন ঈশ্বরের এলাকা। এমনটাই মনে করতেন ম্যাডি লাভ। ওয়াশিংটনের পাহাড়ি এলাকায় তিনিই কিনেছিলেন এই শহর। ম্যাডি লাভ আর তাঁর স্ত্রী নিয়েল লাভ। একটি ই-কমার্স সাইটে বিজ্ঞাপন দেখেছিলেন। আর নিলামে জিতে সেই শহর কিনেও নিলেন। তবে এই ঘটনা মনে পড়িয়ে দেয় শহরটির ১৩০ বছরের ইতিহাস। ১৮৯৮ সালে তিন ভাই সোনার খনি খুঁজতে খুঁজতে চলে আসেন এখানে। আর এখনকার মাটির নিচে সোনার সন্ধানও পেয়ে যান। সেই শুরু হলো মানুষের আনাগোনা। খনিকে ঘিরে গড়ে উঠল শহর। নিজেদের ফেলে আসা পিতৃভূমির নামেই শহরের নাম দিলেন হেগ ভাইরা। ওয়াকোন্ডা। আর শহরকে ঘিরে গড়ে উঠল দোকানবাজার, ক্যাফেটেরিয়া। শহরের পাশ দিয়েই তৈরি হলো হাইওয়ে। আর দেখতে দেখতে ১ হাজার মানুষের বসতি গড়ে উঠল।

তবে সোনার ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেল খুব তাড়াতাড়ি। বিশ শতকের প্রথম দিকেই এই শহর জৌলুস হারাল। বাসিন্দারা অনেকেই পাততাড়ি গোটালেন। যাঁরা থেকে গেলেন তাঁরা কেউ শুরু করলেন চাষাবাদ, কেউ আবার পশুখামার তৈরি করলেন। কিন্তু সেসবও বেশিদিন চলল না। জার্মানির এক দম্পতি প্রায় ১০০ বছর এই শহর আঁকড়ে ছিলেন। কিন্তু তাঁরাও মারা গেলেন একদিন। অতএব সোনার খনির ইতিহাস বুকে নিয়ে পড়ে রইল ওয়াকোন্ডা। আর মাঝে মাঝে দীর্ঘপথ ড্রাইভিং-এর মধ্যে একটু জিরিয়ে নিতে আসেন কেউ কেউ।

এভাবেই চলছিল। তারপর ২০০৭ সালে ডাফনি ফ্লেচার নামে এক তরুণী শহরের ৪ একর জায়গা কিনে নেন। ডাফনি এবং তাঁর মা জুডি ফ্লেচার থাকতে শুরু করেন এই নির্জন শহরে। নতুন করে চালু করলেন ক্যাফেটেরিয়া। সেখানে একটু কফির অবকাশের জন্য মানুষ ভিড় করতেও থাকল। কিন্তু একা হাতে সবটা সামলে উঠতে পারছিলেন না ডাফনি। তাই শহর বিক্রি করে ফিরে যাওয়াই মনঃস্থির করলেন।

আরও পড়ুন
৬২ বছরের বিবাহিত জীবন, শেষ বিদায়ের আগে হাতে হাত প্রবীণ দম্পতির

তিনবছর থাকার পর ২০১০ সালে ই-কমার্স সাইটে বিজ্ঞাপন দিলেন ডাফনি ফ্লেচার। আর সেই বিজ্ঞাপন দেখেই আবেদন করেন লাভ দম্পতি। ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ডলার দিয়ে কিনে ফেললেন ওয়াকোন্ডা শহর। আর সেখানেই শুরু হল তাঁদের একান্ত সংসার। তবে বেশিদিন এখানে থাকতে পারলেন না তাঁরা। কর্মসূত্রে চলে যেতে হল নর্থ ডাকোটা অঞ্চলে। ২০১৫ থেকে তাই আবারও জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে আছে ওয়াকোন্ডা। তবে ছুটি পেলে মাঝে মাঝেই চলে আসেন ম্যাডি এবং নিয়েল লাভ। নির্জন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে মেতে ওঠে তাঁদের সুখী ঘরকন্না। এমন একটা দাম্পত্য জীবনের কল্পনা তো অনেকেই করেন। কিন্তু সকলের কি ইচ্ছেপূরণ হয়?

আরও পড়ুন
গাড়িবারান্দায় সঙ্গীতানুষ্ঠান, প্রতিবেশীদের জন্য বিনোদনের আয়োজন শিল্পী দম্পতির

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ভালোবাসার সঙ্গে ছিল বন্ধুত্বও, পরস্পরের ‘সঙ্গী’ হয়ে উঠেছিলেন যেসব বাঙালি দম্পতি