তারুণ্যকে সম্বল করেই ফিরল নব্বইয়ের সাড়া জাগানো পত্রিকা ‘বিজল্প’

১৯৯৪ সাল। কলকাতার ইডেন হাসপাতাল। বিনয় মজুমদারকে দেখতে গেছেন গুটিকয় তরুণ। চোখে একরাশ স্বপ্ন। মাথায় কবিতার ভূত। নব্বইয়ের দশকের কবিতা সংকলন প্রকাশের জন্য নিরন্তর লড়াই করে চলেছেন তাঁরা। সোৎসাহে বিনয় লিখলেন, “দূর থেকে দেখি আমি, প্রসূন আমার কাছে কবিতা চেয়েছে…” সেই কবিতাই জায়গা করে নিল নয়ের দশকের কবিতা সংকলনের প্রচ্ছদে।

কথা হচ্ছে নব্বইয়ের সাড়া জাগানো পত্রিকা ‘বিজল্প’-কে নিয়ে। সে-সময়ের লিটল ম্যাগাজিনের দুনিয়ায় রাজত্ব করেছে এই পত্রিকা। প্রসূন ভৌমিক, সাম্যব্রত জোয়ারদার, নুরুল মোর্তাজা, তাপসকুমার লায়েকরা দেখিয়েছিলেন বাংলা ভাষার স্পর্ধা। প্রান্তিক অখ্যাতনামা তরুণ কবিদের কবিতাকে জায়গা করে দিয়েছে হলুদ নিউজপ্রিন্ট কাগজে। কলকাতার সমস্ত সাহিত্যপ্রেমীদের কাছেই ‘বিজল্প’ এক রঙিন স্মৃতি। তবে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল এই পত্রিকা। ধীরে ধীরে জায়গা নিয়েছিল স্মৃতির দেরাজে। 

এবার প্রায় দু-দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে প্রত্যাবর্তন ‘বিজল্প’-এর (Bijalpa)। গত ১৫ মে কলকাতার প্রেসক্লাবে প্রসূন ভৌমিকের সম্পাদনায় ‘আবার বিজল্প’ পরিচয়ে প্রকাশ পেল এই কবিতাপত্র। তরুণ কবিদের কবিতাপাঠের মধ্যে দিয়েই সূচনা হল নবযাত্রার। উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর। হ্যাঁ, নব-পর্যায়েও পা দিলেও বদলায়নি এই পত্রিকার চরিত্র। আজও তারুণ্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছে ‘বিজল্প’।

আরও পড়ুন
১৯ মে-র বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন নিয়ে স্বতন্ত্র পত্রিকা, প্রকাশ কলকাতা থেকেই

“নব্বইয়ের দশকে আমরা নতুন কবি ছিলাম, আমাদের বন্ধুদের, তাদের অপরিচিতদের কবিতা নিয়ে এই পত্রিকা করতাম। এখন নতুন যাঁরা লিখছেন ২০০০ সালের পর থেকে, তাঁদের কবিতা নিয়ে আমরা এই সংখ্যা”, জানালেন প্রসূন। তাঁর কথায়, “আমরা নতুন কবিদের খুঁজেছি সেই সময়ে, এখনও আমরা নতুন কবিদেরই খুঁজছি।” জানা গেল, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা তরুণ কবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই তাঁদের লেখা সংগ্রহ করেছে ‘আবার বিজল্প’-এর সম্পাদকমণ্ডলী। ‘আবার বিজল্প’-এর সংখ্যায় নতুন করে আত্মপ্রকাশ করেছেন দুই কবি— অর্ক দেব ও তুষার বিশ্বাস। “অন্যান্য জায়গায় অনেক লেখালিখি করলেও, তাঁদের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হল বিজল্পে”, বলছিলেন প্রসূন। 

আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম নিরপেক্ষ বর্ণনা প্রকাশিত হয়েছিল লন্ডনের পত্রিকায়

কবিতার পাশাপাশি বিজল্পে জায়গা পেয়েছে দুটি গদ্যও। চিত্রকর ও অধ্যাপক সুশোভন অধিকারীর কলমে ধরা পড়েছে কবিতা ও ছবির মেলবন্ধন। অন্যদিকে ‘পাঠকের মুহূর্ত’ ধারাবাহিক শুরু করলেন অভীক মজুমদার। বিজল্পে প্রকাশিত হল তাঁর এই কলমের মুখরা। পরবর্তীতে অন্যান্য পত্রিকাতেই দেখা যাবে এই লেখা

আরও পড়ুন
টাইম পত্রিকার ‘বর্ষসেরা ব্যক্তি’ এলন মাস্ক

৯০ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশ ‘বিজল্প’ পত্রিকার। কবিতাপত্রের পাশাপাশি ’৯৬ সালে শুরু হয়েছিল বিজল্প প্রকাশনার যাত্রাপথ। নব্বইয়ের তরুণ কবিদের কবিতার বই তো বটেই, শঙ্খ ঘোষ, মহাশ্বেতা দেবী, জয় গোস্বামী, কবীর সুমনের মতো খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বদের গদ্যের বই এবং পুস্তিকাও প্রকাশিত হয়েছে ‘বিজল্প’ থেকে। সমান্তরালভাবে ‘বিজল্প মিউজিক’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবীর সুমন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গানের সিডি-ও। পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ হলেও, অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল তারা। এবার ‘আবার বিজল্প’-এর প্রত্যাবর্তন যেন নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করল ‘বিজল্প’-এর এই সামগ্রিক যাত্রাপথে…

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More